হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলা গতকাল এক ভয়াবহ সংঘর্ষের সাক্ষী হলো, যেখানে ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে চার গ্রামের হাজার হাজার মানুষ রক্তক্ষয়ী সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। এই মর্মান্তিক ঘটনায় দু'জন নিহত হয়েছেন এবং উভয় পক্ষের শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। এছাড়া, অন্তত ৫০টি দোকান, একাধিক যানবাহন এবং একটি বেসরকারি হাসপাতাল ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়েছে, যা শহরজুড়ে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
গতকাল সোমবার (৭ জুলাই) বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত নবীগঞ্জের আনমনু, পূর্ব তিমিরপুর, পশ্চিম তিমিরপুর এবং চরগাঁও গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে এই সংঘর্ষ চলে। নিহতরা হলেন তিমিরপুর গ্রামের বাসিন্দা পেশায় অ্যাম্বুলেন্স চালক ফারুক মিয়া এবং আনমনু গ্রামের আব্দুল আওয়ালের ছেলে লিমস মিয়া (২৫)।
সংঘর্ষের সূত্রপাত ও প্রশাসনের তৎপরতা
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি আনমনু গ্রামের আশাহিদ আলী আশা এবং তিমিরপুরের খসরু মিয়া তালুকদারের মধ্যে চলমান বিরোধের জেরে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছিল। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, গতকাল বিকেলে নবীগঞ্জ শহরের গাজীরটেক পয়েন্টে দু'পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে বিকেল ৪টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমীন নবীগঞ্জ শহরে ১৪৪ ধারা জারি করেন। তবে উত্তেজিত জনতা প্রশাসনের নির্দেশ উপেক্ষা করে নবীগঞ্জ শহরের গাজীর টেক, মৎস্যজীবী পাড়া, চরগাঁও এবং পশ্চিম বাজারে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় লিপ্ত হয়।
ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের আর্তনাদ
সংঘর্ষের সময় পুরো বাজার এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। দুই পক্ষ একে অপরকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ও দেশীয় অস্ত্র নিক্ষেপ করতে থাকে। এই সুযোগে একটি দুষ্কৃতকারী চক্র পরিকল্পিতভাবে হামলা ও লুটপাট চালায়। আগুনে পুড়ে যায় বেশ কয়েকটি দোকান এবং যানবাহন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এই হামলায় কয়েক কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাদের অভিযোগ, এটি কেবল সাধারণ সংঘর্ষ ছিল না, বরং এর পেছনে লুটপাটের উদ্দেশ্যও ছিল।
সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত, তবে থমথমে
সন্ধ্যা ৭টার দিকে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিলে সেনাবাহিনী এবং অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তাদের হস্তক্ষেপে অবশেষে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এই সংকটময় মুহূর্তে সাবেক এমপি শেখ সুজাত মিয়া, বিএনপি নেতা সরফরাজ আহমদ চৌধুরী, জামায়াত-সমর্থিত শাহজাহান আলী এবং গণঅধিকার পরিষদের আবুল হোসেন জীবন স্থানীয়ভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার উদ্যোগ নেন।
নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং পুরো এলাকায় কড়া নজরদারি চলছে। তবে এলাকায় এখনো থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুহুল আমীন নিশ্চিত করেছেন যে, ১৪৪ ধারা জারির পরও দুই হাজারের বেশি মানুষ বাজারে উত্তেজিত অবস্থায় ছিল এবং সন্ধ্যা ৭টায় সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
এই ঘটনার পর নবীগঞ্জজুড়ে এক চাপা আতঙ্ক ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।