নড়াইল প্রতিনিধি।।
নড়াইলের লোহাগড়ায় স্ত্রী সন্তান থাকার পরও দীর্ঘদিন ধরে গোপনে এক নারীকে বিবস্ত্র অবস্থায় দেখার বিকৃত নেশায় পড়েন সবুজ শেখ (৩৫) নামের এক যুবক। এ ঘটনা দেখে ফেলায় সে নির্মম ভাবে হত্যা করেন সোয়েবুর রহমানকে। রোববার (১০ আগস্ট) রাতে সময় সংবাদকে এ ঘটনার রোমহষর্ক বর্ণনা নিজের মুখেই দেন সুবজ।
অভিযুক্ত সবুজ বলেন, ‘তার (সোয়েব) সঙ্গে আমার শত্রুতা ছিল না। একটা মেয়েকে উলঙ্গ অবস্থায় দেখতেছিলাম, সে সময় আমাকে দেখে ফেলে। আমি তার কাছে মাফ ও চাইছিলাম। এটাও বলছিলাম কাউকে বইলেন না, আমি আর জীবনে এমন অপরাধ করব না। কিন্তু সে বলছিল গ্রামের লোকজনকে ঢাকবে। সে কারণে তাকে গলা টিপে (শ্বাসরোধে) হত্যা করি। পরে গলায় গামছা পেঁচিয়ে টেনে পুকুরের কচুরিপানার মধ্যে নিয়ে ঢেকে রাখি।’
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মাইট কুমড়া গ্রামের মৃত ইউনুস খানের ছেলে সোয়েবুর রহমান খান (৪৬) হত্যার ঘটনায় জড়িত সবুজ শেখ নামের যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ।
রোববার (১০ আগস্ট) রাতে লোহাগড়া থানার হলরুমে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শরিফুল ইসলাম। গ্রেফতারকৃত সবুজ শেখ লোহাগড়া উপজেলার কালনা গ্রামের মৃত আহাদ শেখের ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, গত বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাত ১০ টার দিক সোয়েব বাড়ি থেকে বের হয়ে আর বাড়িতে ফেরেননি। পরদিন শুক্রবার (৮ আগস্ট) বেলা ১ টার দিকে মাইটকুমড়া গ্রামের কচুরিপানায় পূর্ণ একটি পুকুরের তার মরদেহের খোঁজ পেয়ে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। খবর পেয়ে লোহাগড়া থানা পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে পাঠান।
পুলিশ আরও জানায়, হত্যাকাণ্ডের পর ছায়া তদন্ত শুরু করেন লোহাগড়া থানা পুলিশ। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে শনাক্ত করে রোববার বিকালে উপজেলার কালনা গ্রামের মৃত আহাদ শেখের ছেলে সবুজ শেখকে আটক করেন পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার দেয়া স্বীকারোক্তিতে নিহত সোয়েবুরের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি অভিযুক্তের বাড়ি থেকে উদ্ধার করেন। হত্যার পর মরদেহ লুকিয়ে রাখতে অভিযুক্তের সঙ্গে থাকা গামছা দিয়ে গলায় পেচিয়ে পাশের পুকুরে টেনে নিয়ে যায় এবং পুকুরের কচুরিপনার মধ্যে লুকিয়ে রাখেন। নিহত সোয়েবের কাছে থাকা মোবাইল ফোনটি নিয়ে ওই রাতেই সটকে পড়েন অভিযুক্ত। আর হত্যার কাজে ব্যবহৃত গামছাটি কালনা মধুমতি নদীর ঘাটে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পানিতে ফেলে দেন সবুজ।
নিহতের স্ত্রী রিক্তা বেগম অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার স্বামীর মৃত্যুর পর এই সবুজ বৃষ্টির মধ্যে নিজে কবর খুঁড়ছে, লাশ মাটি দিছে। ভাবতে ও পারছি না সে আমার স্বামীকে নির্মমভাবে মারছে। আমাকে যে বিধবা করছে, আমার সন্তানদের এতিম করার পেছনে সবুজ ছাড়াও যদি আর কেউ জড়িত থাকে আমরা চাই তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।
লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শরিফুল ইসলাম আরও বলেন, সোয়েব হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী বাদী হয়ে রোববার রাতে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় গ্রেফতার সবুজকে আদালতে সোমবার (১১ আগস্ট) হাজির করা হবে।