প্রিন্ট এর তারিখঃ মে ১৪, ২০২৫, ৫:১৯ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ মে ১৩, ২০২৫, ৮:৫২ এ.এম

তোফাজ্জল ইসলাম
সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালি ইউনিয়নের ১৫ জন সহজ সরল যুবক কে ইতালি পাঠানোর কথা বলে, জাল ভিসা ও টিকেট দেখিয়ে দেড় কোটি টাকা আত্মসাৎ করে দিলোয়ার হোসেন (৪২) নামে এক দালাল।
স্বপ্নের দেশ ইতালি পাঠানোর কথা বলে সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন থেকে ১৫ জনের কাছ থেকে ১০ লক্ষ করে মোট দেড় কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা দালাল দিলোয়ার হোসেন।
বিদেশে গিয়ে ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় টাকা দিয়েও দিনের পর দিন ঘুরে বিদেশ যেতে না পেরে গ্রামের এসব সাধারণ মানুষ এখন সর্বস্ব হারিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে পড়েছেন বিপাকে।
ভুক্তভোগীরা হলেন,
রাহাদ মিয়া(২০), তুহেল আহমদ(৩০), আফজাল হোসেন(২৬), রাইফুল ইসলাম(২৫), জুবেল আহমদ(৩০), রাব্বি হাছান (২১), ইসলাম উদ্দিন(২৬),ফারবেজ(২৮), কাউসার(২৩), সোহাস(২২), সারুয়ার (২৫), কবির (২৮), আইনুল হক(২৪),পাবেল (২২), সামছুদোহা (৩০) এছাড়া ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে অনেক ভুক্তভোগী।
ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জামালগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি গ্রামের ১৫ জন মানুষ কেউ জমিজমা, স্বর্ণালংকার, গরু-ছাগল বিক্রি ও ঋণ করে
একই জেলার গৌরারং ইউপির লালপুর গ্রামের দিলোয়ার হোসেন নামে এক দালালকে টাকা দেন।
কয়েক মাসের মধ্যে বিদেশে নেওয়ার কথা থাকলেও দুই বছরের বেশি সময় ধরে দিনের পর দিন ঘুরান। সম্প্রতি ফ্লাইটের ভুয়া টিকিট দেখিয়ে একে জনের কাছ থেকে কয়েক ধাপে নগদ ও ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিং মাধ্যমে ১০ লাখ করে টাকা নেন দিলোয়ার ও তার বাবা তহুরুল ইসলাম তহুর (৬৫) এবং তার সহোদর তিন ভাই মোঃ মনোয়ার হোসেন (৩৬), মোঃ রেজাউল করিম (২৯),সারোয়ার হোসেন (২৬)।
মামলার সূত্র থেকে জানা যায় দিলোয়ার তার নিজের ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংক নাম- DILUAR HUSSAIN
একাউন্ট নাম্বার - 2921100004461 এবং এজেন্সি নাম বাঙ্গিয়ে MS RM Enterprise নামে আরেক একাউন্ট নাম্বার 7017740010803 হতে ১৫ জনের কাছ থেকে প্রায় ৪০ লাখ টাকা নিয়েছেন এবং বাকি টাকাগুলো নগদ দালালের বাবা- মা ও তার সহোদর ভাইদের কাছে দিয়েছেন। এসময় দালাল দিলোয়ারের স্ত্রী এবং তার মা ও উপস্থিত ছিল।
এরপর বিদেশে পাড়ি জমানোর আশায় বাড়ি থেকে ঢাকায় গেলে তারা জানতে পারে টিকেট ও ভিসা ছিল ভুয়া। এরপর থেকেই নয়ছয় শুরু করে ওই দালাল। এদিকে বিদেশ যেতে না পেরে ঋণের চাপে অনেকই হয়েছেন বাড়ি ছাড়া।
বারবার যোগাযোগ করার পর এখন দিব তখন দিব বলে দিন মাস বছর চলে যায়।
এমতাবস্থায় সামাজিক ভাবে সালিশ ডাকলে সালিশে সাড়া দেয় এই দালালও তার বাবাসহ তিন ভাই। সালিশে উপস্থিত ভীমখালি ইউপির চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান ও গৌরারং ইউপির চেয়ারম্যান সৈকতের সামনে তারা এসব টাকা নিয়েছে বলে স্বীকার করে এবং তাদের বিদেশ পাঠাবে বলে সময় নেয় আর নিতে না পারলে সব টাকা ফেরত দিব বলে জানায়।
এ ব্যাপারে সততা যাচাইয়ের জন্য গৌরারং ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান,আমাকে জামালগঞ্জের নোয়াগাঁও গ্রামের লিটন মিয়া ও ভীমখালি ইউপির চেয়ারম্যান বিষয় টি অবগত করেছে। আমি সবার সাথে যোগাযোগ করে সালিশের ব্যবসৃথা করলে দালাল দিলোয়ার দেড় কোটি টাকা নিয়েছে এই বিষয় টি স্বীকার করে এবং চার মাসের মধ্যে সব টাকা ফেরত দিব বলে সালিশে কথা দেয়। পরে সে আর টাকা দেয় নি সালিশ অমান্য করেছে।
ভীমখালি ইউপি চেয়ারম্যান জানান- আমার ইউনিয়নের ১০ জন ভুক্তভোগীর পারিবারিক অবস্থা দেখে আমি নিজ থেকে গৌরারং ইউপির চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করে সালিশের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করি। তবে দালাল দিলোয়ার তা অমান্য করে।
কয়েক মাস পর যোগাযোগ করলে সে বিভিন্ন হুমকি দমকি দেয় এমন কি প্রাণে মারার হুমকি দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। তারপর নিরুপায় হয়ে তারা আইনের আশ্রয় গ্রহন করেন ভুক্তভোগীরা। তারা গত একমাসে পাঁচ টি অভিযোগ করেন, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত,সদর সুনামগঞ্জে
বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন ২০১৩ এর ৩১(ক)(খ) (গ) (ঘ)/৩৬ তৎসহ দঃবিঃ ৪০৬/৪২০/৩৪/৫০৬(১) ধারা।
মামলায় দিলোয়ার হোসেন কে ১নং আসামি করে ধারাবাহিক ভাবে তার সহোদর তিন ভাই মনোয়ার হোসেন, রেজাউল করিম ও সারোয়ার হোসেনকে ২নং,৩নং ও ৪নং আসামি করে তাদের সর্ব পিতা - তহুরুল ইসলাম তহুর কে ৫ নং আসামি এবং দালাল দিলোয়ারের সহধর্মিনী মোছাঃ নাজমা আক্তার ( লাভলি) (৩৬)কে ৬নং আসামি করে, দালাল দিলোয়ারের মাতা ছালেহা বেগম (৬০)কে ৭ নং আসামি করে, সুনামগঞ্জ কোর্টে মামলা দায়ের করা হয়।বাকি চারটা মামলায় ও একই ভাবে আসামি শনাক্ত করা হয়েছে।
নোয়াগাঁও গ্রামের ভুক্তভোগী রাহাদের পিতা লিটন মিয়া বলেন, বিদেশ যাওয়ার জন্য দালাল দিলোয়ার হোসেন কে টাকা দিয়ে অনেকই প্রায় ২ বছর থেকে ঘুরছি। দিলোয়ার বার বার আমাদের আশা দিয়েও বিদেশ নিয়ে যায়নি আমার পোলাডা কে। আমি নিজে দিলোয়ার দালালের বাচ্চাকে ঋণ করে, গরু বিক্রি করে কয়েক ধাপে ১০ লাখ টাকা দিয়েছি। সম্পূর্ণ টাকা নেওয়ার পর এখন সে আমার ছেলেকে জাল ভিসা ও টিকেট দিয়ে ঢাকা থেকে ঘুরিয়ে আনে,আর কোনো ব্যবস্থা করে নি। ঋণের টাকা কিভাবে দেব এই নিয়ে খুবই বিপদে আছি।দিন দিন ঋণের পরিমান বেড়ে যাওয়াতে আমি ও আমার পরিবার পরিজন মৃত্যুর মুখে এসে দাড়িয়েছি। আমি খুব অসুস্থ আমার আকুল আবেদন সরকার যে আমার বিচার করে দেয়।
খালেক মিয়া নামে আরেক ভুক্তভোগীর বাবা বলেন, ১৭ লাখ টেকা দিয়ে ইতালিতে পৌছানোর চুক্তি ছিল,আমরা ১০ লাখ করে দিয়েছি জায়গায় গেলে পরে বাকি টাকা দিব। তবে আমাদের কে এই দালাল প্রতারণা করে ভুয়া ভিসা ও টিকেট হাতে ধরিয়ে দেয়। পরে ঢাকা গিয়ে আমরা ফিরে আসি এর পর থেকে আমাদের সাথে নয়ছয় শুরু করে।আমরা যারা বিদেশ যাওয়ার জন্য ঋণ করে টাকা দিছি তাদের মধ্যে অনেকেই মধ্যবিত্ত,মানসম্মানের ভয়ে বাড়িঘর বিক্রি করে রাস্তায় থাকি তবুও ঋণ শেষ হয়নি। আমারা সুবিচার চাই সরকারের কাছে।
ভুক্তভোগী আফজাল হোসেন বলেন, জমি, মায়ের স্বর্ণালংকার, গরু-ছাগল বিক্রি করে বিদেশ যাওয়ার আশায় টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন বেঁচে থাকব না মরে যাব কিছুই বুঝতে পারছি না। আমরা চাই সরকার আমাদের টাকা ফিরিয়ে দিতে দ্রুত প্রায়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে এই দাবি জানায়।
এ বিষয়ে দিলোয়ার হোসেনের নামে ওই দালালের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টায় তার বাসায় পাড়ার মানুষ জানায় গত কয়েক মাস যাবত সে বাড়ি আসে না কোথায় থাকে তা ও কেউ জানেন না। মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার ব্যবহার-কৃত নাম্বার টি বন্ধ দেখায়।
বাদী লিটন মিয়ার মামলার সুনামগঞ্জ সদর থানার তদন্ত অফিসার পুলিশ পরিদর্শক মনিবনের কাছে মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলা টি আমি তদন্ত করেছি, ব্যাংকের প্রমাণগুলো যাচাই করে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করব।