নিজাম উদ্দীন
কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার সরারচর ইউনিয়নের কালেখাঁর ভান্ডা গ্রামের রকিব হাসান ভূঁইয়ার বাড়ির সীমানা প্রাচীরে ইট পাথরের বদলে শোভা পাচ্ছে বইয়ের মোড়ক। গেটের দুপাশের সীমানা প্রাচীর যেন বিশাল বুকসেলফ। যেখানে সাজানো রয়েছে বিশ্বসাহিত্যের জনপ্রিয় বইয়ের স্থাপত্যশৈলী। প্রতিদিন এই বাড়িটি দেখতে শত শত মানুষের ভিড় করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজিতপুর উপজেলার কালেখাঁ ভান্ডা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত শামছুল হক ভূঁইয়া ছেলে রাকিব হাসান ভূঁইয়া একজন বইপ্রেমী। তার পরিবারের সবারই বইয়ের প্রতি আসক্তি রয়েছে।
শৈশবে বাড়িতে একটি লাইব্রেরি ছিল, সবাই খুব আগ্রহ সহকারে বই পড়তেন। তার বড় ভাই একজন লেখক। বইপ্রেমী প্রয়াত বাবার প্রতি শ্রদ্ধা আর বইয়ের প্রতি মানুষের উৎসাহ বাড়াতে কালজয়ী কিছু বইয়ের মোড়কে নিজের বাড়ির প্রাচীরটি দৃষ্টিনন্দন ভাবে সাজিয়েছেন রাকিব হাসান।
সরারচর রেল স্টেশন থেকে কিশোরগঞ্জমুখী পথে যেতে দেখা মিলে আনন্দধারা নামে বাড়িটির। বাড়িতে প্রবেশের প্রধান গেটটি দেখতে ঠিক বইয়ের মতো। গেটের দুই পাশের সীমানা প্রাচীর দেখে মনে হয় বিশাল বুকসেলফ। ১৪ ফুট উঁচু ৯০ ফুট দীর্ঘ প্রাচীরজুড়ে স্থান পেয়েছে বাংলা ও বিশ্বসাহিত্যের ৩৩টি বিখ্যাত বই।
কথা হয় গ্রন্থ প্রাচীর দেখতে আসা হাজী এডভোকেট ওসমান গণি মডেল কলেজ প্রভাষক রাজ্জাকুন্নাহার সুমির সাথে। তিনি বলেন, বর্তমান প্রজন্ম মোবাইল গেমস, ফেসবুক এবং ইউটিউবে আসক্ত। তারা বাঙালির জীবন ও সংগ্রামের ইতিহাস জানেন না।
এ রকম যখন পরিস্থিতি, তখন রাকিব হাসান দেখিয়েছেন বইয়ের প্রতি ভালোবাসা। মানুষকে বইয়ের প্রতি আগ্রহী করার তার যে প্রয়াস সেটি অতুলনীয়। তার এমন উদ্যোগে ছেলেমেয়েরা কালজয়ী বই ও লেখকের সম্পর্কে জানতে পারবে। তারা বুঝতে পারবে বই মানুষকে আলোর পথ দেখায়।
রাজ্জাকুন্নাহার সুমি বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আমার সন্তানদের নিয়ে এসেছি বইয়ের দেওয়াল দেখাতে। আশা করছি আগামী দিনে এখানে একটি উন্মুক্ত গ্রন্থাগার হবে।
স্কুল শিক্ষার্থী উম্মে হাবীবা বলেন, আমরা অনেক দূর থেকে এসেছি বইয়ের-দেওয়াল বাড়ি দেখার জন্য। এখানকার অনেকগুলো বই আমাদের ঘরে আছে। বাকি বইগুলোর নাম লিখে নিচ্ছি। তবে এখানে একটি উন্মুক্ত গ্রন্থাগার থাকলে সবাই এসব বই পড়ার সুযোগ পেত।
রকিব হাসান ভূঁইয়ার মা শামসুন্নাহার বলেন, ‘আমাদের বাড়ির প্রাচীরের এই কাজ দেখতে অনেক লোকজন আসছেন। বিষয়টি আমার কাছে ভালো লাগছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই বাড়িতে একটি লাইব্রেরি ছিল। ছেলেমেয়েদের বই প্রীতি আমাকে আনন্দ দেয়।’
বইয়ের মোড়কে বাড়ির সীমানা প্রাচীর নির্মাতা মো. রাকিব হাসান ভূঁইয়া জানান, বইয়ের আদলে বাড়ির সীমানা প্রাচীর নির্মাণে আইডিয়াটা এসেছে ২০১৫ সালের জাতীয় বইমেলায় গিয়ে একটি প্রকাশনীর স্টল দেখে। বুক সেলফ এর মতো সীমানা প্রাচীর নির্মাণে দক্ষ কারিগর পেতে অন্তত ছয় মাস খোঁজাখুঁজি করতে হয়েছে। তাদের সঙ্গে দিনরাত শ্রম দিয়ে কালজয়ী কিছু বইয়ের মোড়কের বাড়ির প্রাচীরটি তৈরি করা হয়।
তিনি বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক, ইউটিউব ইত্যাদির কারণে বর্তমান প্রজন্ম বইবিমুখ হয়ে যাচ্ছে। অথচ একজন মানুষের প্রকৃত বন্ধু হচ্ছে-বই। একজন বন্ধু ছেড়ে যেতে পারে কিন্তু বই সারাজীবন বাতিঘর হয়ে পথ দেখায়।
নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভাষা আন্দোলন ও বাঙালি জাতির ইতিহাস–ঐতিহ্য তুলে ধরতে বাড়িতে একটি বড়সড় উন্মুক্ত গ্রন্থাগার করবেন বলেও তিনি জানান।
S/KS