পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের(পবিপ্রবি) প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই ‘বিজয়-২৪’ সড়কের বামে এবং প্রশাসনিক ভবনের সামনে চোখে পড়ে একটি ভাস্কর্য। ভাস্কর্যটি স্মরণ করিয়ে দেয় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ নয়’মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের কথা। আরও স্মরণ করিয়ে দেয় লড়াকু মুক্তিকামী বাঙালিদের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জনের ইতিহাসের কথা। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এ স্বারক ভাস্কর্য ‘জয়বাংলা’ চত্ত্বরটি জুলাই বিপ্লবের পরে ‘‘মুক্তবাংলা’’ নামকরণ করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ড. সগিরুল ইসলাম মজুমদার এবং ড. মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমরা স্বাধীনতাকে আমাদের হৃদয়ে ধারণ করে প্রতি বছর ২৬ মার্চ আমরা ‘মুক্তবাংলা’র সম্মুখে যখন উপস্থিত হই, তখন এর মহাত্ব্য ও বিশেষত্ব সম্পর্কে ধারণা পাই, জানতে পারি আমাদের পূর্ব প্রজন্মের ত্যাগ ও স্বাধীনতার স্বাদ সম্পর্কে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার(ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মোঃ ইকতিয়ার উদ্দিন বলেন, পবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা ছাড়াও অসংখ্য ভ্রমণপিপাসুকে আকৃষ্ট করে এই ভাস্কর্য। ভাস্কর্যকে ঘিরে চারপাশের ফুলের বাগান এই সৌন্দর্যকে আরও বহুগুণে বৃদ্ধি করেছে। ’মুক্ত বাংলা’র সৌন্দর্য ও বিশেষত্ব উপভোগ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষার্থী ছাড়াও প্রতিদিন দেশ-বিদেশের হাজার হাজার দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখরিত হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন পবিপ্রবি ক্যাম্পাস।
‘মুক্তবাংলা’ ভাস্কর্যটি আসলে আমাদের কি বার্তা দেয় এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, নতুন প্রজন্মের কাছে মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও বিজয়ের বার্তা দেয় ভাস্কর্যটি। আমাদের যে গৌরবান্বিত ইতিহাস রয়েছে, সে সম্পর্কে তারা ধারণা পেতে পারি। একটি দেশের ইতিহাসকে তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার অন্যতম একটি মাধ্যম হলো ভাস্কর্য। আসলে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য যে দেশপ্রেম এদেশের মানুষ ১৯৭১ সালে দেখিয়েছে, তার বাস্তব দৃশ্যই ফুটে উঠেছে “মুক্ত বাংলা” ভাস্কর্যে।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের আগে পটুয়াখালী জেলায় মুক্তিযুদ্ধের উল্লেখযোগ্য স্মারক স্থাপনা না থাকায় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও জনতা ব্যাংকের অর্থায়নে পবিপ্রবিতে ‘জয়বাংলা’ নামে ভাস্কর্যটি নির্মাণে ৮ লাখ টাকা ব্যয় হয়। মূল মুর্তিটি মরিচাবিহীন ইস্পাত দিয়ে প্রতিকৃত প্রাথমিক দুইধাপ বেস্টনী দেওয়া হয়েছে লাল সিরামিক ইট দিয়ে। মুর্তির বেদি আচ্ছাদনে কালো গ্রানাইট ব্যবহার হয়েছে। স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি প্রতীকী এক মুক্তিযোদ্ধা। যার কাঁধে ঝোলানো আছে একটি রাইফেল, মাথায় গামছা বাঁধা ও হাতে রয়েছে স্বাধীন বাংলার মানচিত্র সংবলিত লাল সবুজের পতাকা। যার নকশা প্রণয়ন করেন এবং একে অপরূপ সৌন্দর্যে রূপ দেন বাংলাদেশের খ্যাতনামা ভাস্কর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক হামিদুজ্জামান খান। এর সার্বিক সহযোগিতায় ছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এটি ২০১১ সালের ৩০ মার্চ শুভ উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের(ইউজিসি) তৎকালীন চেয়ারম্যান প্রফেসর নজরুল ইসলাম।