অন্যান্য

বিজয়নগরে সাংবাদিকের বাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা, বোমা বিস্ফোরণ, ভাঙচুর, লুটপাট

  প্রতিনিধি 25 June 2025 , 4:06:32 প্রিন্ট সংস্করণ

মোঃ কাউছার আহমেদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার ছতরপুর গ্রামে এনটিভি অনলাইন-এর প্রতিনিধি (ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর-আশুগঞ্জ-বিজয়নগর) সাংবাদিক শাহনেওয়াজ শাহ্-এর বাড়িতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। রবিবার (২২ জুন) সন্ধ্যায় সংঘটিত এ ঘটনায় বাড়িতে বোমা হামলা, ভাঙচুর, লুটপাটসহ বৃদ্ধা মায়ের ওপর বর্বর হামলা চালিয়ে তার একটি হাত ও একটি পা ভেঙে দেয় দুর্বৃত্তরা। বোমা বিস্ফোরণের আঘাতে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন।
স্থানীয় সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে জমি দখলের উদ্দেশ্যে এ হামলার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের দাবি, সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত প্রায় ৫০-৬০ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল রামদা, লাঠি, রড, ছুরি ও বোমা নিয়ে হামলা চালায়। এসময় তারা একটি টিনের ঘর ভেঙে ঘরসহ ঘরের ভিতরে থাকা ৩/৪ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায় ও একটি মাটির ঘরের দরজা ভেঙে ঘরের আসবাবপত্রসহ শোকেজের ড্রয়ার ভেঙে ২ লাখ টাকা, স্বর্ণালংকার ও অন্যান্য মালামাল লুটে নেয়। সাংবাদিক শাহনেওয়াজের মায়ের গলায় ছুরি ধরে এক ভরি ওজনের সোনার চেইনও ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। এসময় তাকে বেধড়ক মারধর করে হাত-পা ভেঙে ফেলে রেখে যায় তারা।
হামলার সময় পরিবারের অন্য সদস্যরা দৌড়ে পাশের একটি ঘরে গিয়ে আত্মরক্ষা করলেও, বৃদ্ধা মা দৌড়াতে না পারায় হামলাকারীদের হাতে নির্মমভাবে নিগৃহীত হন। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় গতকাল রাতে মোঃ কাউসার চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে ৩০ জন ও অজ্ঞাত আরো ২৫/৩০ জনের নামে থানায় লিখিত এজাহার জমা দেয় সাংবাধিক শাহনেওয়াজ।
সাংবাদিক শাহনেওয়াজ শাহ্ বলেন, “আমরা এমন বিভীষিকাময় পরিস্থিতির মুখোমুখি হবো, কখনো কল্পনাও করিনি। হঠাৎ শতাধিক মানুষ আমাদের বাড়িতে অনধিকার প্রবেশ করে ঘরের দরজা-জানালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে। আমাদের চোখের সামনেই তারা আমাদের সাধের ঘরবাড়ি তছনছ করে, মূল্যবান জিনিসপত্র, সঞ্চিত ধনদৌলত সব লুট করে নিয়ে যায়। শুধু তাই নয়, তারা আমার বৃদ্ধ মাকে নির্মমভাবে মারধর করে, যার ফলে তাঁর হাত-পা ভেঙে যায়। তিনি এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। আমরা অসহায় হয়ে শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেছি, কিছুই করতে পারিনি। এখন আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। প্রশাসনের কাছে আমাদের একটাই দাবি—দ্রুত এই ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক, যাতে আর কোনো পরিবার এভাবে নিগৃহীত না হয়।”
তার বড় ভাই মাকসুদুর রহমান শাহান শাহ জানান, “আমরা দরজা বন্ধ করে কোনো রকমে বাঁচি, কিন্তু আম্মাকে পেয়ে ওরা পৈশাচিকভাবে মারধর করে হাত-পা ভেঙে দিয়েছে। আমাদের ঘরবাড়ি, টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার সবকিছু লুটে নিয়েছে। কয়েকটি বোমা ফাটিয়ে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়।”

স্থানীয়রা জানান, হামলাটি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে কেউ সাহস করে কাছে যেতে পারেনি। হামলাকারীরা বাড়ি ঘিরে ফেলে, চারপাশে বেড়া দিয়ে ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে এবং মালামাল লুটে নেয়। ৩-৪ টি বোমা বিস্ফোরণের শব্দ তারা শুনেছেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সুমা খাতুন বলেন, “পরিস্থিতি এতটাই ভয়ানক ছিল যে আমি নিজেও কাছে যেতে পারিনি। পরে পুলিশকে ফোন দেই।”
ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিবারের সদস্যদের উদ্ধার করে। পুরো এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। সাংবাদিক পরিবারটি প্রশাসনের কাছে হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে।
বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, “এ ঘটনায় সাংবাদিক শাহনেওয়াজ বাদী হয়ে একটি লিখিত এজাহার দিয়েছেন। তদন্ত করে মামলা রেকর্ড করা হবে।”

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ