যশোর অফিস
প্রায় ৫০ দিন ধরে হাটু পানিতে তলিয়ে আছে স্কুল আঙ্গিনা ও শ্রেণী কক্ষ। বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। একটু অসাবধানেই পিছলে পড়ছে পানিতে।
ক্লাস রুমে পানি। বাধ্য হয়েই ক্লাসের ভিতর বেঞ্চের মাচা বানিয়ে, বাড়ি উঠানে তাবু টানিয়ে কিংবা আশেপাশের অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গায় অস্থায়ী সেড তৈরি করে চলছে ভবদহ জলাবদ্ধ অঞ্চলের প্রায় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান ও পরীক্ষা কার্যক্রম।
যশোরের মনিরামপুর, অভয়নগর, কেশবপুর এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে ভবদহ অঞ্চল গঠিত। বছরের পর বছর এসব এলাকার প্রায় ১৫০টি গ্রাম বছরের ৪ মাস জলাবদ্ধ থাকে। ভারি বর্ষণে যশোরের মনিরামপুর ও অভয়নগর উপজেলার অর্ধশত গ্রামের প্রায় ২ লাখ মানুষ পানিবন্দী। এসব গ্রামের বেশিরভাগ ঘরবাড়ি, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
ভবদহ অঞ্চলে জলাবদ্ধতার কারণে অভয়নগর উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আসতে পারছে না ছাত্র-ছাত্রীরা। মাঠ ও শ্রেণিকক্ষে পানিতে পরিপূর্ণ। বিদ্যালয়ে আসা যাওয়ার রাস্তা ও চারপাশের বাড়ি-ঘর পানির নিচে। এ অবস্থায় উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণী কার্যক্রম পরিচালনা সঠিকভাবে সম্ভব হচ্ছে না।
অভয়নগর উপজেলায় মোট ১১৭ প্রাইমারি স্কুল রয়েছে। এর মধ্যে সুন্দলী ইউনিয়নের ১২টির মধ্যে সবকটিতেই এবং চলিশিয়া ইউনিয়নের ১১টি স্কুল পানির নিচে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সুন্দলী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও সড়াডাঙ্গি জুনিয়ার স্কুল পুরোপুরি পানিতে নিমজ্জিত।
পাশে সেড করে বা রাস্তায় কোনোমতে ক্লাস চলছে। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা থাকলেও ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতি কম।
জলাবদ্ধ এলাকার একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, বিদ্যালয়ে যাওয়ার রাস্তায় কোথাও হাটু পানি, কোথাও কোমর পানি। স্কুলের মাঠে হাটু পানি, কোথাও আবার স্কুলের ক্লাসরুমেও পানি। পানি ভেঙ্গে বাড়ি থেকে স্কুলে যেতে হচ্ছে।
মনিরামপুর উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের বয়ারখোলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা তনুজা মল্লিক বলেন, “শিক্ষার্থীদের বাড়ি-ঘরে পানি উঠেছে, বিদ্যালয়েও পানি। ক্লাসরুমে পানির কারণে বেঞ্চের মাচা বানিয়ে কোনোরকমে শ্রেণি কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
হাটগাছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সনজিত মন্ডল জানান, অতিবৃষ্টি ও উত্তরের পানির চাপের কারণে এ বছরেও বিদ্যালয়টি ডুবে গেছে।
সুজাতপুর উত্তরপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কর্মচারী সুমন বৈরাগী জানান, স্কুলে আসার রাস্তায় পানি, মাঠে পানি। ঝুঁকি জেনেও বাচ্চারা স্কুলে আসছে।
অভয়নগর উপজেলা শিক্ষা অফিসার শহিদুল ইসলাম বলেন, “শত প্রতিকুলতার মধ্যেও এখনো পাঠদান অব্যহত আছে। ভবদহের জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে এভাবেই ভোগান্তি পোহাচ্ছে মনিরামপুরের বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।”
তিনি বলেন, “উপজেলার সরকারি ও বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার অন্তত অর্ধশত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠ পানিতে তলিয়ে আছে। এতে করে সিংহভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখতে অথবা বিকল্প পন্থায় পাঠদান চালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।”
মনিরামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এএসএম জিল্লুর রশীদ জানান, উপজেলার কমপক্ষে ২৫টি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু মোতালেব জানান, উপজেলার ১৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ পানিতে তলিয়ে গেলেও বিকল্পভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।