অন্যান্য

মামলা থেকে বাঁচাতে আওয়ামীলীগ নেতার কাছে বিএনপির নেতার চাঁদা দাবি 

  প্রতিনিধি 1 September 2025 , 1:18:37 প্রিন্ট সংস্করণ

মোঃ আমজাদ হোসেন বিজয়নগর প্রতিনিধি : 

আওয়ামী লীগের এক নেতাকে বিএনপির এক নেতা দুই লাখ টাকা দেওয়ার মাধ্যমে একাধিক মামলা থেকে বাঁচানোর আশ্বাস প্রদান করার অডিও রেকর্ড প্রতিবেদকের হাতে এসেছে । সেই রেকর্ড এ বিএনপির নেতা দাবী করেন জেলা উপজেলার নেতারা পাঁচ লাখ টাকা দাবী করেছিলো আমি বলেছি তোমার ব্যবসা বাণিজ্য মন্দাভাব যাচ্ছে তাই আপাতত দুই লাখ দিয়ে আপনারা তার নামটি কেটে দিন।

এমন কথোপকথনের কল রেকর্ড হলো ব্রাহ্মণবাড়িযার বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হক ও একেই ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম অলি আহমদের মধ্যকার।

এমন কথোপকথনের কল রেকর্ড ও একাধিক ভয়েস রেকর্ড প্রতিবেদক এর হাতে এসেছে। উক্ত কথোপকথন হুবহু তুলে ধরা হলো :

বিএনপির নেতা : হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম।

আওয়ামীলীগ নেতা : জ্বি ভাইজান, আসসালামু আলাইকুম।

বিএনপির নেতা : ভালো আছেন?

আওয়ামীলীগ নেতা : জ্বি জ্বি। হক ভাই—

বিএনপির নেতা : জ্বি জ্বি বলেন।

আওয়ামীলীগ নেতা : কালকেতো কথা বলছিলেন আমিতো আর সময় দিতে পারিনি, ভূটানে ছিলামতো, হিসেব নিকাশ করেছিলাম সেই জন্য রেখে দিয়েছিলাম। বিষয়টি গোছিয়ে বলেননিতো

বিএনপির নেতা : আছেন কই?

আওয়ামীলীগ নেতা : ভূটানেই আছি।

বিএনপির নেতা : ঐ যে মামলা পেন্ডিং রয়েছে। বারবার বলতেছে তালিকা দেওয়ার জন্য।

আওয়ামীলীগ নেতা : আচ্ছা।

বিএনপি নেতা : আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, পাহাড়পুর ইউনিয়নের বিশেষ বিশেষ কেডা কেডা আছে দেওয়ার জন্য। এটার জন্য উপরের মহলের কিছু দিলে হেরার মুখ বন্ধ করলাম।

আওয়ামীলীগ নেতা : জ্বি জ্বি। আমি বলি ভাই আমি এতদিন রাজনীতি করে আসছি। আমি কারো কোন ক্ষতি করি নাই। আমি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করার সময় আমি নিজে দল থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়েছি। স্বতন্ত্র নির্বাচন করার পরেও দল থেকে আমাকে বহিষ্কার করেছে। এখন তো আমি আওয়ামীলীগেরও কিছু না। তারপরও যদি মামলা দেয় আর কি করমু। এখন এটা কি করা যায় আপনি বলেন আমাকে?

বিএনপি নেতা : এটা হল আমাকে যেটা বলছে হেরা ( জেলা-উপজেলার নেতা) আমার কাছে চাইছিল লাখ দুই লাখ টাকা নিয়ে দিলে এটা বন্ধ করা যাবে।

আওয়ামী লীগ নেতা : আচ্ছা ভাই দুই লাখ টাকা আপনি বলেন, আপনিতো দেখছেন আমার ছেলে মেয়ে নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করতেছি এলাকাতেও যায় না এখন আপনি যে সময়টা বলছেন একবার আপনি অসুস্থ ছিলেন আমি যতটুকু পারছি আপনার সহযোগিতা করেছি তাই না?

বিএনপি নেতা : অবশ্যই অবশ্যই।

আওয়ামীলীগ নেতা : আপনি থুইয়া, আপনি আমার ভাই। আপনার ছোট ভাইয়ের নাম অলি আহমেদ। আপনাকে থুইয়া যদি দুই লাখ টাকা আমার দেওয়া লাগে। তাহলে আপনাদের কি ইজ্জত তাকে? আমি আর এ দেশে বাইচ্ছা কি করবো?

বিএনপির নেতা : না না বিষয়টি এরকম না। আমি বিষয়টা বন্ধ না করলে হারা কেউ না কেউ দিয়া লাইবো। দিইয়া লাইলে তো আমারে দোষারোপ করবা তুমি। এজন্য আমি তোমাকে বলছি। আমি যত রকম পারি চেষ্টা করছি বাঁচাইয়া রাখার জন্য। আমি থাইকা যদি তুমি মামলা খাও যে কথাটা বলছো তাহলে আমি মুখ দেখাতে পারবো না। আমি থাইকা যতটুকু সেইভ করার আমি করতেছি।

আওয়ামীলীগ নেতা : ব্যবসা-বাণিজ্য করে সংসার চালিয়ে ছেলে মেয়ে পড়াশোনা করিয়ে এত টাকা আমি কইত্তেকে দেব?

এই বিএনপি নেতা সেই আওয়ামীলীগ নেতাকে দেওয়া অপর আরেক ভয়েজ রেকর্ডে শোনা যায়, তোমাকে যে বলছিলাম তিনটা মামলা পেন্ডিং হয়ে রয়েছে তারা (জেলা-উপজলার নেতা) আমাকে ফোন দিচ্ছে যাওয়ার জন্য উবায়দুল মোকতাদির সাহেব এক নাম্বার আর তোমাকে চাচ্ছে দুই নাম্বার আসামী দিতো। আমার কাছে ৫ লাখ চাইছিলো আমি বলছি ৫ লাখ দিতে পারবে না এই মুহূর্তে তার ব্যবসা নাই। বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে আছে। আমি কোন রকম দুই লাখ ব্যবস্থা করে নিয়ে দিমু আপনাদের কাছে। ওকে মামলায় ফালাইলে একটু সমস্যা হয়। সে আমার আত্মীয় হয়। আমি এসব কথাবার্তা বলে হেরারে মানিয়ে রাখছি। ঠিক আছে এ সপ্তাহের ভিতরে যেটা করার করতে হবে। যত রকমের কষ্টই হয় তুমি এটা তারাতাড়ি করে করো। পচা শামুকে পা কাটা ঠিক না। তিনটা মামলা একসাথে হবে সাংবাদিক সম্মেলন করে বিষয়টি পুরো বিজয়নগর ও পাহাড়পুর ইউনিয়ন সহকারে জানানো হবে। তুমি এটা তড়িৎ গতিতে করবা। যত ধরনের কষ্ট হোক তুমি এটা কর। এটা তোমার ভালোর জন্য বলছি। একবার এগুলোর মধ্যে জড়ালে ১০-১৫ লাখ টাকা দিয়েও বাঁচতে পারবা না। তুমি নিজে জ্ঞানী মানুষ চিন্তা ভাবনা করে কাজগুলো কর আমি চাইনা তোমার কোন ক্ষতি হউক।

পাহাড়পুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হক এই কথোপকথন ও ভয়েস রেকর্ডের বিষয়ে বলেন, আমাকে ফাঁসাতে আমার প্রতিদ্বন্দ্বীরা এমন চক্রান্ত করছে। আমি অলি আহমেদের সাথে এ ধরনের কোন আলোচনা করিনি।

পাহাড়পুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম অলি আহমদের বলেন, আমি দীর্ঘদিন যাবত ভুটানে অবস্থান করে ব্যবসা-বাণিজ্য করছি। আমার এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন করতে গিয়ে আমি অনেক আগেই দল থেকে অব্যাহতি নিয়েছি। তারপরও দল আমাকে নির্বাচন করার কারণে বহিষ্কার করেছে। বর্তমানে আওয়ামীলীগের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। তাহার এমন চাওয়ায় আমি অবাক হয়েছি। তাদের দলের ঊর্ধ্বতন মহলে বিষয়টি জানিয়েছি। দেখি তারা কি ব্যবস্থা নেন।

বিজয়নগর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইমাম হোসেন বলেন, কোন বিএনপির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি বা আওয়ামীলীগ শেল্টার দেওয়ার কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ