চব্বিশের সেই রক্তাক্ত জুলাই আজ ইতিহাস, কিন্তু সেই ইতিহাসের শহীদ ও আহতদের অনেকেই রয়ে গেছেন তালিকার বাইরেই। ঠিক এক বছর আগে আজকের দিনে শুরু হয় বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী ছাত্র-গণআন্দোলন, যেটি পতন ঘটায় দীর্ঘ ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের।
স্টাফ রিপোর্টার
আন্দোলনে প্রাণ দেন শত শত তরুণ, আহত হন বিশ হাজারের বেশি। জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত তাদের তালিকায় আহত ১৫,৩৯৩ জন এবং শহীদ ৮৫৪ জন। কিন্তু প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি। ঢাকার বিভিন্ন কবরস্থানে বেওয়ারিশ মরদেহ দাফনের খবর মিলেছে। এখনো অনেক শহীদের পরিচয় অজানা।
ঢাকা মেডিকেল মর্গে পড়ে আছে ৬টি মরদেহ—অজ্ঞাত পরিচয়ের। এখনও চিকিৎসাধীন আছেন শতাধিক ‘জুলাই যোদ্ধা’। চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা। এমআইএস সার্ভারে নাম অন্তর্ভুক্ত বন্ধ থাকায় অনেক আহত আবেদন করেও ভাতা পাচ্ছেন না।
আন্দোলনের বিশেষ সেলের যুগ্ম সচিব মো. মশিউর রহমান জানান, পূর্ণ তালিকা চূড়ান্ত করতে আরও সময় লাগবে। তবে গেজেট আকারে অল্পসংখ্যক শহীদের নাম শিগগিরই প্রকাশ করা হবে। আগামী আগস্ট থেকে অন্তত কিছু আহত ও শহীদ পরিবারকে ভাতা দেয়া শুরু হতে পারে, জুলাই মাস থেকে কার্যকর ধরা হবে।
এদিকে শহীদদের স্মরণে ৫ আগস্ট আয়োজন করা হচ্ছে কেন্দ্রীয় স্মরণসভা, যেখানে বৃক্ষরোপণ, স্মৃতিফলক স্থাপন, ক্যাম্পেইন ও পুনর্বাসনের কর্মসূচি চালু থাকবে।
---
🔥 রক্তে লেখা এক বিপ্লবের বছরপূর্তি: আন্দোলন, গণজাগরণ ও সরকারের পতন
২০২৪ সালের ২ জুলাই শুরু হয় "বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন"। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিএসসি থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন অল্প সময়েই সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। ‘বাংলা ব্লকেড’, ‘গায়েবানা জানাজা’, ‘দ্রোহ যাত্রা’—প্রতিদিনই একেকটি অধ্যায় রচনা করে এই অভ্যুত্থানের।
১৪ জুলাই শেখ হাসিনার বিতর্কিত মন্তব্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলনে। এরপর সংঘর্ষ, হত্যা, কারফিউ, সেনা মোতায়েন, যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা—সবই ঘটে যায় দিনের ব্যবধানে। একের পর এক শহীদ হন তরুণরা। আন্দোলন ঠেকাতে সরকার নানা পদক্ষেপ নেয়—গ্রেপ্তার, গুম, হেফাজতে নির্যাতন।
শেষ পর্যন্ত ৫ আগস্ট, সেনাপ্রধানের ভাষণ এবং সর্বশেষ প্রচণ্ড জনচাপের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগে বাধ্য হন। ওই দিন ঢাকার রাজপথে লাখো মানুষের বিজয় মিছিল নামে, বিজয় উৎসবে মুখর হয়ে ওঠে রাজধানী।