অন্যান্য

মাটির নিচে গোপন আস্তানা, চালানো হতো ভয়াবহ নির্যাতন

  প্রতিনিধি 12 October 2024 , 6:39:32 প্রিন্ট সংস্করণ

চেতনায় রিপোর্ট।

চট্টগ্রামের রাউজানের সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অবৈধভাবে ভারতে পালাতে গিয়ে গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে রয়েছেন কারাগারে। একসময়ের এ প্রভাবশালী নেতার দাপটে কাঁপতো পুরো রাউজান। গুম-খুন আর দখলের পাশাপাশি ১৫ বছর ধরে প্রবল প্রতাপের সঙ্গে রাউজানে মাটির নিচে গোপন ঘরে চালিয়ে আসতেন নির্যাতন। তার নিজস্ব ক্যাডার বাহিনীও ছিল।

উপজেলা সদরে নিজের বাগানবাড়িতে একটি একতলা ভবনের নিচে জানালাবিহীন ভয়ঙ্কর এ নরক গড়ে তোলেন ফজলে করিম চৌধুরী। যেখানে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন শত শত মানুষ। বাদ যাননি নারীরাও।

নির্যাতনের শিকার হওয়াদের একজন পৌর এলাকার বিএনপিকর্মী আজিম উদ্দিন। ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে তাকে ধরে নিয়ে আটকে রাখা হয় ঐ ঘরে। সেখানে নির্যাতনের পর অস্ত্রসহ তুলে দেওয়া হয় পুলিশের হাতে।

আজিম উদ্দিন জানান, বাগানবাড়ির একপাশে নিরিবিলি জায়গায় খাল ঘেঁষে সুড়ঙ্গের মতো দরজা করে মাটির নিচে তৈরি করা হয় ঐ ঘর। সেখানে নির্যাতনের শিকার মানুষের আর্তচিৎকার শুনতেন আশপাশের মানুষজন। কিন্তু ভয়ে মুখ খুলতেন না কেউ।

আরেক ভুক্তভোগী রাউজান ফরেস্ট বিট খামারবাড়ির বাসিন্দা আবুল হাশেম। অস্ত্র ধরে জমি লিখে নেয়ার অভিযোগে গত ২৩ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা ইয়াসমিনের আদালতে ফজলে করিম চৌধুরী এবং তার দুই ছেলে ফারাজ করিম চৌধুরী ও ফারহান করিম চৌধুরীসহ নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন আবুল হাশেমের ভাই ইসলাম মিয়া।

ইসলাম মিয়ার অভিযোগ, তিনি ও তার ভাই আবুল হাশেমের পৈতৃক সম্পত্তি অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুই ছেলের নামে নিবন্ধন করে নেন ফজলে করিম। দিতে না চাইলে আবুল হাশেমকে তিনদিন ফজলে করিমের আস্তানায় নিয়ে আটকে রাখা হয়। এ সময় তার পাসপোর্ট ছিনিয়ে নিয়ে জমি লিখে না দিলে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের ১২ জুন বাধ্য হয়ে ২৮৫ শতক জমি নিবন্ধন দিয়ে দেন তারা। এরপর বিষয়টি কাউকে জানালে তাদের মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়।

শুধু আজিম উদ্দিন কিংবা আবুল হাশেমই নয়, ফজলে করিমের তত্ত্বাবধানে এ গোপন ঘরে তার ক্যাডার বাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষসহ বিভিন্ন মানুষ। আছে এখানে অস্ত্রের মুখে জমি লিখে নেয়ার ঘটনাও ঘটে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ফজলে করিম চৌধুরী গ্রেফতার হলে পালিয়েছেন ঐ ঘরের রক্ষীরাও।

গত ১২ সেপ্টেম্বর অবৈধভাবে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত এলাকা থেকে ফজলে করিম চৌধুরীকে আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। আটকের পর তাকে আখাউড়া থানায় হস্তান্তর করা হয়। সেখান থেকে পাঠানো হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর হেলিকপ্টারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগার থেকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে আসা হয়।

২৪ সেপ্টেম্বর ফজলে করিম চৌধুরীকে আদালতে হাজির করা হলে ২০১৯ সালে রাউজানের মুনিরিয়া যুব তবলীগ কমিটির কার্যালয় ভাঙচুরের মামলায় শুনানি শেষে দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। সেদিন নগরের তিন থানার তিনটি হত্যা মামলায় এবং রাউজান থানার দুটি ভাঙচুরের মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

হত্যা, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, হত্যাচেষ্টা, অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানো, অস্ত্রের মুখে জমি লিখে নেয়া, ভাঙচুর, দখলসহ বিভিন্ন অভিযোগে ফজলে করিমের বিরুদ্ধে অন্তত ১০টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।-খুলনাঞ্চল

Author

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ