প্রতিনিধি 7 June 2025 , 6:42:15 প্রিন্ট সংস্করণ
সাজ্জাদ হোসেন সাগর:
সারা দেশে পশু কুরবানির মধ্য দিয়ে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল আজহা। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান এই ধর্মীয় উৎসব ঘিরে উৎসাহ-উদ্দীপনার কমতি নেই কোথাও। তবে ধর্মীয় চিন্তাশীল মহলের প্রশ্ন—এই উৎসবে পশু জবাইয়ের পাশাপাশি নিজের ভেতরের পশুটাকে কতটুকু কুরবানি করতে পেরেছি আমরা?
ইসলামী বিধান অনুযায়ী, ঈদুল আজহার প্রকৃত শিক্ষা ত্যাগ ও আত্মসমর্পণ। মহান আল্লাহতায়ালার আদেশে হযরত ইব্রাহিম (আ.) তাঁর প্রিয় পুত্র ইসমাঈল (আ.)-কে কুরবানি করতে উদ্যত হয়েছিলেন। সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রতি বছর কুরবানি করা হয় গরু, ছাগল, উট প্রভৃতি পশু। কিন্তু আল্লাহ কোরআনে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন—
> “আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না তাদের মাংস বা রক্ত; বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া।”
(সূরা হজ, আয়াত ৩৭)
বিশ্লেষকরা বলছেন, সমাজে অহংকার, লোভ, হিংসা, প্রতিহিংসা, দুর্নীতি, অন্যায় সহ্য করার মানসিকতা, অসহিষ্ণুতা—এসবই মানুষের ‘ভেতরের পশু’। কুরবানির প্রকৃত অর্থ হলো এই পশুত্বকে ত্যাগ করা।
কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে, আমরা কি কেবল বাহ্যিক পশু কুরবানি করছি, নাকি নিজের আত্মায় বাস করা পাশবিক প্রবৃত্তিকেও কুরবানি দিতে পারছি?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ড. আবদুল হান্নান বলেন,
> “কুরবানি মানে শুধু গরু জবাই নয়। নিজের লোভ, অহংকার, ক্ষমতালিপ্সা—এইসব অন্ধ প্রবৃত্তিকে কুরবানি করাই ঈদের মূল শিক্ষা। কিন্তু সমাজে আজ আমরা শুধু আনুষ্ঠানিকতা পালনেই সীমাবদ্ধ।”
বিশিষ্ট আলেম মুফতি কুতুব উদ্দিন জানান,
> “যে ব্যক্তি কুরবানির ঈদ উদযাপন করে কিন্তু প্রতিবেশীর ক্ষতি করে, অন্যের হক নষ্ট করে, বা নিজের পাপ থেকে ফিরে আসে না—সে প্রকৃত কুরবানির শিক্ষা গ্রহণ করেনি।”
এছাড়া তরুণ প্রজন্মের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে নিজেদের ভেতরের পরিবর্তনের কথা প্রকাশ করছেন। কেউ কেউ লিখেছেন, “আমার সবচেয়ে বড় কুরবানি—অহংকারকে পরাজিত করা”, “এবার পশু না, নিজের রাগটাকে জবাই করলাম।”
বিশ্লেষকদের মতে, একটি দেশ বা জাতিকে এগিয়ে নিতে হলে বাহ্যিক আনুষ্ঠানিকতার বাইরে গিয়ে কুরবানির আধ্যাত্মিক শিক্ষা ধারণ করতে হবে। কুরবানি হোক ব্যক্তি শুদ্ধির পথ, হোক আত্মিক উত্তরণের যাত্রা।