মরছে নদী, বাড়ছে ঘের-দখল: পানির জন্য হাহাকার, প্রকল্পে দুর্নীতির গন্ধ
রিপন হোসেন সাজু, মনিরামপুর (যশোর)
যশোরের মনিরামপুর উপজেলার ভবানিপুর গ্রামের ভবদহ এলাকায় এক সময়কার গর্ব ছিল পাকিস্তান আমলে নির্মিত শ্রী নদীর উপর বিশাল ২১, ৯ ও ৬ ভেন্ট বিশিষ্ট স্লুইসগেট। আজ সেই গেটের ছায়ায় নদী মরছে, কৃষি ধ্বংস হচ্ছে, আর জনপদ ডুবে আছে জলাবদ্ধতার বেদনায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভবদহের ২১ ভেন্টের গেটের উপর ১৩টি, ৯ ভেন্টের উপর ৫টি বড় মোটরপাম্প বসানো হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে ৪টি পাওয়ার পাম্প। নদী খননের নামে তোলা মাটি নদীতেই ফেলে রাখা হয়েছে, ফলে নদী রূপ নিয়েছে জলাবদ্ধ নালায়। বিশেষ করে ৯ ভেন্টের সামনে নদীর তলদেশ উঁচু হয়ে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করছে।
কপালিয়া ব্রিজের কাছে নদীর প্রস্থ ১০-১২ ফুট, গভীরতা ৪-৫ ফুট মাত্র। অনায়াসে লাফিয়ে পার হওয়া যায়। একই অবস্থা বরণী শশ্মান ঘাট ও রানায় পালপাড়া ব্রিজ এলাকায়ও। অথচ এই নদীপথ এক সময় ছিল ট্রলার চলাচলের উপযোগী।
এই নদী ও তার সাথে সংযুক্ত খালগুলো — মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী-হরি, আপারভদ্রা, হরিহর, বুড়িভদ্রা — যশোর জেলার মণিরামপুর, কেশবপুর, অভয়নগর ও যশোর সদরের বিশাল জলাবদ্ধ অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের মাধ্যম ছিল। ষাটের দশকে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি প্রতিরোধ ও কৃষির জন্য মিঠা পানি ধরে রাখতে নির্মাণ হয় ভবদহের স্লুইসগেট।
কিন্তু আশির দশকের পর থেকে পদ্মা নদীর প্রবাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় পলি জমে নদীগুলো দ্রুত ভরাট হতে শুরু করে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্তে ভবদহের স্লুইসগেট কার্যত বন্ধ রেখে মোটরের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এর ফলে জোয়ারে প্রবাহিত পলি নদীতেই জমে যায়।
নদীর দু’পাশে শুরু হয়েছে দখল ও মাছের ঘের স্থাপন। পাকা স্থাপনা তো বটেই, সরকারি আবাসন প্রকল্প পর্যন্ত বসেছে নদীর বুকে।
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক রনজিত বাওয়ালী বলেন, “পানি উন্নয়ন বোর্ড নানা ষড়যন্ত্রে জনপদকে জিম্মি করে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছে, তবে আমরা তা হতে দেব না।”
ডুমুরতলার শিবপদ বিশ্বাস জানান, “ভবদহ সমস্যার সমাধান হলে এক মহলের আয় বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে তারা সমাধানে আগ্রহী না।”
সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবীর জাহিদ বলেন, “টি.আর.এম. (Tidal River Management) ছাড়া ভবদহের জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। সরকারের প্রকল্পে অবিলম্বে টি.আর.এম চালু করতে হবে।”