ময়মনসিংহ নগরীর মৃত্যুঞ্জয় স্কুল এলাকায় যুগের পর যুগ অযত্ন–অবহেলায় খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকা মুদ্রণযন্ত্রের ঠাঁই হলো জাদুঘরে। প্রাচীন মুদ্রণযন্ত্রটি উদ্ধার করে শশীলজ জাদুঘরে নিয়ে যান প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের স্থানীয় কর্মীরা।
ময়মনসিংহের পুরাকীর্তি সুরক্ষা কমিটি নগরীর মৃত্যুঞ্জয় স্কুলের কাছে প্রাচীন এই মুদ্রণযন্ত্রের সন্ধান পেয়ে গত ৬ আগস্ট পরিদর্শন করে। পরে কমিটি মুদ্রণযন্ত্রটি ময়মনসিংহ জাদুঘরে সংরক্ষণের কথা বলে ২৫ আগস্ট প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে আবেদন করে। অধিদপ্তরের ফিল্ড অফিসার সাবিনা ইয়াসমিন এটি পরিদর্শন করেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠান। পরে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মুদ্রণযন্ত্রটি উদ্ধার করে গত শনিবার ময়মনসিংহ জাদুঘরে নিয়ে যাওয়া হয়।
পুরাকীর্তি সুরক্ষা কমিটি ময়মনসিংহ অঞ্চলের সদস্যসচিব ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, মেশিনটির গায়ে একটি নম্বরপ্লেট লাগানো আছে। তাতে মেশিনের নম্বর হিসেবে ৫৫৯১ লেখা আছে। যন্ত্রটি হলো একটি এইচএস ক্রপার অ্যান্ড কোং ‘ক্রপার’ প্ল্যাটেন প্রিন্টিং প্রেস। এটি মূলত যুক্তরাজ্যের নটিংহ্যাম শহরের এইচএস ক্রপার অ্যান্ড কোং নামের একটি কোম্পানি তৈরি করেছিল। এ ধরনের প্রেস সাধারণত ১৮৬০ থেকে ১৮৯০ সালের দিকে উৎপাদিত হতো।
মেশিনের নেমপ্লেটে ‘পেটেন্ট ২৪০৫’ লেখা আছে। এই পেটেন্ট নম্বরটি ১৮৬৭ সালের কাছাকাছি সময়ের বলে জানান ইমতিয়াজ আহমেদ। তিনি বলেন, ক্রপার প্ল্যাটেন প্রেসগুলো ছোটখাটো ছাপার কাজের জন্য খুব জনপ্রিয় ছিল। যেমন লেটারহেড, আমন্ত্রণপত্র, প্রোগ্রাম ও অন্যান্য ধরনের জব প্রিন্টিং। এই প্রেসগুলো এতটাই জনপ্রিয় ছিল যে ক্রপার নামটি পরে যুক্তরাজ্যে এ ধরনের সব প্ল্যাটেন প্রেসের জন্য একটি সাধারণ শব্দে পরিণত হয়েছিল। এই প্রেসগুলো সাধারণত একটি পায়ের প্যাডেল দিয়ে চালানো হতো।
ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, প্রগতিশীল মানুষের হাত ধরে প্রাচীন এই মুদ্রণযন্ত্র ময়মনসিংহে আসে। মুদ্রণশিল্পের অনন্য নিদর্শন হিসেবে বর্তমানে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের জাদুঘরে মুদ্রণযন্ত্রটি সংরক্ষণ করা আছে। সে হিসেবে বাংলাদেশেও এটি সংরক্ষণ করার কথা বলছিলেন তাঁরা।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মৃত্যুঞ্জয় স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা অনাথবন্ধু গুহ তাঁর ছাপাখানায় মুদ্রণযন্ত্রটি ব্যবহার করতেন। তিনি কয়েক বছর ব্যবহার করার পর গফরগাঁওয়ের মাওলানা পাঁচবাগীর হাতে ছাপাখানার দায়িত্ব চলে যায়। সর্বশেষ ব্যবহারকারী তিনিই ছিলেন।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতা প্রথম আলোকে বলেন, মুদ্রণযন্ত্রটি এখন জাদুঘর চত্বরে রাখা হয়েছে। এটি পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন করা হবে। এরপর এটি সংরক্ষণ উপযোগী হবে।