প্রতিনিধি 8 September 2025 , 5:27:16 প্রিন্ট সংস্করণ
গাইবান্ধা প্রতিনিধি
গাইবান্ধার ফুলছড়িতে প্রস্তাবিত সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের স্থান নির্বাচন নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। উপজেলা সদরের জনবহুল এলাকা বাদ দিয়ে নদীর তীরবর্তী কাতলামারী গ্রামে কলেজটি স্থাপনের প্রস্তাব ওঠায় এই বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, জমি অধিগ্রহণের সুযোগ নিয়ে প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা গোপনে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে কালিরবাজার উপজেলা হেডকোয়ার্টারে প্রস্তাবিত সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপনের দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেন স্থানীয়রা।
কর্মসূচীতে বক্তারা বলেন, সরকার সারাদেশে ৩২৯টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। ফুলছড়িতেও এই প্রকল্পের আওতায় একটি কলেজ স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। তাদের অভিযোগ, স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের মতামত উপেক্ষা করে উপজেলা প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী কাতলামারী গ্রামকে বেছে নিয়েছেন। এটি উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনো সহজ নয়। স্থানীয়রা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এমন দুর্গম এলাকায় কলেজটি প্রতিষ্ঠা করা হলে সরকারের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে।
তাদের মতে, কলেজটি উপজেলা সদর বা কোনো জনবহুল এলাকায় স্থাপিত হলে সব ইউনিয়নের শিক্ষার্থীরা সহজে যাতায়াত করতে পারবে। এতে শিক্ষার্থী বাড়বে এবং পর্যাপ্ত আবাসনের কারণে দূর-দূরান্তের শিক্ষার্থীরাও উপকৃত হবে। অন্যদিকে, প্রস্তাবিত কাতলামারী গ্রামে কলেজটি স্থাপন করা হলে দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে শিক্ষার্থী সংকট দেখা দিতে পারে। একই কারণে শিক্ষক-কর্মচারীরাও সেখানে থাকতে অনাগ্রহী হতে পারেন।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন, উপজেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক এসএম ইব্রাহিম আলী জামায়াত নেতা মাওলানা আবুল খায়ের, ফুলছড়ি প্রেসক্লাবের সভাপতি আমিনুল হক, সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম জাদু, ঠিকাদার আব্দুল কাদের ভূঁইয়া আকাশ, রাশেদ খান মিলন, উদাখালী ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান আলহাজ্ব কাবিল উদ্দিন, এরেন্ডাবাড়ি ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান, ছাত্র প্রতিনিধি জাহিদ হাসান জীবন, খোরশেদ আলম, আলিফ বিন সম্রাট, পারভেজ হাসান রুবেল, আলমগীর হোসেন, শোয়েব আলী, ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রায়হান মাহমুদ রাহুল প্রমুখ।
অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘শুধু জমি পাওয়ার অজুহাতে কলেজটি নদীভাঙন কবলিত এলাকায় করা হলে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেও এর উদ্দেশ্য সফল হবে না। এটি দূরদর্শিতার অভাব। উপজেলা সদর কাঠুর এলাকায় অনেক খাস জমি আছে, সেখানে কলেজটি হলে সবাই উপকৃত হবে।’
বিশ্বাস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও শিক্ষানুরাগী ওয়াহেদুজ্জামান বিশ্বাস তোহা বলেন, ‘টেকনিক্যাল শিক্ষা মূলত দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য। তাই কলেজ এমন জায়গায় স্থাপন করা জরুরি, যেখানে সর্বাধিক শিক্ষার্থী উপকৃত হবে।’
এ বিষয়ে ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জগৎবন্ধু মন্ডল বলেন, “কলেজটি কাতলামারী এলাকায় স্থাপনের জন্য কয়েক দফা সমীক্ষা চালানো হয়েছে এবং এখন এটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এই মুহূর্তে নতুন করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে কলেজ স্থাপন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হবে।
এদিকে প্রস্তাবিত সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ নিয়ে ফুলছড়িবাসীর মধ্যে এখন প্রত্যাশা ও শঙ্কা দুটোই কাজ করছে। তাদের দাবি কলেজটি যেন উপজেলা সদর বা যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়- এমন কোন জনবহুল এলাকায় স্থাপন করা হয়। তারা আশা করেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।