মোঃজাহাঙ্গীর আলম রিকো
বই পড়লে পৃথিবীটা হাতের মুঠোয় চলে আসে এই ধারণা থেকেই নির্মাণ করা হয় গেটের মূল ফটকটি।
উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দইখাওয়া আদর্শ কলেজের মূল ফটক বই দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ।
শিক্ষা অর্জনের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে বই। মানুষের মাঝে শিক্ষার ও জ্ঞানের আলো পৌঁছাতে বইয়ের গুরুত্ব অপরিহার্য।
বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের কথা সাহিত্যিকের লেখা ৫০ টি বই দিয়ে তৈরি করা হয়েছে কলেজটির মূল ফটক। উপরের অংশে দু-হাতের মাঝখানে গ্লোব। এবং কিছু অংশে বাংলাদেশের মানচিত্র।
এছাড়াও রয়েছে একটি শহীদ মিনার ও হৃদয়ের পুস্তক চত্বর।
দৃষ্টিনন্দন এই গেটটি এক নজর দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে ছুটে আসছেন হাজারো মানুষ। বইয়ের অসাধারণ কারুকাজ দেখে দর্শনার্থীরা অনেক খুশি।
হাতীবান্ধা-চাপারহাট আঞ্চলিক সড়কের পাশেই বইয়ের আদলে নির্মিত করা হয়েছে দইখাওয়া আদর্শ কলেজের এই মূল ফটকটি। নজর কারছে পথচারী সহ সাধারণ মানুষের। অন্যদিকে কলেজটির ভিতরে প্রবেশ করলেই দেখা মিলবে দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় একটি শহীদ মিনার। শহীদ মিনারটিকে আগলে ধরে রেখেছেন একটি বই। বই রয়েছে নানান ধরনের বর্ণ। এছাড়াও রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের গল্প। তাছাড়াও কলেজটির ভিতরে সবুজে ঘেরা সাজানো সারি সারি গাছ যেনো প্রতিকুল পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। গাছের নিচে বসে যেনো প্রকৃতির সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলছেন শিক্ষার্থীরা।
সিমান্ত বেষ্টিত এই কলেজটির আশপাশে বসবাসরত শিক্ষার্থীরা নিম্নবিত্ত পরিবারের হওয়ায় এই কলেজটিতে ১০ টাকায় দুপুরে মানসম্মত খাবারের জন্য চালু করা হয়েছে একটি ক্যান্টিন।এতে ১০ টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থীরা সবজি-ডাল মিশ্রিত খিচুড়ি ও একটি ডিম খেতে পারছে। খুদা মিটিয়ে ক্লান্তি দুরিকরণ করে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় আরও মনোযোগি করে তুলছে।
১৯৯৯ সালে হাতীবান্ধা দইখাওয়া আদর্শ কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই ফটক নির্মাণ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কলেজের প্রধান ফটক করতে প্রচুর টাকার প্রয়োজন। সেই টাকার বরাদ্দ বেসরকারি এই প্রতিষ্ঠানটিতে ছিলোনা। অনেক প্রত্যাশার পর গত বছরের মার্চ মাসে কলেজ কর্তৃপক্ষের চিন্তা-ভাবনা আসে ফটক নির্মাণের। কলেজের সৌন্দর্য বাড়াতে একটি দৃষ্টিনন্দন ফটক তৈরি করতে হবে। পরে সারাদেশে ওই প্রতিষ্ঠানের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন শিক্ষকরা। সেখানেই চারুকলার শিক্ষার্থী সহযোগিতা চায় কলেজের শিক্ষকরা। সেই মোতাবেক শিক্ষার্থীরা রাজি হয়ে ফটক নির্মাণের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। তবে তাদের দিতে হবে নির্মাণ সামগ্রী। কলেজের অধ্যক্ষ কলেজের ফান্ড থেকে কিছু টাকা বরাদ্ধ দিয়ে নির্মাণ শুরু করেন। টানা একটি বছর কাজ শেষে তৈরি করা হয়েছে ৫০ টি বই দিয়ে ফটকটি।
ওই এলাকার শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান সাব্বির বলেন, বই দিয়ে এত সুন্দর গেটের ফটক নির্মিত হবে কল্পনা করতে পারি নাই। বই দিয়ে তৈরি দইখাওয়া আদর্শ কলেজের এই গেটের ফটক দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গার মানুষ ভিড় জমায়। ব্যাতিক্রমি এই ফটক হাতীবান্ধার অন্য কোথাও এখানো তৈরি করা হয়নি। কলেজ কতৃপক্ষকে সাধুবাদ জানাই এত সুন্দর একটা উদ্যোগ নেওয়ার জন্য।
দইখাওয়া আদর্শ কলেজের শিক্ষার্থী জ্যোতি বলেন, আমাদের এই কলেজের অধ্যক্ষ একজন সৃজনশীল মানুষ। তিনি সব সময় নতুন কিছু করতে ভালোবাসেন। আর সেই জায়গা থেকেই শিক্ষার্থীদের বইয়ের প্রতি উদ্বুদ্ধ ও আলোকিত করার লক্ষ্যে তিনি এই উদ্যোগটি নিয়েছেন। বিভিন্ন লেখকের বই দিয়ে নির্মিত এই গেটটির জন্য সত্যি প্রশংসার দাবিদার তিনি।
দইখাওয়া আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ মোফাজ্জল হোসেন বলেন, আমার নিজস্ব পরিকল্পনা ছিলো বই দিয়ে গেটটা তৈরি করা তারপর বিভিন্ন জনের কাছ থেকে পরামর্শ নেই। কারণ বই পড়লে পৃথিবীটা হাতের মুঠোয় চলে আসে এই ধারণা থেকেই নির্মাণ করা হয় গেটের মূল ফটকটি, গত বছর কাজ শুরু হয়ে চলতি বছরের মার্চ মাসে গেটটির কাজ শেষ হয়। স্বাধীনতার সুবর্ণা জয়ন্তী উপলক্ষে ৫০ টি লেখকের বই দিয়ে গেটটি নির্মাণ করা হয়।