অন্যান্য

বর্ষায় ব্যস্ত কুমারঘাটা, মনিরামপুরের নৌকা ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে

  প্রতিনিধি 30 July 2025 , 9:10:14 প্রিন্ট সংস্করণ

বর্ষায় ব্যস্ত কুমারঘাটা, মনিরামপুরের নৌকা ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে
নৌকার হাটে জমজমাট বেচাকেনা, দম ফেলার ফুরসত নেই কারিগরদের


জি.এম. ফিরোজ উদ্দিন, মনোহরপুর (মণিরামপুর), যশোর প্রতিনিধি

যশোরের মণিরামপুর উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের কুমারঘাটা বাজারে বর্ষা মৌসুমে জমজমাট হয়ে উঠেছে নৌকার হাট। প্রতি বছরের মতো এবারও খাল-বিল ও নিচু এলাকাগুলো পানিতে টইটম্বুর হয়ে উঠায় নৌকার চাহিদা বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। বাজারে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লেগে আছে ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়, আর চারদিকে শুধু হাতুড়ির ঠুকঠাক শব্দ।

কারিগরদের ব্যস্ততায় মুখর কুমারঘাটা, কপালিয়া, কালিবাড়ি, নেহালপুর ও কোনাকোলা এলাকা। তাদের নিপুণ হাতে তৈরি হচ্ছে কাঠের ডোঙা ও নৌকা। বাজারজুড়ে ২৫-২৮টি ঘরে প্রায় ৬০-৭০ জন শ্রমিক দিনরাত কাজ করছেন। একজন কারিগর জানান, তিনজন মিলে দিনে একটি ডোঙা তৈরি করেন এবং মজুরি পান ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। কাজ শেষে বৈদ্যুতিক মেশিনে ফিনিশিং দিয়ে রোদে শুকিয়ে কালো রং করে বাজারজাত করা হয়।

স্থানীয় ডোঙা নির্মাতা মো. মাসুদ বিশ্বাস জানান, তিনি প্রায় ১২-১৩ বছর ধরে এই বাজারে কাজ করছেন। শুরুর দিকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করতেন, এখন স্থায়ীভাবে কুমারঘাটা বাজারেই কর্মরত। অনেকে বংশ পরম্পরায় এ পেশায় যুক্ত। কেউ কেউ জানান, শিখে আসা ছেলেদেরও এখন এই কাজে যুক্ত করছেন।

মো. সবুজ হোসেন ও মো. তৈয়েবুর রহমান, যাঁরা পেশায় কাঠ ব্যবসায়ী, তারা জানান, “নৌকা তৈরির কাজ শুরু হয় জুন থেকে, চলে আগস্ট পর্যন্ত। পানির পরিমাণ বাড়লে বিক্রিও বাড়ে। এ বছর ৮ থেকে ৯ হাত দৈর্ঘ্যের নৌকা বিক্রি হচ্ছে সাত থেকে দশ হাজার টাকায়। বড় নৌকা হলে দাম ১২ হাজার পর্যন্ত হয়।”

পেরেক ও মেহগনি, পুইয়ে, খই ও লম্বু কাঠ দিয়ে তৈরি হয় এসব নৌকা। কাঠের তক্তা বিশেষ কৌশলে তৈরি করে তাকে ‘দাড়া’ বলা হয়, যার ওপর ভিত্তি করে পুরো নৌকা তৈরি হয়।

ডোঙাগুলো শুধু মনিরামপুরেই নয়, বিক্রি হচ্ছে যশোর, খুলনার কয়রা, নড়াইল, বেনাপোল, কেশবপুর, ডুমুরিয়া ও অভয়নগরসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলায়। মূলত বর্ষার সময় মাছের ঘেরে খাবার বহন, মাছ ধরা ও লোক পারাপারের জন্য এসব ডোঙার ব্যাপক চাহিদা থাকে।

কুমারঘাটা বাজারের প্রাথমিক উদ্যোক্তা মো. মোস্তাক আহমেদ মোল্লা বলেন, “আমি তিনজন শ্রমিক নিয়ে কাজ শুরু করি, এখন আমার ৬টি ঘরে ১৮ জন লোক কাজ করছে। পুরো বাজারে এখন ২২-২৩টি ঘরে নৌকা তৈরি হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “এখানকার জমিতে তেমন ফসল হয় না। খাল-বিলে সারাবছর পানি থাকায় নৌকা বিক্রিও চলে সারাবছর। একটি নৌকায় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা লাভ থাকে।”

স্থানীয়রা মনে করেন, সরকারি বা বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই নৌকা শিল্প মনিরামপুরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ