ঢাকা অফিস।।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকা, বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। এ ছাড়া গতকাল বিকালে রাষ্ট্রপতির বাসভবন বঙ্গভবন ঘেরাও করে বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা তার পদত্যাগের দাবিতে সেøাগান দিতে থাকেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বঙ্গভবনের সামনে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ব্যারিকেড তৈরি করা হয়। প্রস্তুত রাখা হয় এপিসি ও জলকামান। রাত সাড়ে ৮টার দিকে সাউন্ড গ্রেনেডও নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় একটি জলকামান ভাঙচুর করেন বিক্ষোভকারীরা।
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ও ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করাসহ পাঁচটি দাবি তুলে ধরেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ লক্ষ্যে গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। চলতি সপ্তাহের মধ্যে দাবি না মানলে রাজপথে নামার ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
এদিকে গতকাল বিকাল ৪টার দিকে বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা বঙ্গভবনের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেন। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে তারা বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকেন। এ সময় আন্দোলনকারীরা বর্তমান রাষ্ট্রপতিকে ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে পদত্যাগে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম বেধে দেন। অন্যথা কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দেন তারা। বঙ্গভবনের সামনে রাস্তা অবরোধের আগেই ওই এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বঙ্গভবনের নিরাপত্তায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। প্রস্তুত রাখা হয় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর এপিসি-জলকামান। সময় গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই বঙ্গভবনের সামনে ছাত্র-জনতার জমায়েত বড় হতে থাকে। এতে করে বঙ্গভবনের সামনের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যা ৭টার পর আলটিমেটাম দিয়ে কয়েকটি সংগঠন বঙ্গভবনের সামনে থেকে চলে যায়। তবে আরও কয়েকটি সংগঠনের শত শত কর্মী বিক্ষোভ করতে থাকেন। তারা রাষ্ট্রপতির ভবনে ঢোকার চেষ্টা করেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাত সাড়ে ৮টার দিকে আন্দোলনকারীদের ওপর একটি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় উত্তেজিত বিক্ষোভকারীরা একটি জলকামান ভাঙচুর করেন। এরপর বঙ্গভবনের সামনে থেকে পুলিশ সদস্যদের সরিয়ে নেওয়া হয়। ব্যারিকেডের সামনে অবস্থান নেন সেনাবাহিনী সদস্যরা। তারা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন।
এদিকে বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে চলতি সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবি জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ সময় অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এ সপ্তাহের মধ্যেই তাদের পাঁচ দফা দাবি পূরণের কথা বলেন। দাবিগুলো হলো- মুজিববাদী ’৭২ এর সংবিধান বাতিল করতে হবে; ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ নিষিদ্ধ করতে হবে; রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর পদত্যাগ করতে হবে; জুলাই বিপ্লবের স্পিরিটের আলোকে ’২৪ পরবর্তী বাংলাদেশ বিনির্মাণে নতুন করে ‘প্রোক্লেমেশন অব রিপাবলিক’ ঘোষণা করতে হবে। এর ভিত্তিতে এবং বাংলাদেশের বর্তমান গণতান্ত্রিক ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক বলয়ের মতের ভিত্তিতে বাংলাদেশ পরিচালিত হবে এবং বিগত তিনটি নির্বাচন অবৈধ ঘোষণা করে নির্বাচিতদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে।
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, আমরা এই শহীদ মিনার থেকে আমাদের বিপ্লব শুরু করেছিলাম। সেই বিপ্লবের ভয়ে বাংলাদেশ থেকে পালিয়েছিলেন ফ্যাসিস্ট হাসিনা। আর এখন আপনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে জনতার সঙ্গে প্রতারণা করছেন। আপনি ৫ আগস্ট যা বলেছেন, কার নির্দেশে এখন তা ভুলে গিয়ে নতুন কথা বলছেন? আমরা স্পষ্ট বলে দিতে চাই- খুনি হাসিনা যেভাবে পালিয়েছে, চুপ্পুকেও পালাতে হবে। দেশের প্রশ্নে, দশের প্রশ্নে বিপ্লবীরা সব সময় মাঠে আছে।
জমায়েতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, আবারও যদি প্রয়োজন হয়, আমরা আমাদের জীবন দিতে প্রস্তুত আছি। ফ্যাসিস্ট ছাত্রলীগ যেভাবে আমাদের ভাইদের হত্যা করেছে, তাদের উত্থান সহ্য করা হবে না।
এদিকে, সন্ধ্যা ৭টার দিকে সরকারের উপদেষ্টাদের আশ্বাসে বঙ্গভবনের সামনে থেকে সরে যায় আন্দোলনকারীদের একাংশ। রাষ্ট্রপতির অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠনগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ইনকিলাব মঞ্চ। সন্ধ্যা ৭টার দিকে ইনকিলাব মঞ্চের কেন্দ্রীয় মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের তিনজন উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের ফোনে কথা হয়েছে। তারা আমাদের বলেছেন, আগামীকাল (আজ বুধবার) বিকাল ৫টায় এই তিন উপদেষ্টা ইনকিলাব মঞ্চের পাঁচ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠকে রাষ্ট্রপতিকে তার পদ থেকে অপসারণ ও ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে আলোচনা হবে এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে আমরা আমাদের আন্দোলন স্থগিত করব না। আমরা তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সিদ্ধান্ত নেব, কী করব।
এ ঘোষণা উপেক্ষা করে তখনও কয়েকশ’ তরুণ বঙ্গভবনের সামনে সেøাগান দিতে থাকে। অবশ্য রাত ৯টার দিকে বঙ্গভবনের সামনের অংশ অনেকটাই ফাঁকা হয়ে যায়।
চট্টগ্রাম ব্যুরোর পাঠানো খবরে বলা হয়- রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ও ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে গতকাল বন্দরনগরীর বিভিন্ন স্থানে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ করেছে ছাত্র-জনতা। বিকাল পৌনে ৫টায় নগরীর ষোলশহরের রেলওয়ে স্টেশনে সমাবেশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সমাবেশে বক্তারা বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ না করলে আলটিমেটাম ছাড়াই বঙ্গভবন ঘেরাও করা হবে।
বিক্ষোভে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক রিয়াজুর রহমান বলেন, এ দেশে স্বৈরচারের দোসরদের থাকতে দেওয়া যাবে না। স্বৈরাচারের কোনো রাষ্ট্রপতি আমরা চাই না। এই রাষ্ট্রপতি ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসর আমলাদের টিকিয়ে রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
এ ছাড়া রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ, কিশোরগঞ্জ শহরের পুরান থানা এলাকায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, মাগুরা শহর ও ঝিনাইদহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে।