SAJJAD SAGOR
বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন বহালের দাবিতে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির ডাকে জেলাব্যাপী আজ সোমবার সকাল থেকে হরতাল ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নতুন সীমানা পুনর্বিন্যাসে জেলার একটি আসন কমিয়ে তিনটিতে নামিয়ে আনার প্রতিবাদে এ কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে।
আজ সকাল আটটা থেকে শুরু হওয়া হরতাল ও অবরোধ চলবে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত। সকাল থেকেই জেলার অন্তত ২০টি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। খুলনা-বরিশাল মহাসড়কের বাগেরহাট কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে, দশানী মোড়, খুলনা-ঢাকা মহাসড়কের কাটাখালী, ফকিরহাট বিশ্বরোড মোড়, মোল্লাহাট সেতু, খুলনা-মোংলা মহাসড়কের ফয়লা, মোংলা বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন স্থানে গাড়ি, গাছের গুঁড়ি ও বেঞ্চ ফেলে অবরোধ করা হয়েছে।
সকাল সাড়ে আটটার দিকে বিক্ষোভকারীরা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে তাঁরা মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল হাসান নিজ দপ্তরে প্রবেশ করতে চাইলে আন্দোলনকারীরা তাঁকে বাধা দেন। পরে তিনি পাশের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রবেশ করেন।
এই কর্মসূচিতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মীরা অংশ নেন। উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম, সদস্যসচিব মুজাফফর রহমান, জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমির মাওলানা রেজাউল করিম, সেক্রেটারি শেখ মুহাম্মদ ইউনুস, বিএনপি নেতা ফকির তারিকুল ইসলামসহ অনেকে।
চারটি সংসদীয় আসন বহালের দাবিতে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি। কর্মসূচি অনুযায়ী, সোমবার দিনব্যাপী হরতাল, মঙ্গলবার বিক্ষোভ মিছিল এবং বুধ ও বৃহস্পতিবার আবারও হরতাল। তবে অ্যাম্বুলেন্স, শিক্ষার্থীদের বহনকারী গাড়ি ও জরুরি সেবার যানবাহন হরতালের আওতামুক্ত থাকবে।
দীর্ঘদিন ধরে বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন ছিল। গত ৩০ জুলাই নির্বাচন কমিশন আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নতুন সীমানা প্রস্তাব করে, যেখানে একটি আসন কমিয়ে তিনটি করার কথা বলা হয়। এর বিরুদ্ধে স্থানীয় রাজনৈতিক দল ও সচেতন নাগরিকেরা আন্দোলনে নামেন এবং কমিশনের শুনানিতেও অংশ নেন। তবে ৪ সেপ্টেম্বর কমিশন চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করে, যেখানে তিনটি আসন বহাল রাখা হয়
আন্দোলনকারীরা বলেন, জেলার জনসংখ্যা ও ভৌগোলিক বিস্তৃতি বিবেচনায় চারটি আসন বহাল রাখা প্রয়োজন। একটি আসন কমালে একাধিক উপজেলা একই আসনের আওতায় পড়বে, ফলে জনপ্রতিনিধিদের জন্য কার্যকরভাবে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
১৯৬৯ সাল থেকে বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসনে নির্বাচন হয়ে আসছিল। তখনকার সীমানা ছিল—বাগেরহাট-১: ফকিরহাট-মোল্লাহাট-চিতলমারী; বাগেরহাট-২: বাগেরহাট সদর-কচুয়া; বাগেরহাট-৩: রামপাল-মোংলা এবং বাগেরহাট-৪: মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা।
নির্বাচন কমিশনের চূড়ান্ত গেজেট অনুযায়ী বর্তমান আসনের সীমানা হলো—বাগেরহাট-১: বাগেরহাট সদর-চিতলমারী-মোল্লাহাট; বাগেরহাট-২: ফকিরহাট-রামপাল-মোংলা এবং বাগেরহাট-৩: কচুয়া-মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা।