প্রতিনিধি 7 August 2025 , 9:03:36 প্রিন্ট সংস্করণ
স্টাফ রিপোর্টারঃ
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে মেলায় ডেকে নিয়ে কোমল পানীয়ের সঙ্গে চেতনানাশক খাইয়ে দশম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগে ইউপি সদস্য, ঠিকাদারসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত রাব্বী মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ভুক্তভোগী কিশোরীর বাড়ি নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়নের সাপখাওয়া এলাকায়।
ঘটনার পাঁচদিন পর গত রোববার (৩ আগস্ট) ভুক্তভোগীর বাবা বাদী হয়ে নাগেশ্বরী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন।
মামলার আসামিরা হলেন—উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নের গাগলা খামারটারী এলাকার রাব্বী মিয়া, পৌরসভার বাঁশেরতল এলাকার জুলহাস মিয়া, রায়গঞ্জ ইউনিয়নের পূর্ব সাপখাওয়া এলাকার ঠিকাদার শফিয়ার রহমান ওরফে শফি এবং একই ইউনিয়নের গাটিরখামার এলাকার ইউপি সদস্য মোতালেব মিয়া।
মামলার এজাহারে বলা হয়, রাব্বী মিয়া কিশোরীর জেঠাতো বোনের স্বামী। সে কিশোরীকে দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। ২৩ জুলাই নাগেশ্বরী ডিএম একাডেমি মাঠে অনুষ্ঠিত হস্তশিল্প মেলায় ঘুরতে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে কোমল পানীয়ের সঙ্গে চেতনানাশক মিশিয়ে কিশোরীকে অচেতন করে নিজ বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণ করে।
পরে রাত ৮টার দিকে আবারও চেতনানাশক খাইয়ে তাকে ঢাকাগামী একটি দূরপাল্লার বাসে তুলে দেয়। ঢাকায় পৌঁছালে বাসের সুপারভাইজার কিশোরীকে অচেতন অবস্থায় পেয়ে তার বোনের বাসায় নিয়ে যান এবং রাতে ফের বাসে তুলে নাগেশ্বরীতে পাঠিয়ে দেন।
পরদিন সকালে নাগেশ্বরী বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছালে রাব্বী, জুলহাস ও মোতালেব মেম্বার কিশোরীকে জোর করে পৌরসভার হাসেমবাজার এলাকার ফারুক হোসেনের একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যায় এবং সেখানে আবারও ধর্ষণ করা হয়।
সন্ধ্যায় রাব্বী কিশোরীকে জুলহাসের হাতে তুলে দিলে, জুলহাস তাকে অটোরিকশায় করে রায়গঞ্জ বোর্ডের বাজারের পাশে শফির এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানেও রাতভর পালাক্রমে ধর্ষণের শিকার হয় কিশোরী। এ সময় অভিযুক্তরা কিশোরীকে হুমকি দেয়—এ ঘটনা কাউকে জানালে তাকে হত্যা করা হবে।
ভোরে অচেতন অবস্থায় তাকে রাস্তায় ফেলে যায় ধর্ষকরা। পরে কিশোরী নানার বাড়িতে আশ্রয় নেয়। ৮ দিন পর জ্ঞান ফেরে তার। পরে পরিবারের সদস্যরা তাকে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নেন। অবস্থার অবনতি হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।
নাগেশ্বরী থানার ওসি রেজাউল করিম জানান, প্রধান আসামি রাব্বী মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত করে মামলা নেওয়া হয়েছে। অন্য আসামিরা পলাতক রয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর রহিম বলেন, গ্রেপ্তার আসামিকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলছে, দ্রুত বাকিদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
ভুক্তভোগীর বাবা বলেন, “আমার মেয়ে এতদিন অচেতন ছিল, কিছুই বলতে পারেনি। জ্ঞান ফেরার পর সব জানতে পেরে থানায় গিয়ে মামলা করেছি। আমি সকল আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”