প্রতিনিধি 19 August 2025 , 6:54:32 প্রিন্ট সংস্করণ
স্টাফ রিপোর্টার সিলেটঃ
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শাহ আরেফিন টিলা এখন বিরান ভূমি। একসময়ের ধর্মীয় ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতীক এই টিলা আজ পাথরখেকোদের দৌরাত্ম্যে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় ২৬ জনের একটি সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন ধরে টিলা কেটে কোটি কোটি টাকার পাথর লুট করেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতের নেতাকর্মী ও স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।
ধর্মীয় আবেগের স্থানও রক্ষা পেল না
শাহ আরেফিন (রহ.)–এর আস্তানা, মসজিদ ও কবরস্থান একসময় অক্ষত থাকলেও গত এক বছরে সেগুলোও টিলা কেটে ধ্বংস করা হয়েছে। অবশিষ্ট ছিল শুধু কিছু গাছপালা ও সংরক্ষিত পাথর। কিন্তু এখন টিলার পুরো ১৩৬ একর জায়গায় দেখা যাচ্ছে পুকুরসম গর্ত আর বালুর স্তুপ। টিলার ভেতরে তৈরি করা হয়েছে একাধিক রাস্তা, যেখান থেকে প্রতিদিন ২০–৪০টি ট্রাক পাথর বেরিয়ে যেত।
২৬ সদস্যের প্রভাবশালী চক্র
অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্থানীয় এই চক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও মাজার–সংলগ্ন এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। নাম উঠে এসেছে সাবেক খাদিমের ছেলে মনির মিয়া, যুবলীগ নেতা ফয়জুর রহমান, বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেবুল আহমেদ, তাঁতী লীগের নেতা ইসমাইল আলীসহ আরও অনেকে। তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে দীর্ঘদিন ধরে পাথর উত্তোলন চলেছে।
প্রশাসনের সীমিত ভূমিকা
যৌথ বাহিনী একাধিকবার অভিযান চালালেও স্থায়ীভাবে লুটপাট বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি জানিয়েছেন, অভিযানকালে চারবার পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরও বারবার ক্ষতির কথা বললেও কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় আজ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে টিলাটি।
ইতিহাস হারানোর হাহাকার
হজরত শাহ আরেফিন (রহ.)–এর নামেই টিলাটির নামকরণ হয়েছিল। শত শত বছর ধরে এটি ছিল ভক্ত ও দর্শনার্থীদের মিলনস্থল। ১৯৯৮ সালে সরকার এখানে পাথর কোয়ারি চালু করলেও পরে গেজেট থেকে নাম বাদ দেওয়া হয়। অথচ রাজনৈতিক প্রভাব ও অসাধু চক্রের দাপটে টিলার আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।
স্থানীয়দের ভাষায়—“টিলার কোনো অস্তিত্ব আর নেই। কোটি কোটি টাকার পাথর লুট করে সব শেষ করে দিয়েছে তারা।”