আন্তর্জাতিক

বিমান বিধ্বস্তের ভয়াবহতা: ইউনিফর্ম খুলে মা-ছেলের মরদেহ ঢাকলেন দুই সেনা সদস্য, সেনাবাহিনীর মানবিকতায় মুগ্ধ দেশ!

  প্রতিনিধি 25 July 2025 , 1:11:36 প্রিন্ট সংস্করণ

মাহতিম আহমেদ রাজা: বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের কাছে দিয়াবাড়ী আর্মি ক্যাম্পের দুই সেনা সদস্য তাঁদের ইউনিফর্ম খুলে এক মা ও তাঁর সন্তানের মরদেহ ঢেকে দিয়ে বিরল মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এই ঘটনার ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই দেশের জনগণ সেনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও প্রশংসা প্রকাশ করেছেন। অনেকে এটিকে দায়িত্ব, মানবিকতা ও দক্ষতার অনন্য উদাহরণ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

মানবিকতার এক অনন্য উদাহরণ

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে এসে দিয়াবাড়ী সেনা ক্যাম্পের মেজর মেহেদী হাসান জানান, দুর্ঘটনার পরপরই তাঁরা প্রথম রেসপন্স টিম হিসেবে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছান। স্পটে প্রবেশ করে তাঁরা একটি মা ও তাঁর ছেলের মরদেহ দেখতে পান। মেজর মেহেদী ও তাঁর সঙ্গে থাকা সৈনিক আশিক তাৎক্ষণিকভাবে নিজেদের গর্বের ইউনিফর্ম খুলে মরদেহ দুটি ঢেকে দেন। মেজর মেহেদী বলেন, “আমাদের পোশাকের চেয়ে ওই মা-ছেলের মরদেহের সম্মান আমাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছিল।”

এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে রোমান রনি নামের একজন মন্তব্য করেন, “এটা শুধু ইউনিফর্ম না। এটা সৈনিকদের শরীরের চামড়া, পবিত্র পোশাক। মানবতার পথেই রয়েছে আমাদের সেনাবাহিনী।” মোহাম্মদ ইব্রাহিম নামের একজন লিখেছেন, “এ জন্যই বলা হয়, সেনাবাহিনী বাংলাদেশের গর্ব।”

দ্রুত উদ্ধার তৎপরতা ও আহতদের পাশে সেনাবাহিনী

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন এবং দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকা এলাকাটি থেকে আহতদের দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সেনা সদস্যদের মানবিকতা ও সাহসিকতা বিশেষভাবে চোখে পড়ে। একজন শিক্ষার্থী ক্লাসরুমে আটকে পড়ে আগুনের তাপে অসুস্থ হয়ে পড়ছিল। বিষয়টি এক সেনা সদস্যের চোখে পড়ার পর তিনি বালতির পানি এনে ছাত্রটির গায়ে ঢালেন এবং হাতুড়ি দিয়ে জানালা ভেঙে তাকে জীবিত উদ্ধার করেন।

মেজর মেহেদী আরও জানান, দুর্ঘটনার দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যেই তাঁরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। আনুমানিক সন্ধ্যা ৭টা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত উদ্ধারকাজ অব্যাহত থাকে। তাঁদের মূল ফোকাস ছিল উদ্ধার, কতজনকে উদ্ধার করতে পেরেছেন সেই হিসাব না রেখে যাদের সামনে পেয়েছেন, তাদেরই নিরাপদে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। স্কুলের বারান্দার গ্রিল ভেঙে হতাহতদের নামিয়ে আনা হয়। এই উদ্ধারকাজে ২৫ জনের মতো সৈনিক অসুস্থ হয়ে পড়েন, যাদের মধ্যে বর্তমানে ১১ জন ঢাকা সিএমএইচে চিকিৎসাধীন আছেন। তিনি শিক্ষার্থীদের সহযোগিতারও প্রশংসা করেন।

সেনা বিশেষজ্ঞদের প্রতিক্রিয়া

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. জাহেদুর রহমান এই উদ্ধার তৎপরতা সম্পর্কে বলেন, “দেশের সব ক্রান্তিলগ্নে সেনাবাহিনী জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিমান দুর্ঘটনায় সেনাবাহিনী অত্যন্ত দরদের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ দেখিয়েছে।” তিনি মেজর মেহেদী এবং সৈনিক আশিকের ইউনিফর্ম খুলে মা ও সন্তানের মৃতদেহ ঢেকে দেওয়ার ঘটনাকে সৈনিকের সবচেয়ে প্রিয় ও গর্বের বিষয় হিসেবে উল্লেখ করে তাঁদের এই মানবিকতাকে সাধুবাদ জানান।

মেজর জেনারেল (অব.) কাজী ইফতেখার-উল-আলম এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাকে “হৃদয়বিদারক” আখ্যা দিয়ে বলেন, “যে পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের হারিয়েছে, যে শিক্ষকরা তাঁদের শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে নিজেদের জীবন দিয়েছেন, সেই সব পরিবারের, সেই শিক্ষকদের শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়।” তিনি সেনা সদস্যদের দ্রুত উদ্ধার তৎপরতা এবং আহতদের হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করার প্রশংসা করেন, তবে উদ্ধারকাজে উত্সুক জনতার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির বিষয়টিও উল্লেখ করেন।

এই মানবিক দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণিত হলো, দেশের সংকটময় মুহূর্তে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সব কিছু ছাপিয়ে মানবতার নিবেদিত প্রাণ।

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ