অন্যান্য

দিয়াবাড়িতে বিধ্বস্ত এফ-৭ যুদ্ধবিমান: চীনা প্রযুক্তির পুরোনো নকশা ও দুর্ঘটনার দীর্ঘ ইতিহাস

  প্রতিনিধি 21 July 2025 , 6:17:16 প্রিন্ট সংস্করণ

ঢাকা অফিস: রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিধ্বস্ত হওয়া বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ জেটটি ছিল এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট হালকা ওজনের যুদ্ধবিমান এফ-৭, যা তৈরি করে চীনের চেংডু এয়ারক্রাফট করপোরেশন (সিএসি)। চীনে এটি জে-৭ নামে পরিচিত হলেও রপ্তানির সময় এর নামকরণ হয় এফ-৭।
১৯৬০ থেকে ১৯৯০-এর দশক পর্যন্ত চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির বহরে সবচেয়ে বেশি উচ্চতায় উড়তে সক্ষম ও দ্রুতগামী জেট ছিল জে-৭। আধুনিক বিমান প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট এয়ারফোর্স টেকনোলজি ডটকমের তথ্য অনুযায়ী, জে-৭-এর নকশার অনুপ্রেরণা নেওয়া হয়েছে সোভিয়েত ইউনিয়নের সময়কালে তৈরি যুদ্ধবিমান এমআইজি-২১ থেকে।
এভিয়েশনভিত্তিক ওয়েবসাইট এয়ারোস্পেস গ্লোবাল নিউজের তথ্য অনুযায়ী, রপ্তানির সময় চীনা কোম্পানিটি এফ-৭ যুদ্ধবিমান আমদানিকারকের চাহিদা অনুযায়ী তৈরি করে। সে সময় এর নামের সঙ্গে কিছু সংকেত ব্যবহার করা হয়। যেমন, বাংলাদেশ যদি এই সিরিজের যুদ্ধবিমান আমদানি করে তাহলে এফ-৭-এর পর ইংরেজি অক্ষর ‘বি’ যুক্ত হয়। আর গ্লাস ককপিটের নকশার ক্ষেত্রে ‘জি’ এবং উন্নত সংস্করণ বোঝাতে ইমপ্রুভড-এর ‘আই’ যুক্ত হয়। বর্তমান বিধ্বস্ত হওয়া সংস্করণটিতে সম্পূর্ণ ডিজিটাল গ্লাস ককপিট, উন্নত রাডার ব্যবস্থা ও অ্যাভিওনিক্স (ইলেকট্রনিক ব্যবস্থা) প্রযুক্তি ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দুর্ঘটনার উচ্চ হার: কেন পুরনো এফ-৭ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ?
এয়ারোস্পেস গ্লোবাল নিউজ (এজিএন) বলছে, এই ধরনের জেট সারা বিশ্বেই আকাশ প্রতিরক্ষা, বহুমুখী অভিযান ও পাইলটদের প্রশিক্ষণের জন্যও ব্যবহার হয়। তবে নতুন প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের চেয়ে এর দুর্ঘটনার হার বেশি। এর কারণ হিসেবে পুরোনো নকশার এয়ারফ্রেম, সীমিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং আধুনিক ফ্লাইট নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অভাবকে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এভিয়েশনভিত্তিক ওয়েবসাইটগুলোর তথ্য অনুযায়ী, এফ-৭ একটি কম স্বয়ংক্রিয় যুদ্ধবিমান। তাই দ্রুত গতিতে এবং কম উচ্চতায় প্রশিক্ষণের সময় পাইলটদের বিশেষ মনোযোগের প্রয়োজন হয়।
এফ-৭-এর যত দুর্ঘটনা: বারবার রক্তাক্ত আকাশ
বাংলাদেশের আকাশেও এফ-৭ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। অতীতেও বেশ কয়েকবার এই মডেলের বিমান দুর্ঘটনায় পড়েছে, কেড়ে নিয়েছে পাইলটদের মূল্যবান প্রাণ।
* ২০০৮ সালের এপ্রিল: টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের পাহাড়িপাড়া গ্রামে পাইলটসহ বিধ্বস্ত হয় একটি এফ-৭ প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান। এতে নিহত হন স্কোয়াড্রন লিডার মোর্শেদ হাসান। সে সময় সম্ভাব্য কারিগরি ত্রুটির কথা বলা হয়েছিল।
* ২০১৫ সালের জুন: এফ-৭ এমবি ৪১৬ মডেলের একটি যুদ্ধবিমান চট্টগ্রামে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে বিধ্বস্ত হয়। বিমান বাহিনীর জহুরুল হক ঘাঁটি থেকে উড্ডয়নের কয়েক মিনিটের মধ্যেই পতেঙ্গা সৈকতের প্রায় ৬ নটিক্যাল মাইল দূরে সাগরে বিধ্বস্ত হয়ে নিখোঁজ হন পাইলট তাহমিদ রুম্মান।
* ২০১৮ সালের নভেম্বর: প্রশিক্ষণের সময় টাঙ্গাইলের মধুপুরে বিধ্বস্ত হয় এফ-৭ বিজি। ঢাকা থেকে উড্ডয়নের ২৫ মিনিট পর মধুপুরের রসুলপুর এলাকায় বিধ্বস্ত হয়ে আগুন ধরে যায়। এই দুর্ঘটনায় নিহত হন পাইলট আরিফ আহমেদ।
শুধু বাংলাদেশেই নয়, এই মডেলের যুদ্ধবিমান বিশ্বের অন্যান্য দেশেও দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। ডন ও বার্তা সংস্থা আনাদোলুর প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাকিস্তানে ২০১৫ সালের নভেম্বর ও ২০২০ সালের জানুয়ারিতে এই সংস্করণের জেট বিধ্বস্ত হয়ে তিন পাইলট নিহত হন। ২০২২ সালের ২৪ মে এফ-৭ বিধ্বস্তে ইরানের ইসফাহানে দুই পাইলট নিহতের খবর দেয় ডেইলি সাবাহ।
বারবার এফ-৭ যুদ্ধবিমানের দুর্ঘটনাগুলো এর নকশা ও আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার অপ্রতুলতার দিকেই ইঙ্গিত করছে, যা এই পুরনো মডেলের যুদ্ধবিমান ব্যবহারে ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে।

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ