সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি :মো: শাহিন মিয়া
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্ষমতায় যাওয়ার মতো দল হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামী এখনো বেশ কিছু সীমাবদ্ধতার মধ্যে আছে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো জনসম্পৃক্ততা, পেশাজীবীদের অংশগ্রহণের ঘাটতি এবং একাত্তর ইস্যু। ক্যাডারভিত্তিক দল হওয়ায় জামায়াতে সাধারণ জনগণের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা তুলনামূলক কম, যা বড় দলগুলোর ক্ষেত্রে দেখা যায় না।
জামায়াতের দুই বড় শক্তি
তবে সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি দলটির দুটি বড় শক্তিশালী দিকও আছে, যা অন্যান্য দলগুলোর তুলনায় জামায়াতকে আলাদা করে তোলে।
১. শৃঙ্খলা ও দলীয় সংহতি
জামায়াত যেহেতু ক্যাডারভিত্তিক দল, তাই দলের মধ্যে কঠোর শৃঙ্খলা বজায় থাকে। বড় দলগুলোর মতো অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং, কোন্দল বা সহিংসতা জামায়াতে নেই বললেই চলে। ফলে দলটি সাংগঠনিকভাবে সুসংহত এবং যে কোনো পরিস্থিতিতে একত্রে কাজ করতে সক্ষম। এর ফলে প্রশাসনিক দক্ষতা ও দলীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অন্য দলগুলোর তুলনায় জামায়াত অনেক বেশি কার্যকর হতে পারে।
২. স্বনির্ভর অর্থব্যবস্থা ও দুর্নীতি-বিরোধী মডেল
জামায়াতের আরেকটি বড় সুবিধা হলো তাদের স্বনির্ভর অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। দলের কর্মীরা নিয়মিত মাসিক চাঁদা দিয়ে দলীয় কার্যক্রম চালায়। এখান থেকে দলের সব খরচ, এমনকি নির্বাচনী ব্যয়ও মেটানো হয়। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষেত্রে দেখা যায়, ব্যক্তিগতভাবে রাজনীতিতে আসা নেতাদের নিজস্ব পকেটের টাকা খরচ করতে হয়, যা পরবর্তীতে বিভিন্ন অনৈতিক উৎস থেকে পুনরুদ্ধারের প্রবণতা তৈরি করে। কিন্তু জামায়াতের এই বিকল্প মডেল তাদেরকে তুলনামূলকভাবে দুর্নীতি থেকে মুক্ত রাখে।
সুবিধার সাইড-ইফেক্ট ও নতুন চ্যালেঞ্জ
যদিও এই দুটি শক্তি জামায়াতকে অন্য দলগুলোর চেয়ে আলাদা করে, তবে এর একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে—সাধারণ মানুষের সঙ্গে কম সংযোগ। শৃঙ্খলাবদ্ধ দল হলেও জামায়াতের নেতৃত্ব তুলনামূলক কম পরিচিত। বড় দলগুলোর ক্ষেত্রে নেতারা জনগণের সামনে বেশি আসে, তাদের সঙ্গে মিশে যায়, কিন্তু জামায়াতের ক্ষেত্রে এই প্রবণতা কম।
যদি জামায়াত জনগণকে বুঝাতে পারে যে, তাদের নেতাদের একটু কম চিনলেও তারা দেশ ও সাধারণ মানুষের জন্য কার্যকর হতে পারে, তাহলে তাদের নির্বাচনী সম্ভাবনা আরও বাড়তে পারে।
জুলাই বিপ্লব ও নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ
বিশ্ব রাজনীতিতে সাম্প্রতিক পরিবর্তন, বিশেষ করে আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলে "জুলাই বিপ্লব" ও ইসলামী ধারার রাজনৈতিক পুনরুত্থান, বাংলাদেশেও ইসলামপন্থী দলগুলোর জন্য নতুন সম্ভাবনার জানালা খুলে দিয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনও ক্রমশ পরিবর্তিত হচ্ছে, এবং সরকারবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে নতুন মেরুকরণ দেখা যাচ্ছে।
যদি জামায়াত তাদের কৌশলগত পরিকল্পনায় জনসম্পৃক্ততাকে অগ্রাধিকার দেয় এবং রাজনৈতিক বাস্তবতাকে বিবেচনায় নিয়ে কার্যকর প্রচারণা চালায়, তবে ভবিষ্যতে তারা বড় কোনো চমক দেখাতে পারে। তবে একাত্তর ইস্যু, রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও দলীয় ইমেজ সংকট মোকাবিলা করাই তাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
পরবর্তী সময়ে জামায়াতের কৌশল কী হবে? শৃঙ্খলা ও স্বনির্ভরতার শক্তিকে কি তারা গণভিত্তিতে রূপ দিতে পারবে? নাকি প্রচলিত রাজনৈতিক ব্যবস্থার সাথে তাল মিলিয়ে চলার নতুন কৌশল গ্রহণ করবে? সময়ই বলে দেবে।