প্রতিনিধি 13 October 2024 , 3:33:26 প্রিন্ট সংস্করণ
খুলনার কয়রায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘পুনর্বাসন’ প্রকল্পের আওতায় বাঁধ সংস্কার ও টেকসইকরণের কাজ শুরু হয় ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। দুই বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের ৩০ ডিসেম্বর। তবে এখন পর্যন্ত প্রকল্পের মাত্র ২০ শতাংশ কাজ করা হয়েছে। কাজের শম্ভুকগতিতে হতাশা ও ক্ষোভ জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) খুলনা ও সাতক্ষীরা-২ বিভাগ। এ দুই বিভাগ থেকে দরপত্রের মাধ্যমে ২৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করার অনুমতি পায়। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের দাবি, কার্যাদেশ পেতে দেরি ও কাজ অনুযায়ী বরাদ্দ ছাড় না পাওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্পটি শেষ করতে পারছেন না তারা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগই নিজেরা কাজ না করে অন্যদের দিয়ে করাচ্ছে। এতে কাজে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। মূল ঠিকাদারের কাছ থেকে কাজ নেওয়া এসব সহঠিকাদারের অনভিজ্ঞতা ও তাদের আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে প্রকল্পের কাজে গতি নেই। সহঠিকাদাররা শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করতে না পারায় অনেক স্থানে দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ রয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পাউবো সূত্র অনুযায়ী, প্রকল্পের আওতায় কয়রা উপজেলার চারটি নদী-তীরবর্তী এলাকায় নির্মিত ১২৭ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কার ও টেকসইকরণের কাজ হবে। বর্তমানে ৩২ কিলোমিটার বাঁধের সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। চলমান কাজের মধ্যে বাঁধের উচ্চতা ও প্রশস্ততা বৃদ্ধি, ঢাল সংরক্ষণ, নদী শাসন ও চর বনায়ন উল্লেখযোগ্য। প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কিছু স্থানে মাটির কাজ করে ফেলে রাখা হয়েছে, কিছু স্থানে বালুর বস্তা ফেলার অপেক্ষায় আছে। আবার কয়েক স্থানে সিসি ব্লক বানানোর কাজ চলছে। আংটিহারা গ্রামের হারেজখালী ক্লোজার এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ২ হাজার ৮৭০ মিটার বাঁধ নির্মাণে মাটির কাজ চলছে। মেসার্স মোজাফফর এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কিনে নিয়ে ইসরাফিল হোসেন নামে এক ব্যক্তি ওই কাজটি করছেন। প্রায় ১২ কোটি টাকা বরাদ্দের এ কাজটি তিনি ৬ কোটি টাকায় চুক্তি করে নিয়েছেন। সহঠিকাদারের আর্থিক সংকট থাকায় এ মুহূর্তে সেখানে কাজ বন্ধ আছে বলে জানিয়েছেন শ্রমিকরা। এ বিষয়ে জানতে কাজের মূল ঠিকাদার মোজাফফর হোসেন মন্টু মিয়ার ব্যক্তিগত নম্বরে একাধিকবার কল করলেও সাড়া দেননি তিনি। সহঠিকাদার ইসরাফিল হোসেন কাজ কিনে নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করলেও কত টাকায় চুক্তি করেছেন তা এড়িয়ে যান। মাটিয়াভাঙ্গা থেকে আংটিহারা পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার মিটার বাঁধ নির্মাণকাজ করছে মেসার্স আমিন অ্যান্ড কোম্পানি নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি এ মুহূর্তে মাটির কাজ শেষ করে বালুর বস্তা ডাম্পিংয়ের কাজে হাত দিয়েছে। স্থানীয়দের ভাষ্য, প্রকল্পের এই অংশের কাজের অগ্রগতি তুলনামূলক ভালো। প্রতিষ্ঠানটির ঠিকাদার মিজানুর রহমান মতিন বলেন, কার্যাদেশ পাওয়ার পর থেকেই নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ ছাড় না হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে।
শাকবাড়িয়া নদী-তীরবর্তী গাতিরঘেরি এলাকায় ১ হাজার ৪০০ মিটার বাঁধ নির্মাণকাজ করছে এম এম বিল্ডার্স নামে এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, কিছু স্থানে মাটির কাজ করা হয়েছে। বাঁধের পাশে সিসি ব্লক ও জিও ব্যাগ স্তূপ করে রাখা হয়েছে। এর একটু দূরে কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী গাজীপাড়া এলাকায়ও কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। সেখানে এখন পর্যন্ত মাটির কাজ শুরু হয়নি। নদীতে বালুর বস্তা নিক্ষেপের কাজ চলতে দেখা গেছে। প্রতিষ্ঠানটির ঠিকাদার আবদুস সালাম সুজার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য গণেশ মণ্ডল বলেন, ধীরগতির কারণে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে পারবেন না ঠিকাদার। প্রকল্পের নদী ভাঙনপ্রবণ এই অংশে দ্রুত প্রকল্পের কাজ শেষ করার দাবি জানান তিনি।
কয়রা উন্নয়ন সমন্বয় সংগ্রাম কমিটির সভাপতি বিদেশ রঞ্জন বলেন, উপকূলীয় এ অঞ্চলের
মানুষের প্রধান সমস্যা নদীভাঙন। পুনর্বাসন প্রকল্প অনুমোদন হওয়ায় এলাকার মানুষ আশা করেছিল, সে সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে। কিন্তু কাজের ধীরগতি মানুষকে হতাশ করেছে।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক ও পাউবোর খুলনা অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ছবিবুর রহমান বলেন, দুই বছর আগে প্রকল্পটি অনুমোদন হলেও দাপ্তরিক জটিলতার কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। যে কারণে নির্দিষ্ট মেয়াদে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে না। এ কারণে প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।