প্রতিনিধি 27 March 2025 , 7:12:00 প্রিন্ট সংস্করণ
জি এম ফিরোজ উদ্দিন
মাটিঃ
জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোআঁশ মাটি মিষ্টিকুমড়া চাষাবাদের জন্য উত্তম তবে চরাঞ্চলে পলি ও বেলে মাটিতে মিষ্টি কুমড়ার ভালো ফলন হয় ।
বীজ বপনের সময়ঃ
রবি মৌসুমেঃ
আশ্বিন-কার্তিক (অক্টোবর-নভেম্বর) এবং
খরিফ মৌসুমেঃ
ফাল্গুন-চৈত্র (ফেব্রুয়ারী-মার্চ) মাস বীজ বোনার উপযুক্ত সময়।
জাত নির্বাচন:
(ব্রাক সীডস) থাইল্যান্ড-১/থাইল্যান্ড -২
(সুপ্রিম সীডস) থান্ডার বল/ওয়ান্ডার বল/ ম্যাজিক বল/সুইট বল/
(ইউনাইটেড সীডস) কাজল/কালো মানিক/
(মালিক সীডস) বিশাল/#ব্লাক_স্টোন
(ব্রাক সীডস) #শাফী
(লালতীর)#সুইটি/#সাদিয়া/মমতা
(মাসুদ সীডস) সৈনিক-৫৭/সুইট হানি #ব্লাক স্টন-১৬
বীজ হারঃ অরণ্য অরন্য সীডস -1
শতক প্রতি ২-৩ গ্রাম বীজহার
বিঘা প্রতি (৩৩ শতাংশ) জন্য ৭০-১০০ গ্রাম
বীজ ভিজানোঃ
বীজ বপনের পূর্বে ১৫-২০ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে বীজের অংকুরোদগম সহজ ও দ্রুত হয়।
চারা তৈরি ও রোপণঃ
নার্সারিতে পলিব্যাগে চারা তৈরি করে রোপণ করা উত্তম।
অথবা সরাসরি মাদায় বীজ রোপন করা যায়।
চারার বয়সঃ
চারার বয়স ১৬-২০ দিন হলে অথবা ৫-৬ পাতা বিশিষ্ট্য হলে মুল জমিতে রোপন করা যায়।
বীজতলায় চারার পরিচর্যাঃ
নার্সারিতে চারার প্রয়োজনীয় পরিচর্যা নিশ্চিত করতে হবে । শীতকালে চারা উৎপাদনের ক্ষেত্রে বীজ গজানোর পূর্ব পর্যন্ত প্রতি রাতে প্লাস্টিক দিয়ে পলিব্যাগ ঢেকে রাখতে হবে এবং দিনে খোলা রাখতে হবে । চারার প্রয়োজন অনুসারে পানি দিতে হবে তবে সাবধান থাকতে হবে যাতে চারার গায়ে পানি না পড়ে । পলিব্যাগের মাটি চটা বাঁধলে তা ভেঙ্গে দিতে হবে । চারাগাছে “রেড পাম্পকিন বিটল” পোকার ব্যাপক আক্রমণ হয় । এটি দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে । চারার বয়স ১৬-১৭ দিন হলে তা মাঠে প্রস্তুত মাদায় লাগাতে হবে ।
জমি নির্বাচনঃ
চরের অনাবাদি পতিত জমিতে অথবা উর্বর যে কোন একই জমিতে বারবার একই ফসল চাষ পরিহার করতে পারলে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের উপদ্রব কমানো যাবে। এদের শিকড়ের যথাযথ বৃদ্ধির জন্য জমি এবং গর্ত উত্তমরুপে তৈরি করতে হবে।
বেড ও মাদা তৈরিঃ
মাটির প্রকৃতি ও স্থানভেদে ১৫-২০ সেমি উঁচু, ২.৫ সেমি চওড়া এবং লম্বায় সুবিধাজনক এমন বেড তৈরী করতে হবে যাতে পানি সেচ ও নিষ্কাশনের সুবিধা হয়। দু’টি বেডের মাঝে পর্যায়ক্রমে ৬০ সেমি এবং ৩০ সেমি নালা রাখতে হবে।
মাদার সাইজঃ
মাদার আকার দৈর্ঘ্য প্রস্থ ও গভীরতা হবে ৫০ × ৫০× ৫০ সেমি।
মাদার দুরত্বঃ
মাদা হতে মাদার দুরত্ব ৮ ফুট হতে হবে মাদার সারি হতে সারির দুরত্ব ৮ ফুট হবে।
সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ (প্রতি শতক)
জমি তৈরির সময়ঃ
গোবর ২০ কেজি
ইউরিয়া ৭০০ গ্রাম
টিএসপি ৭০০ গ্রাম
পটাশ ৬১০ গ্রাম
জিপসাম ৩৯০ গ্রাম
দস্তা ৫০ গ্রাম
বোরাক্স ৪০ গ্রাম
ম্যাগনেশিয়াম ৫০ গ্রাম
রোপণের ৭-১০ দিন পূর্বেঃ
অবশিষ্ট গোবর (মাদা প্রতি ১০ কেজি)
টিএসপি (মাদা প্রতি ৬০ গ্রাম)
পটাশ (মাদা প্রতি ৬০ গ্রাম)
বোরাক্স মাদা প্রতি ৬ গ্রাম
দস্তা মাদা প্রতি ৭ গ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম (মাদা প্রতি ৭ গ্রাম) চারা রোপণের ৭-১০ দিন পূর্বে প্রয়োগ করতে হবে।
চারা রোপণের পূর্বে সার দেয়ার পর পানি দিয়ে মাদার মাটি ভালভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে। অতঃপর মাটিতে জো এলে ৭-১০ দিন পর চারা রোপণ করতে হবে।
রোপণের ১০-১৫ দিন পরঃ
চারা রোপণের ১০-১৫ দিন পর ১ম বার
ইউরিয়া (মাদা প্রতি ২৫ গ্রাম) এবং অবশিষ্ট পটাশ সার (মাদা প্রতি ৩০ গ্রাম) প্রয়োগ করতে হবে।
রোপণের ৩০-৩৫ দিন পরঃ
চারা রোপণের ৩০-৩৫ দিন পর ২য় বার ইউরিয়া (মাদা প্রতি ২৫ গ্রাম) প্রয়োগ করতে হবে।
রোপণের ৫০-৫৫ দিন পরঃ
চারা রোপণের ৫০-৫৫ দিন পর ৩য় বার ইউরিয়া (মাদা প্রতি ২৫ গ্রাম) প্রয়োগ করতে হবে।
রোপণের ৭০-৭৫ দিন পরঃ
চারা রোপণের ৭০-৭৫ দিন পর ৪র্থ বার ইউরিয়া (মাদা প্রতি ২৫ গ্রাম) প্রয়োগ করতে হবে।
চারা রোপণ পদ্ধতিঃ
মাঠে প্রস্তুত মাদাগুলোর মাটি ভালোভাবে ওলট-পালট করে, এক কোপ দিয়ে চারা লাগানোর জন্য জায়গা করে নিতে হবে। অতঃপর পলিব্যাগের ভাঁজ বরাবর ব্লেড দিয়ে কেটে পলিব্যাগ সরিয়ে মাটির দলাসহ চারাটি উক্ত জায়গায় লাগিয়ে চারপাশে মাটি দিয়ে ভরাট করে দিতে হবে । চারা লাগানোর পর গর্তে পানি দিতে হবে । পলিব্যাগ সরানোর সময় এবং চারা রোপণের সময় সাবধান থাকতে হবে যাতে চারার শিকড় ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং মাটির দলা না ভাঙ্গে । নতুবা শিকড়ের ক্ষতস্থান দিয়ে ঢলে পড়া রোগের জীবাণু ঢুকতে পারে এবং শিকড় ক্ষতিগ্রস্ত হলে গাছের বৃদ্ধি দেরিতে শুরু হবে ।
পানি সেচঃ
মিষ্টি কুমড়া পানির প্রতি খুবই সংবেদনশীল। বিশেষ করে ফল ধরার সময় প্রয়োজনীয় পানির অভাব হলে শতকরা ৯০ ভাগ ফল ঝরে যেতে পারে। কাজেই প্রয়োজন অনুসারে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। মিষ্টি কুমড়ার জমিতে প্লাবন সেচ না দিয়ে শুধু নালায় পানি দেয়া উত্তম।
শোষক শাখা অপসারণঃ
মিষ্টি কুমড়ার গাছের গোড়ার দিকে ছোট ছোট ডালাপালাগুলোকে শোষক শাখা বলা হয়। এগুলোকে গাছের গোড়ার দিক থেকে ৩৫-৪০ সেমি. পর্যন্ত ধারালো ব্লেড দিয়ে কেটে অপসারণ করতে হবে।
মিষ্টি কুমড়ার কৃত্রিম পরাগায়ন পদ্ধতিঃ
মিষ্টি কুমড়ার পরাগায়ন প্রাকৃতিকভাবে প্রধানতঃ মৌমাছি দ্বারা সম্পন্ন হয়। বর্তমানে প্রকৃতিতে মৌমাছির পরিমান পর্যাপ্ত নয়। তাই কৃত্রিম পরাগায়নের মাধ্যমে মিষ্টি কুমড়ার ফলন শতকরা ২৫-৩০ ভাগ বাড়ানো যায়। মিষ্টি কুমড়ার ফুল খুব সকালে ফোটে। ফুল ফোটার পর যত তাড়াতাড়ি পরাগায়ন করা যায় ততই ভাল ফল পাওয়া যাবে। মিষ্টি কুমড়ার কৃত্রিম পরাগায়ন সকাল ৯.০০ ঘটিকার মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।
নিয়মাবলীঃ
কৃত্রিম পরাগায়নের নিয়ম হল ফুল ফোটার পর পুরুষ ফুল
ছিড়ে নিয়ে ফুলের পাপড়ি অপসারন করা হয় এবং ফুলের পরাগধানী (যার মধ্যে পরাগরেনু থাকে) আস্তে করে স্ত্রী ফুলের গর্ভমুন্ডে (যেটি গর্ভাশয়ের পিছনে পাপড়ির মাঝখানে থাকে) ঘষে দেয়া হয়।
কাঁচা ফলের ভক্ষণযোগ্য পরিপক্বতায় সংগ্রহ
কাঁচা ফল পরাগায়ণের ২০-২৫ দিনের মধ্যে সংগ্রহ করতে হবে। ফলে সবুজ রং থাকবে এবং ফল মসৃণ ও উজ্জ্বল দেখাবে। নখ দিয়ে ফলের গায়ে চাপ দিলে নখ সহজেই ভেতরে ঢুকে যাবে।
পাকা ফল সংগ্রহ ও সংরক্ষণযোগ্য পরিপক্বতাঃ
ফেসবুক থেকে সংগ্রহ