মোঃ ইসমাইল হোসেন নাচোল প্রতিনিধি (চাঁপাইনবাবগঞ্জ)
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলা ঐতিহাসিকভাবে তেভাগা আন্দোলনের জন্য পরিচিত। ইলামিত্রের নেতৃত্বে এখানকার কৃষকরা তাদের ন্যায্য দাবির জন্য সংগ্রাম করেছেন। স্বাধীনচেতা এই অঞ্চলের মানুষ অতীতের মতো আজও নিজেদের অধিকার আদায়ে আপোষহীন।
নাচোলের প্রতিটি জনপদে রয়েছে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও সমৃদ্ধ আঞ্চলিক সংস্কৃতি, যা একে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের অন্য যে কোনো এলাকার তুলনায় আলাদা করেছে। প্রায় ৪৬% স্বাক্ষরতার হার নিয়ে এ অঞ্চলে নাচোল সরকারি কলেজ, মহিলা কলেজ, এশিয়ান স্কুল এন্ড কলেজসহ ছয়টি কলেজ, তিনটি কারিগরি কলেজ, ৩৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৭৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১৮টি মাদ্রাসা রয়েছে।
ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর মধ্যে উজিরপুর দরগা, নাচোল বাজার মন্দির, দেওপাড়া মঠ, কলিহার জমিদার বাড়ি, মল্লিকপুর জমিদার বাড়ি এবং ফতেহপুর আলী শাহপুর জামে মসজিদ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
নামকরণের ইতিহাস নিয়ে জনশ্রুতি আছে, ১৭৯৩ সালে লর্ড কর্ণওয়ালিসের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সময় ‘নাচোল’ নামের সূচনা হয়। আবার বলা হয়, ‘নাচে চল’ শব্দ থেকে স্থানীয় উচ্চারণে ‘নাচোল’ হয়েছে, যা অতীতে সাঁওতাল নারীদের নাচের আসরের সাথে সম্পর্কিত।
১৯১৮ সালে নাচোল থানা গঠন হয় এবং ১৯৮৪ সালে এটি উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। বর্তমানে এখানে ১টি পৌরসভা, ৪টি ইউনিয়ন, ১৬৭টি মৌজা ও ১৯১টি গ্রাম রয়েছে, মোট আয়তন ২৮৩ বর্গকিলোমিটার। উত্তরে গোমস্তাপুর, দক্ষিণে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, পূর্বে রাজশাহীর তানোর ও নওগাঁর নিয়ামতপুর, আর পশ্চিমে ভারত সীমান্ত।
মহানন্দা নদী বিধৌত এই অঞ্চলের প্রধান পেশা কৃষি। ধান, গম, ডাল ও শাকসবজি উৎপাদনে এখানকার কৃষকরা খ্যাতিমান। সময়ের সাথে সাথে নাচোলের অর্থনীতি, চিকিৎসা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। সব মিলিয়ে নাচোল একটি আদর্শ ও ঐতিহ্যবাহী জনপদের উজ্জ্বল উদাহরণ।