ঢাকা:
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের এক বছর পর আওয়ামী লীগের বহু নেতা এবং কর্মী ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতা পশ্চিমবঙ্গের নিউ টাউনে নিজেদের আস্তানা গড়ে তুলেছেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম 'দ্য প্রিন্ট'-এর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন সব চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব নেতারা নির্বাসিত জীবন কাটালেও নিষ্ক্রিয় নন, বরং তারা নিয়মিত স্বাস্থ্যচর্চা, অনলাইন মিটিং এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
পলাতক নেতাদের রোজনামচা: টাক মাথায় চুল লাগানো থেকে জিম
দ্য প্রিন্ট-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, কলকাতায় আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও নেতারা এখন এক ভিন্ন জীবনযাপন করছেন। তাদের অনেকেই স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে উঠেছেন এবং নিয়মিত জিমে সময় কাটাচ্ছেন। একজন সাবেক এমপি তো এই অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে টাক মাথায় চুল প্রতিস্থাপনও করিয়েছেন। তিনি দ্য প্রিন্টকে জানিয়েছেন, এটি তাকে এই কঠিন সময়ে ভালো লাগার মতো একটি অনুভূতি দিচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নিউ টাউনের প্রশস্ত রাস্তা, সাশ্রয়ী অ্যাপার্টমেন্ট, উন্নত শপিং মল এবং ফিটনেস সেন্টারের কারণে এটি তাদের জন্য একটি আদর্শ আবাসস্থল হয়ে উঠেছে। তাদের দৈনন্দিন রুটিনে খুব ভোরে ওঠা, হাঁটাচলা এবং অনলাইনে মিটিং করা অন্তর্ভুক্ত। রান্না করার জন্য রাঁধুনি না পেলে তারা নিজেরাই রান্না করছেন, যা তাদের জন্য একটি নতুন অভিজ্ঞতা।
অবিরাম লড়াই: ঘুম নেই, লক্ষ্য একটাই
সাবেক তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত দ্য প্রিন্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানান, তার এখন ঘুমানোর সময় নেই। তিনি বলেন, "আমি মাঝে মাঝে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যাই। প্রতিটা দিন আমার কাজ আর কাজ, শুধু কাজের মধ্যেই কেটে যাচ্ছে।" তার একটাই লক্ষ্য - বাংলাদেশকে আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা।
অন্যদিকে, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও নিউ টাউনে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া করে আছেন বলে জানা গেছে। তিনি নিয়মিত দিল্লিতে গিয়ে দলীয় বৈঠক এবং ভারতের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এক সাবেক এমপি জানিয়েছেন, কামাল নেতাকর্মীদের মনোবল ধরে রাখার দায়িত্ব পালন করছেন এবং তাদের বার্তা দিচ্ছেন, "আমরা এখানে আরাম করতে বা অনির্দিষ্টকালের জন্য থাকতে আসিনি। আমরা এখানে এসেছি বেঁচে থাকতে এবং ভবিষ্যতের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে।"
গোপন পার্টি অফিস এবং নির্বাসিত কূটনীতিক
কলকাতায় আওয়ামী লীগের একটি 'গোপন পার্টি অফিস' থাকার খবর বাংলাদেশের গণমাধ্যমে এলেও, একজন সাবেক এমপি এটিকে অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ১৩০০-এর বেশি দলীয় নেতা কলকাতায় আছেন এবং সবার একসঙ্গে বসার জন্য একটি জায়গা ভাড়া নেওয়া হয়েছে। তবে এটিকে অফিস বলাটা অতিরঞ্জন হবে।
অন্যদিকে, মরক্কোতে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হারুন আল রশিদ এখন কানাডার অটোয়াতে নতুন জীবন শুরু করেছেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তাকে দেশে ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হলেও তিনি তা করেননি। এর ফলে তার এবং তার পরিবারের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। এখন তিনি লেখালেখি করে সময় কাটাচ্ছেন এবং তার প্রথম ফিকশন, একটি ডিসটোপিয়ান উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি তৈরি করছেন।
দ্য প্রিন্টের এই প্রতিবেদন বাংলাদেশের পলাতক নেতাদের বর্তমান জীবনযাত্রা এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে এক নতুন চিত্র তুলে ধরেছে।