নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
ভোটার তালিকা নিয়ে বিতর্ক এড়াতে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য যাচাই-বাছাই করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। গতকাল নির্বাচন কমিশনে আয়োজিত হালনাগাদ খসড়া ভোটার তালিকার তথ্য প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এই তথ্য জানান। আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, আমরা দেখেছি বিতর্কিত ভোটার তালিকা নিয়ে গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময় আলোচনা হয়েছে। আমাদের সাধারণ মানুষের মাঝেও এই ধরনের একটা পার্সেফশন আছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা যাচাই করতে যাওয়ার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো এটি। এই কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পরে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে একটা শুদ্ধ ভোটার তালিকা ছাড়া কনফিডেন্ট মনে করছে না।
তিনটি কারণে ভোটার তালিকা বিতর্কিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রথমত মৃত ভোটারদের তালিকা থেকে বাদ না পড়া, দ্বিতীয়ত দ্বৈত ভোটার তালিকাভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা এবং তৃতীয়ত বিদেশি নাগরিক প্রতারণার মাধ্যমে তালিকাভুক্ত হয়েছে কিনা এটি নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, আমরা এমন ইন্সিডেন্ট একাধিক পেয়েছি। চট্টগ্রাম এলাকায় রোহিঙ্গারা যাতে ভোটার হতে না পারে সেজন্য একটা বিশাল ব্যবস্থাপনা আছে এবং ওই এলাকাকে বিশেষ এলাকা ঘোষণা করে আলাদাভাবে ভোটার তালিকাভুক্ত করা হয়। এই কড়াকড়ি থেকে বাঁচতে ৩০ জন রোহিঙ্গা নীলফামারী সদরে গিয়ে ভোটার হয়েছেন। এগুলোর প্রমাণ আমাদের সামনে আছে। এভাবে আমাদের ভোটার তালিকা বিতর্কিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের মাঠ পর্যায় থেকে অনেক সময় তথ্য পাই, যখন আমাদের তথ্য সংগ্রহকারী বাড়ি বাড়ি তথ্য সংগ্রহ করতে যায়, সেখানে স্থানীয় কোনো ব্যক্তি আমাদের সহায়তা করেন না। সেখানে দেখা যায় নিজের ভোটার যারা আছে তাদের বয়স বাড়িয়ে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে ফেলেন। আবার দেখা যায় অন্য কারও ১৮-১৯ বছর হলেও ভোটার তালিকাভুক্ত হতে দেয় না। আমরা এবার সেইভাবে সেনসিটাইজ করছি। ইতিমধ্যে আমাদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার দুটো বিভাগ পরিদর্শন করেছে। আমরা কমিশনারও পরিদর্শনে বের হবো। ভোটার তালিকাটার বিষয় নিয়ে আমরা একটা সন্তুষ্টের জায়গায় পৌঁছাতে পারবো।
ডিসেম্বরের শেষে যদি সংসদ নির্বাচন হয় তাহলে আপনারা যাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার করছেন তারা ভোট দিতে পারবে কিনা এবং আইন সংশোধন করে তাদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি বলেন, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন যে, ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন উনি আশা করছেন। আমাদের নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। আমরা এর জন্য সবসময় প্রস্তুত। ভোটার তালিকা প্রণয়ন করাও এক ধরনের প্রস্তুতি। আমাদের এ ভোটার তালিকাকে সন্নিবেশ করতে আইনি কোনো জটিলতা নাই। তফসিল ঘোষণার আগে একটা তালিকা প্রকাশ হবে; সেই তালিকায় আমরা তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করবো। দ্বিতীয়ত এই বছরে যারা ভোটার হবে অর্থাৎ ২০২৫ সালের ২রা জানুয়ারি থেকে ২০২৬ সালের ১লা জানুয়ারি ১৮ বছর প্রাপ্ত হবেন তাদের কাতারে। একটা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করেছি যে, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোটার হওয়ার যোগ্য হয়ে গেছে ভোটের আগে, তাহলে প্রয়োজনে অর্ডিনেন্স জারি করে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যায় কিনা এই সম্ভাবনাটা আমরা যাচাই করে দেখবো। এটা এখনো পর্যন্ত নিশ্চিত নয়।
ভোটারের সর্বনিম্ন বয়স ১৭ করার বিষয়ে কমিশন কি ভাবছে-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৭ বছর বয়সে ভোটার নিয়ে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ব্যক্তিগত মতামত দিয়েছেন। আমরা শুনেছি সেটা। এটা নিয়ে আলোচনা চলছে। যদি ভবিষ্যতে এটা রাজনৈতিক কোনো মতৈক্য হয়, কোনো সিদ্ধান্ত আসে, যদি সংবিধানে পরিবর্তন আসে আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।
২০ তারিখ থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ করবেন এ কার্যক্রম কতোদিন চলবে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা যদি ভালোভাবে কাজ করতে পারি তাহলে ৩০শে জুনের মধ্যে আমরা এটা সম্পূর্ণ করতে পারবো।
ভোটার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৩৬ লাখ ৮৩ হাজার জন: এদিকে হালনাগাদ খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে মোট ভোটার ১২ কোটি ৩৬ লাখ ৮৩ হাজার ৫১২ জন। এবার ভোটার বেড়েছে ১৮ লাখ ৩৩ হাজার ৩৫২ জন। শতকরা হিসাবে যা প্রায় এক দশমিক পাঁচ ভাগ। এসব তথ্য জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, দেশে বর্তমানে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৩৩ লাখ ৩০ হাজার ১০৩ জন এবং নারী ভোটার ৬ কোটি ৩ লাখ ৫২ হাজার ৪১৫ জন। এ ছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ৯৯৪ জন। তিনি আরও বলেন, এবারই প্রথম দেশের বাইরে এশিয়ার পাঁচটি দেশ এবং ইউরোপের দু’টি দেশ মোট সাতটি দেশে প্রবাসী ভোটার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এসব দেশে ১৩ হাজার ১৫১ জনের নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। ইতিমধ্যে ৩৭ হাজার ৮৫০ জন আবেদন করেছেন।