প্রতিনিধি 15 July 2025 , 5:34:39 প্রিন্ট সংস্করণ
পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যাকাণ্ড: থানা হাজতে খুনির ঔদ্ধত্যপূর্ণ উত্তর দেশজুড়ে নিন্দা ও ক্ষোভের ঝড়
ঢাকা, ১৫ জুলাই ২০২৫:
মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক ঘটনায় পুরো দেশ এখন তোলপাড়। সামাজিক মাধ্যমে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই জনমনে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় বইছে। এমন অমানবিক ঘটনায় জড়িতদের প্রতি সর্বমহলে ধিক্কার জানানো হচ্ছে। এই নরপিশাচরা বর্তমানে পুলিশি হেফাজতে বা রিমান্ডে রয়েছে। সম্প্রতি তাদের থানা হাজতের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যেখানে এক হত্যাকারী, মীর জাফর, এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে পুলিশের করা প্রশ্নে অবিশ্বাস্যরকম ঔদ্ধত্যপূর্ণ উত্তর দিয়েছেন, যা স্তম্ভিত করেছে সবাইকে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে দেখা যায়, ক্যামেরার পেছনে থাকা একজন পুলিশ সদস্য (সম্ভাব্য) হত্যাকারী মীর জাফরের দিকে ক্যামেরা তাক করে তার নাম জিজ্ঞেস করলে সে নির্লিপ্তভাবে উত্তর দেয়, “মীর জাফর”। পাশে থাকা আরেক হত্যাকারীকেও পুলিশ একই প্রশ্ন করলে, মীর জাফর নিজেই তাকে জিজ্ঞেস করে, “এই তোর নাম কি?” উত্তরে সে নিজের নাম জানায়, “আলমগীর!”।
এরপর পুলিশ সদস্য মীর জাফরকে প্রশ্ন করেন, “এই যারে মারলেন এইভাবে মারলেন কেন?” যার উত্তরে মীর জাফর নির্লজ্জভাবে বলে ওঠে, “ওই একটা অমানুষ এর লাইগা।” পুলিশ প্রশ্ন করে, “মানুষ মানুষরে কোনদিন এইভাবে মারে?” মীর জাফরের উত্তর আরও ভয়ঙ্কর, “এর চেয়ে ভয়ংকর ভাবেও মারে।” তার এই উত্তর যেন বর্বরতার চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত।
নিহত সোহাগের দুই শিশু সন্তান ও স্ত্রীর কথা তুলে ধরে পুলিশ যখন প্রশ্ন করে, “এর যে দুইটা বাচ্চা কাইচ্চা আছে এরা কিভাবে মানুষ হবে বলো, বউ আছে?” তখন মীর জাফরের উত্তর ইতিহাসের সেই বিশ্বাসঘাতক মীর জাফরের মতোই শিউরে ওঠার মতো। সে বলে, “যে পার্টনারের টেকা (টাকা) পয়সা সম্পদ সব নিয়া নিছে ওরও তো বাচ্চা কাচ্চা আছে। ওই ছ্যারা কিভাবে বাঁচবো? ঐ ছ্যারার মায়েরে যে ধর্ষণ করছে!” এখানে, মীর জাফর ধর্ষণের মতো গুরুতর অভিযোগ এনে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা করলেও, তার নৃশংসতা আড়াল করার কোনো যুক্তিই ধোপে টিকছে না।
যখন পুলিশ আবার প্রশ্ন করে, “তোমরা যে কাজটা করছো এই কাজটা করা কি তোমাদের ঠিক হইছে?” মীর জাফর তখন দায় এড়িয়ে বলে, “এটা আল্লাহ ভালো জানে।” পুলিশ জানতে চায়, “তোমরা জানো না?” তার উত্তর, “না আমরা যদি বুঝতাম তাহলে কি আর করতাম?”
পুলিশ সদস্য আবারও তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, “তোমরা বোঝো না? বিবেক-বুদ্ধিহীন হয়ে গেছো? বলো?” এ সময় আরেক পুলিশ সদস্য জিজ্ঞাসা করেন, “ওর আম্মুরে যে ধর্ষণ করছে তো আইন আছিলো না?” উত্তরে মীর জাফর আপত্তিকর ভাষায় বলে ওঠে, “(……) সবার ইজ্জত আইনের ওপর ছেড়ে দেয় নাকি?” এরপর পুলিশের প্রশ্ন, “এই জন্য নিজেরাই মারছেন?” মীর জাফরের উল্টো অভিযোগ, “না আমাগো মারছে না?”
এভাবেই পুলিশের প্রশ্নের উত্তর দেয় সোহাগকে দিন-দুপুরে অমানুষের মতো অত্যাচার করে পাথর চাপা দিয়ে হত্যা করা নরপিশাচ মীর জাফর। তার কথার ভাবখানা এমন যেন সে কিছুই করেনি। অথচ বর্বর সেই মধ্যযুগীয় কায়দায় বারবার সোহাগের শরীরে পাথর ফেলে মৃত্যু নিশ্চিত করা ব্যক্তিদের মধ্যে মীর জাফরও অন্যতম।
এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে যে, সমাজে কিছু মানুষ কতটা বিবেকহীন ও অনুশোচনাহীন হতে পারে। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছে পুরো দেশ।