অন্যান্য

দুমকিতে অসুস্থ মায়ের আর্তনাদ, ভরন পোষণ দেয়না সন্তানরা

  প্রতিনিধি 1 February 2025 , 4:03:57 প্রিন্ট সংস্করণ

 

 

 

সাকিব হোসেন পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি

 

 

 

একমুঠো খাবারের জন্য যাকে দেখে তার দিকেই একটি থালা এগিয়ে দেয়। কাউকে ঘরে ঢুকতে দেখলেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। জীর্ণ শীর্ণ শরীর আর অবস হয়ে যাওয়া সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দিয়ে আপ্রাণ বসে উঠবার চেষ্টা। ঘরে নেই কোন খাবার, নেই কোন ঔষুধ। প্রতিবেশীদের দয়ায় ও দেখভালে কোন রকম বেঁচে আছে মৃত্যু পথযাত্রী রাশিদা বেগম(৬০)।

 

পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলার মুরাদিয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের কলবাড়ি বাজারের উত্তর দিকে রাস্তার পাশে অরক্ষিত দরজা, জানালা বিহীন ঘরে বসবাস করেন পাঁচ সন্তানের মা প্যারালাইসিসে আক্রান্ত অসুস্থ রাশিদা বেগম।

 

সৌদি প্রবাসী স্বামী ফারুক হাওলাদার বেশ কয়েক বছর পূর্বে রাশিদা বেগমকে তালাক দিয়ে অন্য নারীকে বিয়ে করে। অপরদিকে তিন ছেলে সবাই বিয়ে করে স্ত্রী সন্তানসহ ঢাকায় থাকে। দুই মেয়ে বিবাহিত স্বামীর সাথে থাকেন। পাঁচ ছেলেমেয়েরা কেউ অসুস্থ প্যারালাইসিসে আক্রান্ত বৃদ্ধ মায়ের ভরন পোষণ ও খোঁজ খবর নেন না। তিন ছেলের প্রত্যেকেই মায়ের চিকিৎসার ভার ও ভরণপোষণ করতে পারবেনা বলে প্রতিবেশীদের জানিয়েছেন।

ফাতেমা বেগম নামের এক প্রতিবেশী জানান, দেড় বছর যাবৎ রাশিদা বেগম প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন।

 

ছেলেরা অসুস্থ মাকে খোলা ঘরে ফেলে রেখে ঢাকায় চলে গেছে। খাওন পড়ন তো দুরের কথা খোঁজ খবর পর্যন্ত নেয় না। আমরা বাড়ির আসপাশের লোকজন যে যা পারি ভাত বা খাবার দেই। অসুস্থ রাশিদা বিছানা থেকে উঠতে পারেনা। পায়খানা প্রস্রাব করে বিছানায়। আমরা যে যখন পারি পরিস্কার করে দেই।

 

অপর এক প্রতিবেশী দলিল উদ্দিন হাওলাদার বলেন, রাশিদা বেগম লোকজন দেখলেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। ইশারায় নিজের কষ্টের কথা বলতে চায় কিন্তু কথা বুঝা যায় না।এ অবস্থায় ছেলেমেয়েরা কোন খোঁজ খবর পর্যন্ত নেয় না। অসুস্থ রাশিদা বেগম অযন্ত অবহেলায় ও খাবারের অভাবে ক্রমশই অবনতির দিকে যাচ্ছে। এখন তার ছেলে মেয়েদের জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা ও সেবাসহ কাছে থাকা প্রয়োজন।

 

রাশিদা বেগমের বড় ছেলে মোঃ জুলহাস হাওলাদারের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, নিজের স্ত্রী সন্তানসহ ঢাকায় অবস্থান করায় মায়ের খোঁজ খবর ঠিকমতো নিতে পারছিনা। তাছাড়াও আমাদের বাধা সত্তে¡ও মেঝ ভাই জাকির হোসেন মায়ের নামের সম্পত্তি বিক্রি করায় মনোমালিন্যের কারণে মায়ের খোঁজ খবর নেওয়া হয় না। ছোট ভাই রাকিব‌ মায়ের কোন ভরন পোষণ ও খোঁজ খবর বন্ধ করে দিয়েছে অনেক আগেই। তার সাথে আমার সাথেও কোন যোগাযোগ নাই।

 

মেজ ছেলে মোঃ জাকির হোসেন মোবাইলে বলেন, মায়ের জমি বিক্রি করে ঘর তুলতে এবং চিকিৎসা করাতে আমি অনেক দেনা হয়েছি। এমনকি কয়েকটি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছি। এ অবস্থায় আমার ৪ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীসহ ঢাকায় থাকার খরচ ও ঋনের কিস্তি দিতে হচ্ছে। এজন্য মায়ের ভরন পোষণ করতে অপারগ। তবে বড় ভাইকে বার বার বলার তিনি মায়ের খোঁজ খবর নেয় না। আর ছোট ভাই রাকিবকে মোবাইল কল দিলে সে ফোন ধরে না এবং আমাদের সাথে কোন যোগাযোগ‌ও রাখেনা।

 

স্হানীয় ইউপি সদস্য আকলিমা আক্তার বিথি বলেন,তার ছেলেদের সাথে যোগাযোগ করে ব্যার্থ হয়েছি,তার ভরন পোষন ও ঔষদে অনেক টাকার প্রয়োজন। এলাকার লোকজনের কাছ থেকে সব সময় ম্যানেজ করা সম্ভব হয় না।

এব্যাপারে মুরাদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) হাফিজুর রহমান ফোরকান জানান, তিন ছেলের অবহেলায় অসুস্থ মায়ের ভরন পোষন ও চিকিৎসা হচ্ছে না।

 

দুমকি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শাহীন মাহমুদ বলেন, যদিও এটি মোবাইল কোর্টের আওতায় না তবে ভুক্তভোগী যদি থানায় অথবা আদালতে মামলা করেন তাহলে সুবিচার পেতে পারেন

Author

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ