স্কুলের পাশে একটি দোকানের বারান্দায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে কোনো রকমে ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছিলাম। তবে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি খুবই কম। মাত্র তিন-চারজন শিক্ষার্থী উপস্থিত হতো। তারা কাপড় ও বই আলাদাভাবে আনত। স্কুলে এসে কাপড় পাল্টানো লাগত।’ কথাগুলো যশোরের অভয়নগরের আড়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তপন কুমার মণ্ডলের। একই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী পাখি মণ্ডলের ভাষ্য, ‘স্কুলে আসতে পারছি না। সবখানে জল। স্কুলে যেতে কাপড়-বই ভিজে যায়।’ ভবদহের জলাবদ্ধতার কারণে এ বিদ্যালয়টির মতো অভয়নগর উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ২৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। পানিতে তলিয়ে থাকায় শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে পারছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভবদহের জলাবদ্ধতার কারণে এক মাস ধরে বিদ্যালয় মাঠে ও রাস্তায় পানি জমে রয়েছে। এ কারণে এলাকার মানুষের নৌকাই একমাত্র বাহন। স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে পানি নোংরা হয়ে গেছে।
এলাকায় পানিবাহিত রোগও দেখা দিচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। এতে চালানো যাচ্ছে না শ্রেণি কার্যক্রম। খেলাধুলা সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে তারা। ডুমুরতলা, বেদভিটা, আন্ধা, বলারাবাদ, দিঘলিয়া, ডহর মশিয়াহাটি, উত্তর ডহর মশিয়াহাটি, ডাঙ্গা মশিয়াহাটি, সুন্দলী, আড়পাড়া, সড়াডাঙ্গা জামতলা, সড়াডাঙ্গা ডহর মশিয়াটি, রাজাপুর, গোবিন্দপুর ময়নামতি, ফুলেরগাতী হরিশপুর ও হরিশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
এ ছাড়া সুন্দলী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, সুন্দলী সৈয়দপুর ট্রাস্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ডহর মশিয়াটি উত্তরপাড়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আন্ধা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ডুমুরতলা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ফুলেরগাতী হরিশপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সড়াডাঙ্গা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আড়পাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মশিয়াহাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ও জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে। মাঠে ও শ্রেণিকক্ষে পানি জমে থাকায় শিক্ষার্থীরা আসছে না।
বেদভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুর ইসলাম বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে মাঠে কোমর পর্যন্ত পানি থাকায় শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসে না। এতে ক্লাস করানো সম্ভব হচ্ছে না। আর সুন্দলী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌতম ধরের ভাষ্য, মাঠে কোমর সমান আর শ্রেণিকক্ষে এক থেকে দেড় ফুট পানি রয়েছে। শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশে স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কাশেম বলেন, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে কোমর পর্যন্ত পানি। তাই গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ করা হয়েছে। শুধু শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে যাতায়াত করছেন।
অতিবৃষ্টির কারণে ৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ও শ্রেণিকক্ষে পানি ওঠায় পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, পাঠদান ব্যাহত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে।