রাশেদ রাসু, নড়াইল প্রতিনিধি:
নড়াইলের লোহাগড়া ও কালিয়া উপজেলায় আধিপত্য বিস্তার, গ্রাম্য শত্রুতা ও গোষ্ঠীগত সংঘাতের জেরে বিগত ১০ মাসে ঘটে গেছে অন্তত ২৭টি হত্যাকাণ্ড। আহত হয়েছেন ৮০ জনের বেশি। সংঘাতের ফলে প্রায় ৩৫০টি বসতঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ ছাড়িয়ে গেছে প্রায় ৫০ কোটি টাকা। এসব ঘটনার পর বহু পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। ঈদুল আজহা ঘনিয়ে আসলেও এসব পরিবার এখনও জানে না কোথায় ও কিভাবে ঈদ করবে।
কালিয়া উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রামে মিলন মোল্যা ও আফতাব মোল্যা গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিরোধে ইতোমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত দুইজন। ফরিদ মোল্যার মৃত্যুর ১৮ দিনের মাথায় উদ্ধার হয় মামলার আসামি রফিকুল মোল্যার মরদেহ। পাল্টাপাল্টি হামলায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হয়েছে প্রায় ৫০টি বাড়িতে। লুট হয়েছে ফসল, গবাদিপশু ও মাছ।
বৃদ্ধা রাশেদা বেগম বলেন, “আমার বাড়ি দুইবার ভাঙচুর করেছে। রান্না করার চাল নেই, থালা-বাটি পর্যন্ত নিয়ে গেছে। টিউবওয়েল খুলে নিয়ে গেছে। ঈদ তো দূরের কথা, খেতেই পারছি না ঠিকমতো।”
একই গ্রামের জোসনা বেগম জানান, “প্রতিপক্ষ আমাদের প্রায় ৫০ বিঘা জমির ধান কেটে নিয়েছে। বাড়ি ভেঙে পুড়িয়ে দিয়েছে। এখন অন্য গ্রামে মানবেতর জীবনযাপন করছি।”
অঞ্চলজুড়ে সহিংসতার চিত্র
৩০ মার্চ, জামরিলডাঙ্গা: দুই পক্ষের সংঘর্ষে তালেব শেখ খুন, আহত ১৫ জন।
১৫ মার্চ, সিলিমপুর: আধিপত্য নিয়ে সংঘর্ষ, হাসিম মোল্যা খুন, আহত ৮।
১২ মার্চ, চরশুকতাইল: গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বে সৌদি প্রবাসী আকরাম শেখ খুন।
১৪ মে, কুমারডাঙ্গা: পূর্ব শত্রুতায় খাজা মোল্যা খুন, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয় আসামির।
৩১ মার্চ, লাহুড়িয়া: পূর্ব শত্রুতায় মুক্তিযোদ্ধা আকবার শেখ নিহত, আহত ১৫ জন।
এসব হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি আরও অন্তত ১৪টি বিচ্ছিন্ন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। শিশু, বৃদ্ধ, রাজনৈতিক কর্মী, নারী—কেউ রেহাই পায়নি। ধর্ষণ শেষে বিষ খাইয়ে হত্যা, পারিবারিক দ্বন্দ্বে স্ত্রী বা সৎ মা কর্তৃক শিশু হত্যা, এমনকি পিটিয়ে হত্যা পর্যন্ত ঘটেছে নড়াইলে।
নড়াইলের পুলিশ সুপার কাজী এহসানুল কবীর বলেন, “প্রত্যন্ত অঞ্চলে গোষ্ঠীগত ও আধিপত্য নিয়ে সহিংসতা বেশি হয়। একটা ঘটনার পর পাল্টা হামলা, ভাঙচুর বা আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। আমরা চেষ্টা করছি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে। সবাইকে সচেতন করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। পুলিশের সংখ্যা তুলনামূলক কম হলেও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এসব ঘটনার পর অন্তত তিন শতাধিক পরিবার নিজ গ্রামে ঈদ করতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। বহু পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।