প্রতিনিধি 1 September 2025 , 3:03:37 প্রিন্ট সংস্করণ
উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় জমে থাকা বিভিন্ন হিমবাহ এশিয়া অঞ্চলের ১৪০ কোটির বেশি মানুষের পানির প্রধান উৎস। হাই মাউন্টেন এশিয়া বা এশিয়ার উচ্চ পর্বত এলাকা তৃতীয় মেরু নামে পরিচিত।
আর্কটিক ও অ্যান্টার্কটিকার বাইরে বিশ্বের বৃহত্তম হিমবাহ বরফের মজুত ধারণ করে এই এলাকা। এই অঞ্চলের হিমবাহ হ্রদ এবং নদীকে পানি সরবরাহ করে, যা দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার ১৪০ কোটির বেশি মানুষকে মিঠাপানি সরবরাহ করে।
এত দিন বিজ্ঞানীরা ধারণা করতেন, বর্ষাকালে হিমবাহে অতিরিক্ত বরফ জমা হয়ে তা বরফ গলা কমাতে সাহায্য করে। এক নতুন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, বর্ষার প্রভাবে হিমালয়ের মতো উঁচু পর্বতমালার হিমবাহে উল্টো ঘটনা দেখা যাচ্ছে। সেখানে আরও দ্রুত হিমবাহ গলছে।
যুক্তরাষ্ট্রের উটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অনুসারে, উচ্চ পর্বতে থাকা এশিয়ার বিভিন্ন হিমবাহ প্রতিবছর ২২ গিগাটনের বেশি বরফ হারাচ্ছে। এই বরফ থেকে প্রায় ৯০ লাখ অলিম্পিক সুইমিংপুলের সমান পানি আসে। উষ্ণায়নের প্রভাব হিমবাহের ক্ষয় করছে। নতুন গবেষণায় বলা হচ্ছে, দক্ষিণ এশীয় মৌসুমি বর্ষার কারণে এই অঞ্চলজুড়ে হিমবাহ গলনের ঘটনা বাড়ছে।
ভারত, নেপাল এবং বাংলাদেশের মতো দেশে বর্ষা এক আশীর্বাদ। কৃষি ও বাস্তুতন্ত্রের মূল উৎস নদীতে বর্ষাকালেই পানি আসে। বিজ্ঞানীরা আগে মনে করতেন, হিমালয় ও অন্যান্য পর্বতমালার হিমবাহের জন্য বর্ষাকাল ভালো। ভারী বৃষ্টিপাতের বদলে এ সময় তুষারপাত হলে তা হিমবাহের বরফের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।
নতুন গবেষণা প্রমাণ করেছে, বাস্তব পরিস্থিতি আরও জটিল।
বিজ্ঞানীরা নাসার গ্রেস মিশনের বিভিন্ন তথ্য ব্যবহার করেছেন। মধ্য ও পশ্চিম হিমালয় এলাকার হিমবাহ সাধারণত গ্রীষ্মেই বিকশিত হয়। গেল কয়েক বছরে বর্ষা মৌসুমে প্রচুর তুষারপাতের পরিবর্তে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়েছে। বৃষ্টির পানি বরফ গলার গতিকে আরও ত্বরান্বিত করে।
বর্ষার মেঘলা ও আর্দ্র আবহাওয়া বরফের ওপর একটি তাপমাত্রার আস্তরণ তৈরি করে। এতে সূর্যের আলো প্রতিফলিত হতে বাধা পায়। তখন বরফ আরও দ্রুত গলে যায়।
দক্ষিণ এশিয়ার উঁচু পর্বতমালা, যেমন কারাকোরাম, হিন্দু কুশ ও হিমালয়ের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এসব পর্বতকে থাকা বিভিন্ন হিমবাহ সাধারণত এশিয়ার পানির ট্যাংক নামে পরিচিত। বিভিন্ন বড় নদী পানির প্রধান উৎস এসব হিমবাহ। বিজ্ঞানী সোনম শেরপা বলেন, দক্ষিণ এশীয় মৌসুমি বায়ু মধ্য হিমালয়, পশ্চিম হিমালয় ও পূর্ব হিমালয়ে থাকা বিভিন্ন হিমবাহকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।
মৌসুমি বায়ুর সময় ও তীব্রতা পরিবর্তিত হচ্ছে বলে হিমবাহের বরফ ক্ষয়কে ত্বরান্বিত হতে পারে। এতে ভাটি এলাকায় পানির প্রাপ্যতা হুমকির মুখে পড়তে পারে। গবেষণার জন্য বিজ্ঞানীরা উন্নত স্যাটেলাইট ডেটা ও বায়ুমণ্ডলীয় মডেল ব্যবহার করেছেন। হিমবাহের ভর ও আবহাওয়ার ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, যেসব হিমবাহ বর্ষার প্রভাবে আছে, তা বর্ষা-নিরপেক্ষ অঞ্চলের হিমবাহের চেয়ে দ্রুত ভর হারাচ্ছে।
হিমবাহ গলার এই দ্রুতগতি আমাদের জন্য এক বড় অশনিসংকেত। যদি বিভিন্ন হিমবাহ এই হারে গলতে থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে বড় বড় নদীতে পানির প্রবাহ কমে যাবে।