অন্যান্য

বিলডাকাতিয়া পানির নিচে: ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে আমন ক্ষেত

  প্রতিনিধি 29 October 2024 , 8:11:11 প্রিন্ট সংস্করণ

ডুমুরিয়া (খুলনা)প্রতিনিধি

বিলডাকাতিয়া (মাঠ) এখন পানির নিচে। ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে আমন ধানের ক্ষেত। গোয়াল প্রায় এক ফুট পানির নিচে। গরু বের করার কোনো জায়গা নেই। ভুসি, কুঁড়া, ফিডের দাম বেড়েছে। অতিবৃষ্টির কারণে বাজারে গরু-ছাগলের দাম কমে গেছে। কথাগুলো ডুমুরিয়ার রংপুর গ্রামের খামারি প্রকাশ কুমার বিশ্বাসের। তিনি বলছিলেন, ‘গরু-ছাগল নিয়ে মহাযন্ত্রণায় আছি। না পারছি বিক্রি করতে, না পারছি ঠিকমতো খাবার দিতে।’
দুই মাসের টানা বৃষ্টিতে খুলনার ডুমুরিয়ায় প্রকাশ কুমারের মতো খামারিরা সংকটে পড়েছেন। তলিয়ে আছে দেড় শতাধিক গ্রাম। এতে তাদের গোয়ালে হাঁটুপানি। গবাদি পশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। বাজারে খড় ও মাঠে ঘাস মিলছে না। বাধ্য হয়ে লোকসানে অনেকে পশু বিক্রি করে দিচ্ছেন। অনেকে ডিঙি নৌকায় করে উঁচু স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন। খাদ্য সংকটে বিল-ডোবার কচুরিপানা ও লতাপাতা খাওয়াচ্ছেন তারা। চড়া দামের বাজার থেকে কুঁড়া-ভুসি কিনছেন অনেকে।
উপজেলার শাহাপুর বাজারে কথা হয় খড় ব্যবসায়ী মকলেচুর রহমানের সঙ্গে। খুলনা এবং যশোর জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে খড় কিনে এনে তাঁর বাড়ি কুমরাইল গ্রামে রাখেন। পরে তা বিক্রি করেন। তিনি বলেন, বেশি দাম দিয়েও এবার খড় মিলছে না। কিছু স্থানে পাওয়া গেলেও দাম চড়া, পরিবহন খরচ বেশি। বাধ্য হয়ে আপাতত ব্যবসা বন্ধ রেখেছেন।
গত ২৭ আগস্ট থেকে টানা বৃষ্টিতে বোরো ধানের খড় পচে গেছে। নষ্ট হয়েছে আমন ক্ষেত। সে কারণে এমন সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষক ও খামারিরা। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্ষালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ডুমুরিয়ায় দুগ্ধ খামার আছে ২৩৮টি। গাভির সংখ্যা ১ হাজার ৫৫২। পারিবারিকভাবে ২ লাখ ১৭৫টি গরু পালন করা হয়। ৯৬টি খামারে
ছাগল আছে ৮৯ হাজার ৬৫৮টি। ২৪টি খামারে আছে ৩৫ হাজার ৩৪৭ ভেড়া। মহিষ ৮৯ আর ৩৩২টি ঘোড়া রয়েছে।
এসব প্রাণীকে আট মাস বোরো ধানের খড় ও চার মাস আমন ধানের খড় খাওয়ানো হয়। এবার বোরো মৌসুমের খড় পচে গেছে। আর আমনের ক্ষেত ডুবে আছে। ফলে সর্বত্র খড়ের সংকট দেখা দিয়েছে। গত সোমবার রংপুর, কৃষ্ণনগর, আমভিটা, খড়িয়া, বিলপাবলা, মুজারখুটা, মাগুরাঘোনা, আরশনগর এবং সদরের কোথাও অস্থায়ী খড়ের বাজার দেখা যায়নি।
মুজারখুটা গ্রামের খামারি পরিমল মণ্ডলের ভাষ্য, হাটবাজার ও গ্রামে আগে অস্থায়ীভাবে খড় বিক্রি হতো। এখন কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে গরু-বাছুর নিয়ে বিপদে আছেন। রংপুর ইউনিয়নের রামকৃষ্ণনগর গ্রামের মহিতোষ মণ্ডলকে দেখা যায়, ডিঙি নৌকায় খাল থেকে কচুরিপানা তুলছেন। তিনি বলেন, ‘আমার তিনটি গরু সম্বল। হাতে টাকা নেই, খড় কিনে কেমনে খাওয়াই? এ জন্য কচুরিপানা নিয়ে খেতে দেব।’
মাগুরাঘোনা গ্রামে আব্দুল হামিদের কথায়, ‘খেয়ে না খেয়ে, কষ্ট-মষ্ট করে দুটি গরু পালছিলাম। গরুকে খাওয়াব, খড় মিলছে না। মাঠ পানিতে একাকার। গোয়াল তলিয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে আড়াই লাখ টাকা দামের দুটি গরু ২ লাখ টাকায় বিক্রি করেছি।’
রংপুর ইউনিয়নের নতুনসঙ্গ গ্রামের হরিচান মল্লিকের ৪০টি ছাগল রয়েছে। তবে পশুর ঘর তলিয়ে গেছে। বাড়িতে ছাগল রাখার জায়গা নেই।
রয়েছে তীব্র খাদ্য সংকট। ছোলার ভুসি কেজিপ্রতি ৫৬ টাকা। কুড়া বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা কেজি। মাঠে ঘাস নেই, শুধু পানি। এ কারণে উঁচু আশ্রয়স্থল খুঁজতে ডিঙি নৌকায় করে বের হন তিনি। একই ধরনের কথা বলেন সদরের ভেড়ার খামারি শংকর রাহাসহ কয়েকজন।
গরুর প্রধান খাবার ঘাস ও খড় উল্লেখ করে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আশরাফুল কবির বলেন, পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আগের মতো মাঠে ঘাস নেই। খামারিদের মজুত রাখা বোরোর খড় নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে সংকট দেখা দিয়েছে। গোখাদ্যের দামও চড়া থাকায় খামারিরা বিপদে আছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আল-আমিন বলেন, পাউবোর বেড়িবাঁধের বাইরের অংশ পলিতে ভরাটের কারণে উঁচু হয়ে গেছে। ভেতরটা নিচু। এতে বৃষ্টির পানি সরতে পারছে না। পানি নিষ্কাশনে গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্থানে সেচ পাম্প বসানো হয়েছে। দ্রুত পানি কমে যাবে বলে আশা তাঁর।

Author

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ