প্রতিনিধি 24 June 2025 , 10:28:30 প্রিন্ট সংস্করণ
মনিরামপুর (যশোর)প্রতিনিধি:
সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মরহুম মুফতি ওয়াক্কাসসহ একাধীক ব্যক্তির স্বাক্ষর জাল করে শিক্ষক নিয়োগের ঘটনার চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। জালিয়াতির নৈপথ্যে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে দায়ী করছেন এলাকাবাসী। নানা অজুহাতে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। একই সাথে স্বাক্ষক জালিয়াতি কাজে- জড়িতদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে গঠন করা হয়েছে ৯ সদস্যর কমিটি। সোমবার (২৩ জুন) সকালে বিজয়রামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এঘটনা ঘটে। অবশ্য, ইতিমধ্যে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক বদরুজামানের এমপিও স্থগিত করা হয়েছে।
থাকা বিজয়রামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার পাইনের বিরুদ্ধে বিধিসম্মতভাবে ব্যবস্থা নিতে সচ্চোর হয়ে ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী। সোমবার (২৩ জুন) সকালে জালিয়াতির বিষয়ে কৈফিয়ত নিতে বিজয়রামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আসেন ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী। যদিও প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার পাইন ছুটি ছাড়াই অনুপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ে। তবে, ক্ষুদ্ধ জনতার রোশানলে পড়েন বিদ্যালয়ে বর্তমান সভাপতি জাহিদুল ইসলাম।
সরেজমিনে গেলে জানা যায়, বিজয়রামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার পাইন। জালিয়াতির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বিদ্যালয়ে আসেন না দীর্ঘদিন। স্থানীয়দের দাবী, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে মো. বদরুজ্জামানকে সহকারি শিক্ষক (সমাজ বিজ্ঞান) পদে নিয়োগের যাবতীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করেছেন প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার। একই সাথে বদরুজ্জামানকে এমপিও ভূক্ত করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠান তিনি। যার সবই ছিল জাল-জালিয়াতি মাধ্যমে করা হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে শিরোনাম হয়। একপর্যায় সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষগণ তাৎক্ষনিক আমলে নিয়ে এমপিও স্থগিত করেন বদরুজ্জামানের।
এরই জের ধরে সোমবার (২৩ জুন) বিদ্যালয় খোলা মাত্রই স্বাক্ষর জালিয়াতি তথ্য যাচাই করতে ছুটে আসেন সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মরহুম মুফতি ওয়াক্কাস এর ছেলে মুফতি রশিদ-বিন ওয়াক্কাস। একই সাথে ডেকে আনা হয় তৎকালীন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইনছার আলীসহ তৎকালীন কমিটির অন্যান্য সদস্যদের।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুফতি রশিদ বিন ওয়াক্কাস বলেন, আমার পিতা মরহুম মুফতি ওয়াক্কাস এমন কাজ করতে পারেন না বলে আমার আগেই সন্ধেহ হয়। আজ আলোচনার মাধ্যমে তার সত্যতা মিললো। এলাকাবাসীকে নিয়ে ৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হয়েছে। বিধিমোতাবেক ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এসময় বদরুজ্জামানের নিয়োগ জাল-জালিয়াতির বিষয়টি জনতার সামনে তুলে ধরেন বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। তিনি জালিয়াতির বিষয়টি সম্পূন্ন প্রধান শিক্ষক তাপস পাইনের দায় চাপিয়ে বলেন, আমিও এর সমাধান চাইতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্নার দারস্থ হই। কিন্তু এ বিষয়টি নিয়ে বর্তমান সভাপতির কোন কতৃত্ব নেই বলে আশাস্থ করেন তাকে ইউএনও।
জাহিদুল ইসলাম ইউএনও বরাত দিয়ে বলেন, উপজেলা মাধ্যমিক সাবেক শিক্ষা অফিসার বিকাশ ও আকরাম হোসেনের হাত দিয়ে এই জালিয়াতির শুরু হয়েছে। পরে বর্তমান শিক্ষা অফিসার বাকী অনুমোদন দিয়েছেন।
তবে, ভিন্ন কথা বলছেন মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না। তিনি (ইউএনও) বলেন, প্রতিদিন কত লোকজন আমার দপ্তরে আসা যাওয়া করেন। ফাইলটি সম্পর্কে আমি জেনেছি এবং কাজ শুরু করেছি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এএসএম জিল্লুর রশিদ বলেন, একটা ফাইল আসলে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উদ্ধর্তন কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়েছি। ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের প্রক্রিয়া চলছে।বিজয়রামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার পাইন মুঠোফোনে জানান, বিদ্যালয়ে কি হয়েছে তা আমার জানা নেই
উল্লেখ্য, মনিরামপুর উপজেলার গোপিকান্তপুর গ্রামের মৃত. কেরামত আলীর ছেলে মোঃ বদরুজ্জামান বাবুকে ২০০৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর বিজয়রামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণীর ‘খ’ শাখায় সহকারী শিক্ষক (সমাজ বিজ্ঞান) পদে নিয়োগ দেখানো হয়। যোগদান দেখানো হয় ২০০৫ সালে ৫ জানুয়ারী। ২০২৪ সালে সভাপতি ঝন্টু পাটোয়ারীর স্বাক্ষরিত যে রেজুলেশনে বদরুজ্জামানকে মূল প্যাটার্নে পদায়ন দেখান হয়। রেজুলেশনের সব স্বাক্ষরও জাল বলে অভিযোগ ওঠে। কাগজ কলমে নিয়োগ দেখানো বদরুজ্জামানকে বিজয়রামপুর স্কুলে আসতে দেখেননি কেউ। একটি পক্ষ ১৬ লক্ষ টাকার বিনিময়ে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বদরুজ্জামানকে শিক্ষক হিসেবে বিদালয়ের আদিষ্ট করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।