ঢাকা অফিস
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থী হত্যাচেষ্টার অভিযোগে চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তার এই গ্রেপ্তারের ঘটনায় দেশজুড়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক এবং প্রশ্নের ঝড়।
গতকাল (রোববার) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হক শুনানি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। মামলার পরবর্তী জামিন শুনানির জন্য আগামী ২২ মে দিন ধার্য করেছেন আদালত।
নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার নিয়ে সরকারের বিভিন্ন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এ ঘটনাকে “বিব্রতকর” বলে মন্তব্য করেছেন। জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, “৬২৬ জনকে নিরাপদে বের করে দিয়ে এখন নুসরাত ফারিয়াকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে বোঝাতে চাচ্ছেন আপনারা খুব বিচার করছেন?”
রাষ্ট্রপক্ষ দাবি করেছে, নুসরাত ফারিয়া একজন “ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সহযোগী” এবং জুলাই আন্দোলনের সময় অর্থ সহায়তা দিয়েছিলেন। এছাড়া তিনি অনলাইন জুয়ার প্রচারণায় যুক্ত ছিলেন বলেও উল্লেখ করা হয়। তবে ফারিয়ার ঘনিষ্ঠজন এবং আইনজীবীরা বলছেন, আন্দোলনের সময় তিনি কানাডায় ছিলেন এবং সামাজিক মাধ্যমে আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছিলেন।
রোববার থাইল্যান্ড যাওয়ার পথে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেদিন রাতেই তাকে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সোমবার সকালে আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আদালতের প্রাঙ্গণে নুসরাত ফারিয়াকে ঘিরে উৎসুক জনতার ভিড় দেখা যায়। আদালতের কাঠগড়ায় তিনি কান্নারত অবস্থায় ছিলেন এবং কোনো বক্তব্য দেননি।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত বছরের ১৯ জুলাই ভাটারা থানার সামনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন শিক্ষার্থী এনামুল হক। অভিযোগ করা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৯ জনের নির্দেশে নুসরাত ফারিয়াসহ ২৭৩ জন আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালায় এবং এনামুল গুলিবিদ্ধ হন।
নুসরাত ফারিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি আন্দোলনের সময় অর্থ সহায়তা দেন এবং আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি পদপ্রার্থী ছিলেন। মামলাটির বাদী এনামুল গত ৩ মে সিএমএম আদালতে এজাহার দাখিল করেন।
ফারিয়ার আইনজীবী মোহাম্মদ ইফতেখার হাসান আদালতে বলেন, “আমার মক্কেল একজন পেশাদার অভিনেত্রী। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নন।” তিনি আরও জানান, আন্দোলনের সময় নুসরাত কানাডায় ছিলেন এবং তার পাসপোর্ট ও ভিসার প্রমাণপত্র আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, “নুসরাত ফারিয়া শুধুমাত্র একজন অভিনেত্রী নন, তিনি একজন ফ্যাসিস্ট শাসক দলের সহযোগী এবং যুবসমাজকে বিভ্রান্ত করতে জুয়া প্রচারেও যুক্ত ছিলেন।”
তিনি আরও দাবি করেন, “শেখ হাসিনাকে খুশি করতে তিনি বলেছিলেন, প্রতিটা ঘরে শেখ হাসিনা রয়েছেন।”
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “তার নামে মামলা থাকলে গ্রেপ্তার হওয়াই স্বাভাবিক। তবে তদন্ত চলছে, নির্দোষ প্রমাণ হলে ছেড়ে দেওয়া হবে।”
এদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এক বিবৃতিতে বলেছে, “এ ধরনের ঢালাওভাবে আসামি করে গ্রেপ্তার ও জামিন না দেওয়ার ঘটনা বিচারপ্রক্রিয়াকে প্রহসনে পরিণত করছে।”
নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তারের ঘটনাটি স্পষ্টভাবে দুই পক্ষের মধ্যে মতানৈক্য ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। একটি জনপ্রিয় অভিনেত্রীকে সরাসরি ছাত্র আন্দোলন দমন ও অর্থায়নের সঙ্গে যুক্ত করার অভিযোগ কতটুকু গ্রহণযোগ্য বা প্রমাণযোগ্য হবে, তা নির্ভর করছে এখন বিচারিক প্রক্রিয়ার ওপর।