নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, আওয়ামী লীগের বিগত ১৬ বছরের শাসন আমলে বেজপাড়া আজিমাবাদ কলোনি, গুলগুল্লার মোড়, মেইন রোড, বুনোপাড়া, পূজার মাঠ এলাকা ও পিয়ারী মোহন রোড এলাকায় দুর্বৃত্তদের দৌরাত্ম্য ছিলো সবচেয়ে বেশি। বেজপাড়া বুনোপাড়ায় জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পরিচয়ে আসাদুজ্জামান ওরফে বুনো আসাদের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে ওঠে। তরা বাড়ি নির্মাণে চাঁদাবাজি, মাদকের ব্যবসা, খুন খারাপি করতো। কমিউনিটি পুলিশিং কার্যাললেই চলতো বুনো আসাদের রাজত্ব।
কখনো সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ এবং কখনো জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের কর্মী হিসেবে সক্রিয় ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত দলীয় প্রতিপক্ষের হাতে খুন হয় বুনো আসাদ। যার জায়গা দখল করে প্রতিপক্ষরা।
স্থানীয়রা জানান, বেজপাড়া আজিমাবাদ কলোনি এবং গুলগুল্লার মোড় এলাকার খুনি, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত কয়েকজন সন্ত্রাসীকে লালন করে থাকেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথ। এরা হচ্ছে- মুজিবরের ছেলে পেচো, আলী আহমেদের ছেলে সেলিম, বাবলুর ছেলে খুরশিদ, পায়তারার ছেলে বচন এবং একই এলাকার ভাংড়ি লিটন। ২০১৭ সালের ২৮ অক্টোবর রাতে গুলগুল্লার মোড়ে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন ইমনকে গুলি চালিয়ে হত্যা করার অভিযোগ আছে এই সন্ত্রাসী গ্রুপের বিরুদ্ধে। এর আগে ওই সন্ত্রাসীদের মধ্যে খুরশিদ, পেচো, বচন ও সেলিম মেইন রোডের আলোচিত আবুল খায়েরের ক্যাডার হিসেবে কাজ করতো। বেজপাড়া বুনোপাড়ার বুনো আসাদ খুন হওয়ার বেশ কয়েক বছর আগে মেইন রোডে ভেড়া শাকিল নামে এক সন্ত্রাসী প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সেই সময় অভিযোগ ওঠে প্রতিপক্ষ হওয়ায় আবুল খায়েরের নির্দেশে খুরশিদ গং ভেড়া শাকিলকে গুলি করেছিলো। ওই ঘটনার পর খুরশিদ গং ছাড়াও আবুল খায়ের আত্মগোপন করেন। দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপনে থাকার পর র্যাব সদস্যরা আবুল খায়েরকে ঢাকা থেকে ধরে যশোরে আনেন। সূত্র জানায়, কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার পর কৌশলে আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে উঠাবসা করতে থাকেন আবুল খায়ের। বর্তমানে তিনি শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে আলোচিত আনিসুর রহমান লিটন ওরফে ফিঙে লিটনের গ্রুপে যোগদান করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ফিঙে লিটনের স্ত্রী ফাতেমা আনোয়ারের পক্ষে কাজ করেছেন আবুল খায়ের। তাছাড়া বিগত সংসদ নির্বাচনে বিএনপি’র ভোট বর্জন প্রচারণা কাজেও বাধা দিয়েছিলেন আবুল খায়ের।
সূত্র জানায় বেজপাড়া মেইন রোডে রয়েছে আরও কয়েকজন সন্ত্রাসী। এরা হচ্ছে- মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে গলাকাটা পান্না, কামালের ছেলে হিমেল, খোকনের ছেলে সাগর, আকবরের ছেলে আকাশ, খোঁড়া নাছির এবং সাগর ও শোভন এবং একই এলাকার ওবাইদুল ইসলাম রাকিব। এর মধ্যে গলাকাটা নাছির ও রাকিব ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক পৌর কাউন্সিলর আলমগীর কবির সুমন ওরফে হাজি সুমনের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত। এসব সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগের বিগত শাসন আমলে মাদক, ছিনতাই ও অস্ত্রের ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলো বলে অভিযোগ রয়েছে। সূত্র আরও জানায়, ২০১৪ সালের ৯ আগস্ট বিকেলে বেজপাড়া রানার অফিসের কাছে পিয়ারী মোহন রোডে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও বেজপাড়া শান্তি-শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি আব্দুল মান্নান। এই হত্যাকান্ডের সাথে পেচো ছাড়াও বেজপাড়া জাগরণী অফিসের পাশের সেলিমের ছেলে হীরা জড়িত ছিলো।
এলাকাবাসী জানান, বেজপাড়া মাঠপাড়ার সন্ত্রাসী কালো পলাশ ও প্রশান্ত এক সময় একটি চোরাচালান সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতো। তাছাড়া তারা অস্ত্রের ব্যবসায়ের সাথেও জড়িত ছিলো। পরবর্তীতে তাদের কাছ থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে চোরাচালান সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ নেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুল। ওই দ্ইু সন্ত্রাসী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের অনুসারী। এছাড়া বেজপাড়া মাঠপাড়ায় হারানের ছেলে সন্ত্রাসী নিপু ছিনতাই এবং অস্ত্রের ব্যবসার সাথে জড়িত। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুলের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত নিপুর অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। সূত্র আরও জানায়, বেজপাড়া পুজোর মাঠ মোড় এলাকার জয়দেব নন্দি’র ছেলে রানা নন্দি, (সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের অনুসারী), মেইন রোডের আবুল খালেকের ছেলে ডলার, বেজপাড়া জাগরনী অফিসের পাশের সেলিমের ছেলে হীরা, তালতলা মোড় এলাকার কুদ্দুস, গুলগুল্লার মোড় এলাকার হালকা রাব্বি, মাছ রাব্বি, বাবুর ছেলে অভি, স্কুল এলাকার আসলামের ছেলে জনি, একই এলাকার সজিব আওয়ামী লীগের নেতাদের শেল্টারে থেকে নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে এসেছে।
৫ আগস্টের পর এ সব সন্ত্রাসী গা ঢাকা দিলেও এখন আবার প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। এদের আটকে পুলিশ প্রশাসনের কোন তৎপরতা না থাকায় তারা সাহস পাচ্ছে। কেউ কেউ ৫ আগস্টে ছাত্র জনতার বিজয় মিছিলে অংশ নিয়ে নিজেদের পক্ষ বদল করে ফেলেছে। সুযোগের সন্ধানে থাকা এসব চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের আটকে বরাবরই দাবি জানিয়েছে আসছে এলাকাবাসী।