প্রতিনিধি 23 August 2025 , 7:28:56 প্রিন্ট সংস্করণ
বিনোদন ডেস্ক :
লাক্স তারকা থেকে রুপালি পর্দা, তারপর বিশ্ব মঞ্চ ও বলিউডে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। তবে তার এই চলার পথ মোটেও মসৃণ ছিল না। কারণ পেশাগত নানা সংকটের পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনেও সংগ্রামটা একাই করতে হয়েছে তাকে।
বাঁধনের জীবনে বেশ কজন পুরুষ এসেছেন, যাদের একটি অংশ তাকে গড়েছেন; অন্য অংশটি তার জীবনে নেতিবাচক প্রভাবে ফেলেছেন। বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) এ নিয়ে বাঁধন তার ফেসবুকে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তাতে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন এই অভিনেত্রী।
আজমেরী হক বাঁধন বলেন, “আমাকে নিয়ে বড় একটি ভুল বোঝাবুঝি আছে—অনেকেই ভাবেন, আমি পুরুষদের অপছন্দ করি। এটা ঠিক নয়। আমি যেটা অপছন্দ করি, সেটা হলো আমরা যে পিতৃতান্ত্রিক সমাজে বাস করি এবং সেই ব্যবস্থাকে যারা বয়ে নিয়ে চলে; সেটা পুরুষ হোক কিংবা নারী। আমি অনেক দিন এদের ঘৃণাও করতাম। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বুঝেছি, সব দোষ ওদের না। সমাজ, সংস্কৃতি, রাষ্ট্র—সবকিছু মিলে ওদের এমন করে তোলে, যেন তারা পিতৃতন্ত্রের বাহক হয়ে ওঠে। পরিষ্কারভাবে বলি, আমি পিতৃতন্ত্রকে অপছন্দ করি আর যারা সেটা লালন করেন তাদেরও। কিন্তু আমি মানুষকে ঘৃণা করি না।”
বাঁধন তার জীবনে আসা পুরুষদের নিয়ে বলেন, “এবার আসি আমার জীবনের পুরুষদের কথায়। আমার জীবনে কিছু পুরুষ আছেন, যারা আমাকে গভীরভাবে গড়ে তুলেছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলেন আমার বাবা। তিনি আমাকে নানাভাবে গড়েছেন। আরেকজন হলেন ‘রেহানা’ সিনেমার পরিচালক সাদ। এই দুইজন মানুষ আমার জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছেন।”
বাঁধন তার দুই ভাইয়ের কথা উল্লেখ করে বলেন, “তারপর আমার দুই ভাই—আমার আজীবনের সহচর। যদিও আমাদের চিন্তাধারায় অনেক পার্থক্য আছে। বিশেষ করে আমার ছোট ভাই রাশা, সে শুধু আমার ভাই নয়, আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। যার সঙ্গে আমি শিশুসুলভ মন নিয়ে কথা বলতে পারি। আমার বড় ভাই, এমন সময় আমার পাশে ছিলেন, যখন মা-বাবাও পারেননি। এটা আমি কখনো ভুলব না।”
পৈতৃক সম্পত্তি সমানভাবে ভাগ করেছে বাঁধনের দুই ভাই। তা উল্লেখ করে এই অভিনেত্রী বলেন, “আমার এই দুই ভাই উত্তরাধিকার নিয়ে অসাধারণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তারা শরীয়াহ আইন কড়াভাবে অনুসরণ করেনি। তারা আমার সঙ্গে সমানভাবে সম্পদ ভাগ করে নিয়েছে। ওদের দিয়ে দিতে হয়েছে—আমি এই বিষয়টা পছন্দ করি না। সম্পত্তি ওদের ছিল আর ওরা আমাকে ‘দয়া’ করে দিয়েছে। কিন্তু সমাজ ব্যবস্থায় এটাই বাস্তবতা। আর সেই বাস্তবতায় তারা যে ন্যায্যতা আর ভালোবাসা দেখিয়েছে, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আশা করি, একদিন আমাদের আইন এমন হবে, যেখানে সম্পত্তি সবার জন্য সমানভাবে বরাদ্দ থাকবে, আলাদা করে কিছু দিতে হবে না।”
“আমার জীবনে আরো কিছু পুরুষ আছেন, যারা আমাকে নানা দিক থেকে প্রভাবিত করেছেন। তাদের জন্য আমার মনে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর কৃতজ্ঞতা। তারা আমার প্রার্থনায় চিরকাল থাকবেন।” বলেন বাঁধন।
যেসব পুরুষ বাঁধনের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছেন, তাদের কথাও স্মরণ করেছেন এই অভিনেত্রী। তার ভাষায়, “তারপর রয়েছে সেই অন্যরা; যারা আমার জীবনে নেতিবাচক, কখনো নির্মম প্রভাব ফেলেছেন। এমন অনেক পুরুষ ছিল, যারা ছিল অসম্মানজনক, সহিংস, অমানবিক। অদ্ভুতভাবে, তাদের জন্যও আমি কৃতজ্ঞ। কারণ তারা আমাকে যতটা ভাঙতে চেয়েছেন, তাদের নিষ্ঠুরতাই আমার ভেতরে আগুন জ্বালিয়েছে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক অগ্ন্যুৎপাতের মতো। তারাও আমাকে গড়ে তুলেছেন। তারা আমার প্রার্থনায় থাকবেন না, কিন্তু তারা আমার গল্পে আছেন। হয়তো একদিন তারা বুঝবেন, তারা কী করেছেন। আর সেই উপলব্ধিই হবে তাদের সবচেয়ে বড় শাস্তি। তাই ভুল বোঝবেন না, আমি পুরুষদের অপছন্দ করি না। আমি পিতৃতন্ত্রকে অপছন্দ করি। আর হ্যাঁ, আমি পুরুষদের পছন্দ করি।”