সাজ্জাদ হোসেন সাগর :
পটুয়াখালী শহরের সদর রোডে শুক্রবার দিবাগত রাতে একের পর এক ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। প্রথমে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ফাস্টট্র্যাক এটিএম বুথে ডাকাতি, এরপর ফ্যাশন অপটিক্যাল ও শিকদার স্টোরে আলাদা আলাদা ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় নিরাপত্তাকর্মীসহ তিনটি প্রতিষ্ঠানের মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
এটিএম বুথে ডাকাতি: নিরাপত্তাকর্মীকে মারধর
রাত সাড়ে ৩টার দিকে আদালতপাড়া সংলগ্ন ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ফাস্টট্র্যাক এটিএম বুথে ঢুকে একদল ডাকাত নিরাপত্তাকর্মী মুজিবুরকে বেধড়ক মারপিট করে। পরে তাঁকে কম্বল দিয়ে পেঁচিয়ে বুথের ভেতরের একটি অন্ধকার কক্ষে ফেলে রাখা হয়। ডাকাতেরা বুথের টাকার মেশিন ভাঙচুর করে ও একটি ল্যাপটপ নিয়ে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় মুজিবুরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ফ্যাশন অপটিক্যাল ও শিকদার স্টোরে ডাকাতি
এর কিছুক্ষণ পর রাত ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে সদর রোডের ফ্যাশন অপটিক্যাল নামের দোকানের তালা ভেঙে প্রায় ২ লাখ টাকা ও বিভিন্ন মালামাল নিয়ে যায় ডাকাতেরা। দোকানের মালিক জাকির হোসেন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার আনা মালামাল নিয়ে গেছে চোরেরা। আমি পথে বসে গেলাম।’
পরে রাত সাড়ে ৪টার দিকে শিকদার স্টোরে একইভাবে তালা ভেঙে ঢুকে সিসি ক্যামেরার মনিটর, নগদ টাকা, রিচার্জ কার্ডসহ বিভিন্ন মালামাল নিয়ে যায় ডাকাতেরা। দোকানের মালিক কামরুল ইসলাম বলেন, ‘ফজরের নামাজের সময় খবর পাই দোকান ভেঙে সব নিয়ে গেছে। ফাঁড়ির পাশেই এ ঘটনা, তাহলে আর নিরাপদ কোথায়?’
পুলিশ প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
ফাস্টট্র্যাক বুথের চ্যানেল অফিসার রিংকু বলেন, ‘আমাদের নিরাপত্তাকর্মীকে মাথায় আঘাত করে বেঁধে রাখা হয়েছে। বুথের মেশিন ভাঙচুর করা হয়েছে এবং ল্যাপটপ নিয়ে গেছে।’
পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। খুব দ্রুতই জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।’
স্থানীয়দের উদ্বেগ
স্থানীয়রা এই ধরনের ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অনেকেই মনে করেন, পুলিশ ফাঁড়ির কাছেই এমন ঘটনা ঘটায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘ফাঁড়ির পাশেই ডাকাতি, তাহলে আর কোথায় নিরাপদ?’
ডাকাতির ধরন ও পদ্ধতি
ডাকাতির ধরন ও পদ্ধতি দেখে মনে হচ্ছে, এটি একটি পরিকল্পিত ও সংঘবদ্ধ চক্রের কাজ। একাধিক স্থানে একযোগভাবে ডাকাতি, নিরাপত্তাকর্মীকে নিরস্ত্র করে আঘাত করা এবং সিসি ক্যামেরার সরঞ্জাম নিয়ে যাওয়া এসবের প্রমাণ। পুলিশের তদন্তে এই চক্রের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে।
পুলিশের করণীয়
পুলিশকে দ্রুত জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি, শহরের বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। সিসি ক্যামেরার নজরদারি বৃদ্ধি, পুলিশ পেট্রোলিং বৃদ্ধি এবং জনগণকে সচেতন করা জরুরি।
ব্যবসায়ীদের পরামর্শ
ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত:
দোকানের আশপাশে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা।
নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দেওয়া।
ব্যাংকে নগদ টাকা জমা রাখা।
সন্দেহজনক ব্যক্তি দেখলে পুলিশকে জানানো।
পটুয়াখালী শহরে এক রাতে তিনটি ডাকাতির ঘটনা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। পুলিশ প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এই ধরনের ঘটনা বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই, জনগণ ও পুলিশকে একযোগে কাজ করে শহরকে নিরাপদ রাখতে হবে