প্রতিনিধি 4 September 2025 , 4:06:49 প্রিন্ট সংস্করণ
গাইবান্ধা প্রতিনিধি
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ-রংপুর আঞ্চলিক সড়কের পাশে রামদেব দ্বি-মূখী উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি একদিকে জরাজীর্ণ টিনের চালার ভবন, অন্যদিকে একতলা বিল্ডিং। বিদ্যালয়ের মাঠ চাষাবাদের জন্য বর্গা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে বিদ্যালয় ঘরের সামনেই শিক্ষার্থীদের ছোটাছুটি করতে হচ্ছে। মাঠে ধান চাষ হওয়ায় খেলাধুলার সব সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের বারান্দার সামনে কয়েকজন ছেলে-মেয়ে ছোটাছুটি করছে। আর বাকিরা বারান্দায় ও ক্লাসরুমে দাঁড়িয়ে ওদের ছোটাছুটি দেখছে। পাশের প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষ তালা বদ্ধ। আর বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকরা একটি কক্ষে বসে আছেন।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৬ সালে উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের রামদেব গ্রামে ১৫০ শতক জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় বিদ্যালয়টি। পরে ৮০ দশকে বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত করা হয়। পুরাতন টিনসেড ভবনটি জরাজীর্ণ হওয়ায় ২০১৩ সালে শিক্ষা প্রকেীশল অধিদপ্তর একতলা একটি ভবন নির্মাণ করে দেন। আশেপাশের ৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। বর্তমানে প্রায় ৪০০ জন শিক্ষার্থী এখানে পড়াশোনা করছে। শিক্ষকসহ সর্বমোট স্টাফ আছেন ২৩জন। বিদ্যালয়টির সামনের মাঠের সাড়ে তিন জমি বিঘা বর্গা দেওয়ায় হয়েছে। কাকে কত টাকা বা কিসের বিনিময়ে এই জমি বর্গা দেওয়া হয়েছে তা জানা যায়নি। বিদ্যালয়ের ঘরের সামনের ফুট দশেক জায়গা চাষ করা হচ্ছে ধান।
বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেনির শিক্ষার্থী শাহানাজ আক্তার, লামিয়া খাতুন,শেফালী আক্তার বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ দখল করে ধান ও ঘাস চাষ করছে। যা থেকে প্রধান শিক্ষক বছরের হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তাদের অভিযোগ, বিদ্যালয়ে মসজিদ নির্মাণ করার কথা বলে প্রধান শিক্ষক শ্রেণী ভেদে প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে নিয়ে মসজিদ নির্মাণ না করেই হাজার হাজার টাকা আত্মসাৎ করে।
শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, আমরা এর বিচার চাই, কেন স্কুল মাঠটিতে ধান চাষ করা হয়? এমন প্রশ্ন তাদের। শিক্ষার্থীরা বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই সামনের জায়গাটায় পানি উঠে। আমাদের ক্লাসেই বসে থাকতে হয়।
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র মেহেদী নাজমুল হুদা বলেন, এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে আমারা এলাকাবাসি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছি কিন্তু কোন কাজ হয়নি। দিনদিন প্রধান শিক্ষকের এমন অশুভ কান্ডে আমরা হতবাগ।
স্থানীয়রা জানান, প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বসুনিয়ার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ আমরা এলাকাবাসি মানববন্ধন করেছি, কিন্তু প্রধান শিক্ষকের টনক নড়ে না।
এলাকাবাসী আউয়াল মিয়া ও মহিদুল ইসলাম বলেন, স্কুলের পাশে একটি ডাকঘর ছিল প্রধান শিক্ষক তা ক্ষমতার দাপটে উচ্ছেদ করে। এতে করে এলাকার লোকজন চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।
বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেনির শিক্ষার্থীর অভিভাবক মহিদুল ইসলাম বলেন, মাঠে ছেলেমেয়েদের খেলাধুলা করার কথা। কিন্তুসেখানে ধান চাষ হচ্ছে। আশপাশে আর স্কুল না থাকায় আমরা বাধ্য হয়ে এখানে বাচ্চা পড়াচ্ছি।
বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক বদিয়ার রহমান বলেন, আমার এখানে আসা বেশিদিন হলো না। আসার পর থেকেই দেখছি বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে ধান চাষ হচ্ছে। বিষয়টি ম্যানেজিং কমিটি ও প্রধান শিক্ষক জানেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বসুনিয়া বলেন, আমার আগে যে প্রধান শিক্ষক ছিলেন তিনি ওই মাঠের জমিটি বন্দক রাখেন। এখনও ওই অবস্থায় আছে। বর্তমান প্রধান শিক্ষক ওই বিদ্যালয়ে ২০০৯ সাল থেকে কর্মরত আছেন, এতদিনেও কোন পদক্ষেপ নেননি কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বন্ধকের টাকা ম্যানেজ না হওয়ায় ওই জমি ছাড়িয়ে নেয়া যায়নি। টাকার ব্যবস্থা হলে জমিটি ছাড়িয়ে নিয়ে শিক্ষার্থীদের খেলার জন্য ব্যবস্থা করা হবে জানান তিনি।
এ বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার বেলাল হেসেন বলেন, খেলার মাঠে ধান চাষ করা হয়েছে এমন কোন অভিযোগ পাইনি, অভিযোগ পেলে ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।