নিউইয়র্ক, ২৯ জুলাই ২০২৫:

নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের পার্ক অ্যাভিনিউতে এক বন্দুকধারীর বর্বরোচিত হামলায় অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন এক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পুলিশ কর্মকর্তা। এই ভয়াবহ ঘটনার পর বন্দুকধারী নিজেও আত্মঘাতী গুলিতে প্রাণ দিয়েছেন বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে। নিহত পুলিশ কর্মকর্তার নাম দিদারুল ইসলাম। তিনি স্ত্রী ও দুই ছেলে রেখে গেছেন।
কী ঘটেছিল সেদিন?
সোমবার (২৮ জুলাই) সন্ধ্যায় পার্ক অ্যাভিনিউয়ের একটি ভবনে এই ভয়াবহ হামলা চালান ২৭ বছর বয়সী শেন ডেভন তামুরা। নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, তামুরা ছিলেন লাস ভেগাসের বাসিন্দা।
সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটের দিকে ভবনের লবিতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকধারীর তীব্র গোলাগুলি হয়। এরপর হামলাকারী ৩৩ তলায় উঠে যান। পরে ভবনের সিঁড়িতে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তার হাতে একটি রাইফেল ছিল এবং প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
পুলিশের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ ও মেয়র অ্যাডামসের বার্তা
নিউইয়র্ক পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশ জানান, “হামলাকারী একা ছিলেন, যিনি ইতোমধ্যে নিরস্ত্র হয়েছেন।” পুলিশ নিশ্চিত করেছে যে, বন্দুকধারী একাই হামলা চালিয়েছেন এবং তার মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যা ৭টার কিছু আগে পুলিশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবাইকে পার্ক অ্যাভিনিউ এবং ইস্ট ৫১তম স্ট্রিট এলাকা এড়িয়ে চলার আহ্বান জানায়। মেয়র এরিক অ্যাডামস নিউইয়র্কবাসীকে সতর্ক করে বলেন, “ম্যানহাটনের মিডটাউনে একটি সক্রিয় গুলির ঘটনা চলছে। আশপাশে থাকলে সতর্ক থাকুন এবং পার্ক অ্যাভিনিউয়ের কাছাকাছি থাকলে বাইরে বের হবেন না।”
এফবিআইয়ের নিউইয়র্ক ফিল্ড অফিস জানায়, তারা ঘটনাস্থলে সহায়তা দিচ্ছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি জানান, সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব নিউইয়র্ক একটি কমান্ড পোস্ট স্থাপন করেছে এবং এফবিআই ঘটনাস্থলে রয়েছে।
হাই-প্রোফাইল ভবন, কর্মীদের সতর্কতা
৩৪৫ পার্ক অ্যাভিনিউয়ের ওই ভবনে ন্যাশনাল ফুটবল লিগ (এনএফএল), ইনভেস্টমেন্ট ফার্ম ব্ল্যাকস্টোন এবং জেপি মরগান চেজের মতো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের করপোরেট অফিস রয়েছে। হামলার সময় এনএফএল কর্মীদের জরুরি সতর্কবার্তা পাঠানো হয়: “বহির্গমন করবেন না। অবস্থান সুরক্ষিত রাখুন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আপনার তলা ক্লিয়ার না করা পর্যন্ত আড়ালে থাকুন। ফোন সাইলেন্ট করে দিন।”
হামলার সময় ভবন থেকে মানুষকে হাত তুলে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। আশপাশে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও জরুরি বাহিনী মোতায়েন ছিল।
ক্রমবর্ধমান বন্দুক সহিংসতা: ২৫৪তম গণগুলির ঘটনা!
হাউস মাইনরিটি লিডার হাকিম জেফরিজ হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, “এনওয়াইপিডির জন্য প্রার্থনা করছি। এই কঠিন সময়ে ঈশ্বর যেন আমাদের শহরের উপর দৃষ্টি রাখেন।”
বন্দুক সহিংসতা পর্যবেক্ষণকারী অলাভজনক সংস্থা ‘গান ভায়োলেন্স আর্কাইভ’-এর তথ্য অনুযায়ী, এটি ছিল চলতি বছরে যুক্তরাষ্ট্রে ২৫৪তম গণগুলির ঘটনা। সংস্থাটি জানায়, যেখানে বন্দুক হামলায় অন্তত চারজন (হামলাকারী ব্যতীত) নিহত বা আহত হন, সেটিকে গণগুলি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই ঘটনা আবারও যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল।