ফয়সাল হায়দার, স্টাফ রিপোর্টার।
মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার নাকোল রাইচরণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ আব্দুল মান্নানকে অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি ২৪ লাখ ২৪ হাজার ৪৮৩ টাকা বিদ্যালয়ের হিসাব থেকে তছরুপ করেছেন এবং শিক্ষার্থীদের ২০২৪ সালের উপবৃত্তির টাকা বিতরণ না করে আত্মসাৎ করেছেন।
বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি মির্জা ওয়ালিদ হোসেন জানান, ৩ আগস্ট (রবিবার) পরিচালনা পরিষদের সাধারণ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একইসঙ্গে সহকারী প্রধান শিক্ষক মুনীর হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং আব্দুল মান্নানকে কেন স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হবে না, সে বিষয়ে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ অডিট প্রতিবেদনে দেখা যায়—
২০২৪ সালের ৮ এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিদ্যালয়ের আয় হয়েছে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার ৩০১ টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকে জমা হয়েছে মাত্র ৯ লাখ ৩৫ হাজার ৮১৮ টাকা। বাকি ২৪ লাখ ২৪ হাজার ৪৮৩ টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে বিভিন্ন অনুমোদনবিহীন, স্বাক্ষরবিহীন ও সৃজনকৃত ভাউচারের মাধ্যমে ব্যয় দেখানো হয়েছে। এছাড়া জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ১০ লাখ ৩০ হাজার ৪০১ টাকা আয় হলেও এক টাকাও ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়নি।
এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের আয়কৃত টাকা দিয়ে ব্যক্তিগতভাবে মামলা পরিচালনা করছেন এবং অনেক মাসে একাধিকবার প্রয়োজনের চেয়ে বেশি টাকা খরচের ভাউচার দেখিয়েছেন। ২০২৪ সালের ১০ জুন উপবৃত্তি ফান্ড থেকে এক লাখ চার হাজার ২০০ টাকা বিদ্যালয়ের হিসাব নম্বরে স্থানান্তর করা হলেও আজ পর্যন্ত তা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়নি।
পূর্বের অনিয়মও চাঞ্চল্যকর
বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকদের বিরুদ্ধেও কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। অভ্যন্তরীণ অডিটে দেখা গেছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিদ্যালয়ের বিভিন্ন খাত থেকে আয় হয়েছে প্রায় ৪ কোটি ১৩ লাখ টাকার বেশি, যার মধ্যে কয়েক কোটি টাকার হিসাব মিলছে না। সাবেক সভাপতি হুমাইনুর রশিদ মুহিত, সদস্য সুব্রত কুমার বিশ্বাস এবং সাবেক প্রধান শিক্ষক এ.এস.এম. রফিকুল আলার বিরুদ্ধে প্রায় ৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকার আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। ব্যাংক থেকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে টাকা ট্রান্সফার, দোকানঘর বরাদ্দে স্বজনপ্রীতি ও অগ্রীম টাকা আত্মসাতসহ নানা অনিয়ম অডিট প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
অভিযুক্তদের অবস্থানে
যোগাযোগের চেষ্টা করেও অভিযুক্তদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সোমবার (১১ আগস্ট) বিকেলে ফোনে যোগাযোগ করা হলে বরখাস্ত প্রধান শিক্ষক শেখ আব্দুল মান্নান জানান, তিনি বাড়ি থেকে দূরে আছেন এবং মিডিয়ার সামনে কোনো ভিডিও বা অডিও বক্তব্য দেবেন না।
বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদ মনে করছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে আত্মসাৎকৃত টাকা উদ্ধার করা প্রয়োজন।