মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি।।
সাফল্য ও ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় বজায় রেখে দ্বীনি শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে মনিরামপুরের জামেয়া ইমদাদিয়া মাদানীনগর মাদরাসা। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দারুল উলুম দেওবন্দের মূলনীতি অনুসরণে তা'লীম, তাবলীগ, তাযকিয়া ও এ'লায়ে কলেমাতুল্লাহর জযবা নিয়ে ওলীকুল শিরোমনী শাইখুল মাশায়েখ হযরত মাওলানা শায়খ তাজম্মুল আলী জালালাবাদী (রহ.)এর দোয়া ও ইজাযতে তারই সুযোগ্য ছাত্র ও বিশিষ্ট খলীফা, দারুল উলুম দেওবন্দের কৃতি শিক্ষার্থী বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলনের অগ্রসেনানী সাবেক সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, হুইপ, উপমহাদেশের অন্যতম ইসলামী আইন বিশারদ মুফতী মুহাম্মদ ওয়াক্কাস (রহ.) যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলায় ১০ই রমযান ১৩৯৩ হিজরী মোতাবেক ১৯৭৩ ইং সালে সবাহী মক্তব অতঃপর শাওয়াল ১৩৯৭ হিজরী মোতাবেক ১৯৭৭ইং সালে হিফজখানা প্রতিষ্ঠা করেন। যার ধারাবাহিকতায় শাওয়াল ১৪০২ হিজরী মোতাবেক ১৯৮২ইং সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে "জামেয়া ইমদাদিয়া মাদানীনগর"। হযরত শায়খ তাজম্মুল আলী (রহ) জামেয়ার উদ্বোধন করেন। কিছু দিনের মধ্যেই জামেয়ায় হিফজখানা, ক্বিরাতখানাসহ "দারুল উলুম দেওবন্দ” ও "বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়্যা বাংলাদেশ" এর নিসাব অনুযায়ী দাওরায়ে হাদীস (তাকমীল) পর্যন্ত দরস চালু হয়। শাওয়াল ১৪২৪ হিজরী মোতাবেক ২০০৩ ইং সালে বালক শাখায় দাওরায়ে হাদীসের ছবক শুরু হয় এবং শাওয়াল ১৪৩০হিঃ মোতাবেক ২০০৯ইং সালে এক বছরের ইফতা কোর্স খোলা হয়। অতঃপর শাওয়াল ১৪৩৫ হিঃ মোতাবেক ২০১৪ ইং সালে এক বছরের আরবী আদব বিভাগ খোলা হয় এবং ১৪৩৭হিঃ মোতাবেক ২০১৬ ইং সালে এক বছরের আদ দাওয়াহ ওয়াল ইরশাদ বিভাগ খোলা হয়। দ্বীনি ইলম শিক্ষা লাভ করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উপর ফরয। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কুফরী শক্তিসমূহ মুসলিম জাতিকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে নারী সমাজকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে। নারী সমাজ তথা মুসলিম জাতিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার নিমিত্তে মুফতী ওয়াক্কাস সাহেব শাওয়াল ১৪০৯ হিজরী মোতাবেক ১৯৮৯ইং সালে জামেয়ার বালিকা শাখা প্রতিষ্ঠা করেন। বালিকা শাখার উদ্বোধন করেন জামেয়ার প্রধান মুরলী হযরত মাওলানা শায়খ তাজম্মুল আলী (রহ.)। শাওয়াল ১৪১৫ হিজরী মোতাবেক ১৯৯৫ইং সালে বালিকা শাখায় "দাওরায়ে হাদীসের দরস শুরু হয়। শরয়ী পর্দার সাথে নারী শিক্ষার এক বিরল নজির স্থাপন করেছে জামেয়ার বালিকা শাখা। জামেয়ার বিভাগসমূহঃ
*মক্তব বিভাগ: প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত পুরুষ ও মহিলা ক্বারী দ্বারা বালক-বালিকা উভয় শাখায় পৃথকভাবে ভোরবেলা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীকে কুরআন মজীদের বিশুদ্ধ তিলাওয়াত ও প্রয়োজনীয় মাসায়েল শিক্ষা দেয়া হয়। *ইবতেদায়ী বিভাগ: অভিজ্ঞ শিক্ষক-শিক্ষিকা ও প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত পুরুষ ও মহিলা ক্বারী দ্বারা বিশুদ্ধভাবে কুরআন মজীদের। নংজেরাসহ বালক-বালিকা উভয় শাখায় পৃথকভাবে প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা দেয়া হয়।
*হিফজ বিভাগ: অভিজ্ঞ হাফেজ-হাফেজার তত্ত্বাবধানে বালক- বালিকা উভয় শাখায় পৃথকভাবে কুরআন মজীদ হিফজ করানো হয়।
*কিতাব বিভাগ: অভিজ্ঞ শিক্ষক-শিক্ষিকার তত্ত্বাবধানে। ছেলে-মেয়েদের পৃথকভাবে দারুল উলুম দেওবন্দ” ও "রেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়্যা বাংলাদেশ" এর নিসাব অনুযায়ী প্রয়োজনীয় বাংলা, ইংরেজী, অংকসহ 'দাওরায়ে হাদীস” (তাকমীল) পর্যন্ত শিক্ষা দেয়া হয়।
*ইফতা বিভাগ: বালক শাখায় দাওরায়ে হাদীস ফারেগ মেধাবী ছাত্রদের এক বছরে "ইফতা" কোর্স সম্পন্ন করা হয়। এবং মুসলমানদের বিভিন্ন সমস্যাবলীর শরীয়ত সম্মত ফতওয়া সমপন্ন করানো হয়। *আরবী আদব বিভাগ: দাওরায়ে হাদীস ফারেগ ছাত্রদেরকে ১বছরে অভিজ্ঞ উস্তাদগণের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে আধুনিক আরবী সাহিত্যে দক্ষ হিসাবে গড়ে তোলা হয়।
*তরবিয়াত বিভাগঃ বালক ও বালিকা উভয় শাখায়। সপ্তাহে এক দিন নৈতিকতা শিক্ষা ও বাতিল প্রতিরোধে উপযুক্ত। কর্মী হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তরবিয়াতী জলসা করা হয়।
*দাওয়াত ও তা'লীম বিভাগ: বালক শাখায় প্রতি বৃহস্পতিবার মাদ্রাসার মসজিদ থেকে ওস্তাদেরনেগরানীতে দ্বীনি দাওয়াতের জন্য ছাত্রদের জামাত বের হয়। বালিকা শাখায় প্রতি শুক্রবারে এলাকার মহিলাদের জরুরী দ্বীনি তা'লীম দেয়া হয়।
*তাযকিয়ায়ে নাক্স: জামেয়ার প্রধান মুরব্বী শাইখুল মাশায়েখ হযরত মাওলানা তজম্মুল আলী রহ. এর বিশিষ্ট খলীফা মুফতী মুহাম্মদ ওয়াক্কাস (রহ.) এর খলিফাদের সহযোগিতায় মাসিক ইজতেমা ও শবগুজারীর মাধ্যমে আত্মশুদ্ধির মেহনত করা হয়।
* এতিমখানা ও লিলাহ বোর্ডিং: পিতৃহীন এতিম ও গরীব মেধাবী ছেলে-মেয়েদের ফ্রি খোরাক, পোশাক ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
* কুতুবখানা: জামেয়ার গ্রন্থাগার থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠ্যসূচীর পূর্ণসেট কিতাব বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়।শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরকে যাবতীয় রিফারেন্সের কিতাব প্রদান করা হয়।
*হিসাব বিভাগ: জামেয়ার সাধারণ ও লিল্লাহ ফান্ডের যাবতীয় আয়-ব্যয়ের হিসাব সংরক্ষণ করা হয় এবং অভ্যন্তরীন অডিট কমিটি ছাড়াও বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক মনোনীত "অডিট ফার্ম" কর্তৃক প্রতি বছর অডিট করানো হয়।
* শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা ৮১ জন ও কর্মচারী ২০ জন। * ছাত্র-ছাত্রী ২৩২৮ (বালক-১০৪৪ বালিকা-১২৪৮জন।
*এতিমখানা ও বোর্ডিং থেকে খানা দেয়া হয় প্রায় ১৩০০ জনকে।
মাদরাসার আজীবন সদস্য বিশিষ্ট সমাজসেবক মোঃ বাবুল আক্তার বলেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের শ্রেষ্ঠ দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে দ্বীনি ও দুনিয়ার জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে। প্রতিষ্ঠানেটির সাথে থাকতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। আমি মাদরাসাটির সকল ক্ষেত্রে সফালতা কামনা করি।
মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক মুফতি আশফাকুল আনওয়ার ইয়ামিন বলেন, যুগপোযোগী বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের পাঠদানের মাধ্যমে আমাদের প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হয়ে আসছে। শিক্ষার ফলাফলে সাফল্যের সিড়ি অব্