নিতে আসিনি দিতে এসেছি, শিল্পপতির পরিচয়ে সম্পদ গড়ে তুলেছেন পাহাড়ের চুড়ায়। এলাকায় শিল্পপতি বংশের সন্তান হিসেবে পরিচিত। সম্পদ নিয়ে কেউ প্রশ্ন করলে তিনি এ পরিচয়ে দিতেন। জড়িয়েছেন বিভন্ন ব্যবসায়। ১১৪ পটুয়াখালী -৪ আসনের আওয়ামী লীগের দলীয় সাবেক এমপি ও প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব অধ্যক্ষ মোঃ মহিবুর রহমান ২০১৮ সালে এমপি নির্বাচিত পর থেকে এলাকায় প্রভাব খাটিয়ে দলীয় গুন্ডা বাহিনী ব্যবহার করে খাস জমি দখল, টেন্ডার বাজি, সাগরে মাছ ধরা জেলেদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করে টাকার পাহাড় গড়ে।
১০ অক্টোবর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র কেন্দ্রীয় কমিটির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশারফ হোসেন'র ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে দেয়া এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে জানা গেছে, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মহিব ও তার স্ত্রী ফাতেমা আক্তার রেখা ২০১৮ থেকে ২০২৪ সালে ৩৫ টি সাব কবলা দলিলে ৫০ একর জমি খরিদ করেছেন। এছাড়া নামে বেনামে রয়েছে অর্ধশত একর জমি। সব সময় আলোচনা ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, অবৈধ সম্পদ আয়ের সিন্ডিকেট ছিল মহিব। সিন্ডিকেট সদস্যদের মধ্যমে করতেন নিয়োগ বানিজ্য, কোথাও নিজেই ডিল করতেন ও শিক্ষক নিয়োগে অন্তত ২০০ কোটি টাকা কামিয়েছেন। কলাপাড়া- রাঙ্গাবালি শীর্ষ এসব নিয়োগ বানিজ্য করতেন। তাদের কাছ থেকে নিয়েছেন মোটা অংকের উপঢৌকন। ২০১৮ সালে এমপি নির্বাচিত হয়ে দলীয় কর্মসূচি পালনের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের করছেন জিম্মি। নিয়েছেন মোটা অংকের চাঁদা। দলীয় পদ বানিজ্য করে কামিয়েছেন অঢেল টাকা।
সূত্রে জানা গেছে, মহিব ২০১৮ সালে এমপি নির্বাচিত হয়ে টাকা আদায়ের জন্য দলীয় নেতাদের ব্যবহার করতেন। প্রথম দিকে কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস,এম,রাকিবুল আহসানকে ব্যবহার করতেন। তার সাথে মতের অমিল দেখা দিলে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতালেব তালুকদার, সাবেক ছাত্রলীগের সভাপতিসহ নেতাকর্মী, স্কুল, শিক্ষককে কাজে লাগিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার সহচর জানান, এতিমখানা এমপি মহিব এর বাস ভবনে ব্যক্তিগত রাজনৈতিক কার্যালয়ে রাত ১১ টার পর নেতা কর্মীদের সেখান থেকে সরিয়ে দিয়ে তার ব্যক্তিগত ব্যবসায়ী কাজ কর্মকরতেন। এরমধ্যে এমপির বেশী বিশ্বাসী যাতায়ত ছিল কলেজ শিক্ষক মোঃ শাহ আলম, ও স্কুল শিক্ষক মোঃ হারুনঅর রশিদ। তার বড় ব্যবসা ছিল, পায়রা সমুদ্র বন্দর ঠিকাদারদের কাছ থেকে প্রতি মাসে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিতেন। মহিব এর নির্বাচনী এলাকায় বছরে টিআর ও কাবিখা প্রকল্পে বরাদ্দ আসত তিন বার। এ বাবদ বরাদ্দ ছিল ৬ কোটি টাকা। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন সামজিক সংগঠনকে কিছু টাকা বরাদ্দ দিয়ে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে মাষ্টার রুল জমা দেখিয়ে শীর্ষভাগ নিজে আত্মসাৎ করেছেন। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির দুই উপজেলায় আসত প্রতি বছর ৪ কোটি টাকা। এ বরাদ্দের ও ভূয়া প্রকল্প দেখিয়ে ৮০ ভাগ টাকা হাতিয়ে নিতেন মহিব ও তার স্ত্রী ফাতেমা আক্তার রেখা। ৬ বছরে তিন খাত থেকে প্রায় এক কোটি টাকা আত্মসাত করছেন। কলাপাড়া- রাঙ্গাবালি অর্ধশতাধিক হাট বাজার ঘাট নিয়ন্ত্রণ করতেন মহিব ও তার সহযোগী নেতাকর্মীরা। অন্যদের সরিয়ে দিয়ে এগুলো স্বল্প মূল্যে নিলাম নিয়ে নিজে সব লোকজন বসিয়ে তার শাসনামলে শত কোটি টাকা কামিয়েছেন। এছাড়া বাবলা তলা বাজার সংলগ্ন খাস জমি দখল করে অর্ধশত দোকান ঘর ও মার্কেট করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করেছেন। কলাপাড়া এতিমখানা সড়কে ছয় তলা ভবন নির্মাণ করেন।
এ ব্যাপারে মরহুম একেএম খালেকুজ্জামান জামাল খলিফার পুত্র মোঃ প্রিন্স খলিফা অভিযোগ করে বলেন, ভুমিহীন কৃষক আদম আলীর ১৯৬৭-৬৮ সালে ধুলাসার মৌজার ৩৬৬ নম্বর খতিয়ানে ৩.০০ একর জমি বন্দোবস্ত প্রাপ্ত হয়। পরে আদম আলী মৃত্যু বরন করেন। ওয়ারিশ স্ত্রী মোসাঃ জায়েদা খাতুন, কন্যা সেফালী বেগমপুত্র মোঃ খলিল নগদ টাকার প্রয়োজনে ২০১০ সালে ২.৩৭ একর জমি একেএম খালেকুজ্জামান জামাল খলিফার নিকট বিক্রি করেন। একেএম খালেকুজ্জামান জামাল খলিফা ক্রয়কৃত জমিতে "খলিফা মার্কেট" নামে ১৫ টি দোকান ঘর নির্মান করে বাবলাতলা ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দেয়। ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী -৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের নৌকা মার্কা প্রতিক নিয়ে জাতীয় সাংসদ সদস্য হিসেবে আলহাজ্ব মোঃ মহিবুর রহমান মহিব নির্বাচিত হন। তারপর বিএনপি নেতা একেএম খালেকুজ্জামান জামাল খলিফার নির্মানাধীন খলিফা মার্কেটের উপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে। জাতীয় সংসদ সদস্য মহিব কলাপাড়া উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রভাব খাটিয়ে ভুয়া ৩৬৬ নং খতিয়ান বাতিল দেখিয়ে নতুন ৩৫৭ নং খতিয়ান সৃষ্টি করে বিএনপি নেতার মার্কেট নিজ দখলে নিয়ে জামান খলিফার নির্মিত মার্কেটের ওপর ১৩ টি রুম তৈরি করে নিজের পছন্দনীয় ব্যবসায়ীদের নিকট ভাড়া দেয়। এতে একেএম খালেকুজ্জামান জামান খলিফা আদালতে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় উচ্চাদালত পর্যন্ত গড়ায়। এবং নিম্ন আদালত থেকে শুরু করে উচ্চ আদালতে তিনি রায় পান। কিন্তু মহিব ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে পুনঃরায় জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে দুর্যোগ ও ত্রান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন। এতে জামান খলিফা জমির দখল নিতে পারেনি। গত ৫ আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর মরহুম একেএম খালেকুজ্জামান জামাল খলিফার পুত্র মোঃ প্রিন্স খলিফা পৈত্রিক সুত্রে মালিক থেকে মার্কেট তার দখলে নেয়।
গত ৫ আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব মোঃ মহিবুর রহমান মহিব ও তার স্ত্রী ফাতেমা আক্তার রেখা আত্মাগোপনে থাকায় তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তাই তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।