ফয়সাল হায়দার, স্টাফ রিপোর্টার।
মাগুরা শহরের সোনালী ব্যাংক লিমিটেড পিএলসি শাখা থেকে এক গ্রাহকের চলতি হিসাব থেকে রহস্যজনকভাবে ৮৭ লাখ টাকা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। গ্রাহক মো. টিটুল অভিযোগ করেছেন, ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে তার স্বাক্ষর জাল করে এই বিপুল অঙ্কের টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। বিষয়টি জানিয়ে তিনি শাখা ব্যবস্থাপকের কাছে লিখিতভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ একটি দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
মো. টিটুল অভিযোগে জানান, আমি মো. টিটুল, পিতা: মৃত কাজী আকিম, গ্রাম ইসলামপুর পাড়া, শহিদ মিন্টু সড়ক, মাগুরা। আমি উষা এস. সি. লিমিটেডের মালিক ও চেয়ারম্যান। আমার প্রতিষ্ঠানের নামে সোনালী ব্যাংক মাগুরা শাখায় একটি চলতি হিসাব রয়েছে। এই হিসাবে আমার জমাকৃত ও বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত মোট ৮৭ লাখ টাকা ছিল। ভবিষ্যতের জন্য চিন্তা করে আমি কখনোই এই হিসাবের বিপরীতে চেকবই গ্রহণ করিনি।
তিনি আরও জানান, দীর্ঘদিন পর হিসাব পরীক্ষা করতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, ধাপে ধাপে পুরো অর্থ তুলে নেয়া হয়েছে। তার দাবি, ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সহায়তায় একটি প্রতারকচক্র এই অর্থ আত্মসাৎ করেছে। হিসাব খোলার সময় আমি আমার মোবাইল ফোন নম্বর দিয়েছিলাম। অথচ আমার নামে একটি ভিন্ন নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে, যা আমি জীবনে ব্যবহার করিনি বলেও জানান মো. টিটুল।
তিনি অভিযোগ করেন, ব্যাংকিং নিয়ম অনুযায়ী ৫০ হাজার টাকার বেশি লেনদেনে গ্রাহককে ফোন বা এসএমএসের মাধ্যমে জানানো বাধ্যতামূলক। কিন্তু ১০-২০ লাখ টাকার লেনদেনের সময়ও কোনো ধরনের যোগাযোগ করা হয়নি।
সোনালী ব্যাংক মাগুরা শাখার বর্তমান ব্যবস্থাপক দিয়ারুল আলম বলেন, আমি ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে মাগুরা শাখায় যোগদান করি। ঘটনাটি আমার যোগদানের আগের সময়ের। তবে ১৭ জুন ২০২৫ তারিখে মো. টিটুল নামের এক গ্রাহকের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগে তিনি জানান, তার অজান্তে এবং স্বাক্ষর জাল করে ৮৭ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। তিনি আরও দাবি করেন, তিনি কোনো চেকবই গ্রহণ করেননি।
ব্যবস্থাপক আরও জানান, প্রাথমিক তদন্তে দেখা যায়, ২০১৩ সালের ১২ আগস্ট মো. টিটুল তার প্রতিষ্ঠানের নামে একটি চলতি হিসাব খোলেন, যার নোমিনি ছিলেন তার মেয়ে সেলিনা আক্তার তিশা। একই দিন ব্যাংকের চেক বিতরণ রেজিস্টারে স্বাক্ষর ও প্রতিষ্ঠানের সিলসহ একটি ১০০ পাতার চেকবই ইস্যু করা হয়। এরপর প্রথম ৫ হাজার টাকা জমার মাধ্যমে লেনদেন শুরু হয়।
২০১৬ ও ২০১৭ সালে ওই চেকবই থেকে গ্রাহকের স্বাক্ষরিত ৮টি চেকের মাধ্যমে নগদ উত্তোলন ও ব্যাংক ট্রান্সফারে ৮৭ লাখ টাকা উত্তোলনের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে দাবি করেন ম্যানেজার।
অ্যাকাউন্ট হোল্ডার মো. টিটুলের দাবি, তার কোনো স্বাক্ষর ছাড়াই চেকবই ইস্যু করা হয়েছে এবং ব্যাংক কোনো ফোন বা ম্যাসেজ দেয়নি। তিনি বলেন, প্রতারক চক্রকে শনাক্ত করে ফৌজদারি আইনে মামলা করতে আমি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছি। যদি তারা ব্যবস্থা না নেয়, তবে আমি নিজেই আদালতে মামলা করব।
উষা এস. সি. লিমিটেডের হিসাব থেকে যেসব অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করা হয়েছে, তার মধ্যে একটি একাউন্ট মেসার্স রাজ এন্টারপ্রাইজ, হিসাবধারীর নাম মো. ফিরোজ হোসেন। তিনি আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন অফিসে জনবল সরবরাহ করেন। এই ফিরোজ হোসেন ও মো. টিটুল যৌথ ব্যবসায়ী। ফিরোজ হোসেন বলেন, জাল স্বাক্ষরের মাধ্যমে উষা এস. সি. লিমিটেড নামের এই হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন হয়েছে, এটা একটা ভিত্তিহীন বিষয়। যৌথ ব্যবসার কারনে অনেক সময় মো. টিটুলের অ্যাকাউন্টে টাকা আসতো বিভিন্ন অফিস থেকে। পরবর্তীতে টিটুলের স্বাক্ষরিত চেক দিয়ে টাকা উত্তোলনের মাধ্যমে আউট সোর্সিংয়ের কর্মীদের বেতন দেয়া হতো।
সোনালী ব্যাংক, ঝিনাইদহ প্রিন্সিপাল অফিসের এ জি এম রশিদুল ইসলাম বলেন, মাগুরা সোনালী ব্যাংক লিমিটেড পিএলসি শাখায় এক গ্রাহকের চলতি হিসাব থেকে রহস্যজনকভাবে ৮৭ লাখ টাকা উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনার তদন্তে গত ১৩ আগস্ট দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে রয়েছেন ঝিনাইদহ প্রিন্সিপাল অফিসের সিনিয়র অফিসার মো. মনিরুজ্জামান ও অপূর্ব কুমার সাহা। এই কমিটি আগামী ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে বলা যাবে আসল ঘটনা কী।