প্রতিনিধি 13 July 2025 , 12:38:38 প্রিন্ট সংস্করণ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মিটফোর্ড হাসপাতালে নৃশংসভাবে খুন হওয়া ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯) হিন্দু বানিয়ে খবর পরিবেশন করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’। এই ঘটনায় শুধু ভুল তথ্যই নয়, বরং ধর্মীয় বিভেদ সৃষ্টির অপচেষ্টা দেখছেন বিশ্লেষকরা। প্রশ্ন উঠেছে, কেন একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে ভিন্ন ধর্মীয় মোড়কে উপস্থাপন করা হলো?
গত ৯ জুলাই রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের সামনে একদল সন্ত্রাসীর হাতে নির্মমভাবে খুন হন লালচাঁদ ওরফে সোহাগ। তাকে পিটিয়ে হত্যার পর মৃতদেহের ওপর পাথর নিক্ষেপ করার সেই নৃশংস ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। শুক্রবার বরগুনা সদর উপজেলার ৭ নম্বর ঢলুয়া ইউনিয়নের বান্দরগাছিয়ায় তার জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়।
‘ইন্ডিয়া টুডে’-র বিতর্কিত শিরোনাম:
রবিবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’ এই ঘটনার শিরোনাম করে, “বাংলাদেশে হিন্দু ব্যবসায়ীকে কংক্রিটের স্ল্যাব দিয়ে পিটিয়ে হত্যা; হামলাকারীরা শরীরের উপর নাচছে।” এই প্রতিবেদনের সঙ্গে গত বছর সংখ্যালঘুদের একটি বিক্ষোভ সমাবেশের ছবি যুক্ত করা হয়েছে, যা ঘটনার সঙ্গে সম্পূর্ণ অসংগতিপূর্ণ। যদিও শিরোনামে সোহাগকে ‘হিন্দু’ দাবি করা হয়েছে, কিন্তু পুরো প্রতিবেদনের কোথাও তার ধর্মপরিচয় বা বিস্তারিত পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি।
বিভ্রান্তি ছড়ানোর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন:
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন এবং বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অসংখ্য মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে, তখন ‘ইন্ডিয়া টুডে’-এর এই প্রতিবেদন বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ১০ জুলাইয়ের একটি মন্তব্যকে প্রতিবেদনে জুড়ে দেওয়া হয়েছে, যেখানে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট থেকে ৩৩০ দিনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর ২,৪৪২টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে হত্যা, গণধর্ষণ, উপাসনালয়ে আক্রমণ, ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার, সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল, জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ওপর আক্রমণ এবং বিভিন্ন সংগঠন থেকে জোরপূর্বক পদত্যাগ করানো ইত্যাদি বিষয় রয়েছে।
তবে সোহাগের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এসব তথ্যের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একটি ব্যক্তিগত হত্যাকাণ্ডকে ধর্মীয় সহিংসতার রূপ দিয়ে উপস্থাপন করা এবং ভুয়া ছবি ব্যবহার করে বিভ্রান্তি ছড়ানোর এই প্রবণতা বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই করা হচ্ছে বলে অনেকে মনে করছেন।