প্রতিনিধি 25 July 2025 , 1:08:28 প্রিন্ট সংস্করণ
ঢাকা, ২৫ জুলাই ২০২৫:
দেশের বাজারে ইলিশের সরবরাহ কম এবং দাম চড়া থাকা সত্ত্বেও সরকার সৌদি আরবে ১১ হাজার টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চলতি মৌসুমেই এসব ইলিশ অক্টোবরের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে পৌঁছাবে। তবে, দেশে ইলিশের স্বল্পতা ও উচ্চমূল্যের এই সময়ে রপ্তানির সিদ্ধান্তে ভোক্তা ও ব্যবসায়ী মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
দেশের বাজারে ইলিশের আগুন দাম
বর্তমানে বাজারে নদীর এক কেজি থেকে এক কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২,৩০০ থেকে ২,৪০০ টাকায়, ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রামের ইলিশ ২,০০০ থেকে ২,২০০ টাকায়, এবং ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রামের ইলিশ ১,৫০০ থেকে ১,৬০০ টাকায়। এলাকা ও মাছের আকারভেদে দাম আরও বেশি হতে পারে বলে দাবি করেছেন ভোক্তারা।
ব্যবসায়ীরা জানান, চাঁদপুর ও মুন্সীগঞ্জের পদ্মা-মেঘনা নদীতে ভরা মৌসুমেও কাঙ্ক্ষিত ইলিশ মিলছে না। বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীর দূষিত পানি মুন্সীগঞ্জ জেলা হয়ে চাঁদপুরের মেঘনা নদীর মোহনা পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়াই এর প্রধান কারণ। এই কারণে আড়ত ও হাটবাজারগুলোতে ইলিশের দাম এবার রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে।
উৎপাদন বৃদ্ধি সত্ত্বেও উদ্বেগের কারণ
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ব ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশ শীর্ষে। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বিশ্বের মোট উৎপাদনের ৮৬ শতাংশ ইলিশই উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০১ সাল থেকে ইলিশের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ২ লাখ ৯৯ হাজার টন ইলিশ উৎপাদন হলেও ২০২০-২১ অর্থবছরে তা ৫ লাখ ৬৫ হাজার টনে উন্নীত হয়। এরপর ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫ লাখ ৬৬ হাজার টন এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫ লাখ ৭১ হাজার টনে পৌঁছায়। তবে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন কিছুটা কমে ৫ লাখ ২৯ হাজার টন হয়েছে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মডেল অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ইলিশ উৎপাদন ৫ লাখ ৩৮ হাজার থেকে ৫ লাখ ৪৫ হাজার টন হতে পারে। তবে, প্রতিষ্ঠানটি সতর্ক করে দিয়েছে যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মতো উৎপাদন হ্রাসের প্রবণতা অব্যাহত থাকলে প্রকৃত উৎপাদন আরও কম হতে পারে।
রপ্তানির কারণ ও মূল্যবৃদ্ধির ব্যাখ্যা
বিদেশে ইলিশ রপ্তানি প্রসঙ্গে গত সোমবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, দেশে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসীদের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে পরীক্ষামূলকভাবে প্রাথমিকভাবে এক বা দুটি দেশে (বিশেষত যেখানে অপেক্ষাকৃত বেশিসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি বসবাস করেন) ইলিশ রপ্তানির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে সৌদি আরবে ১১ হাজার টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যা আগামী অক্টোবরের মধ্যে পাঠানো হবে।
তিনি আরও জানান, দেশে ইলিশের সরবরাহ কম থাকার পাশাপাশি চাঁদাবাজি ও ডিজেলের দাম বেশি হওয়ার কারণে বর্তমানে ইলিশের দাম বেশি, যা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।