প্রতিনিধি 19 August 2025 , 10:43:10 প্রিন্ট সংস্করণ
ইসলামী ব্যাংকসহ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে ১৪ কোটি টাকা ঋণ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। তদন্তে দেখা গেছে, ফিউচার এগ্রো কমপ্লেক্স প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি কার্যত মৃত কোম্পানির নামে এই ঋণ নেওয়া হয়েছে। কোম্পানির চেয়ারম্যান মোঃ হাসান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিবুল্লাহর বিরুদ্ধে এই অর্থ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। এখন তারা ঋণ পরিশোধ না করে গা ঢাকা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
কোম্পানির পরিচালক মিসেস তাসলিমা মারজান জানান, ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ফিউচার এগ্রো কমপ্লেক্স লিমিটেড ২০১২ সালের পর থেকে কার্যত কোনো কার্যক্রম ছিল না। এরপরেও ব্যাংক মাফিয়াদের সহায়তায় কোম্পানির নামে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট শাখা থেকে মাছ চাষের ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে প্রায় ১৪ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়। ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি তাসলিমা মারজান এই ঋণের বিষয়ে অভিযোগ জানালে চেয়ারম্যান হাসান ও এমডি হাবিবুল্লাহ তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেন এবং মিথ্যা মামলা ও চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে তার পারিবারিক সম্পত্তি নামমাত্র মূল্যে বন্ধক রাখেন। ঋণের এই টাকা তারা নিজেদের ব্যক্তিগত প্রকল্পে সরিয়ে নেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
২০২৪ সালের ২৩ নভেম্বর তাসলিমা মারজান পল্টন মডেল থানায় আইনি সহায়তা চাইলে চেয়ারম্যান হাসান ও এমডি হাবিবুল্লাহ তার পরিবারের সঙ্গে মীমাংসা বৈঠকে বসেন। সেখানে তারা পাঁচ কোটি টাকার চেক দেন এবং জানান যে, ২০২৫ সালের মধ্যে তাসলিমা মারজানের বন্ধককৃত সম্পত্তি মুক্ত করা হবে। কিন্তু এই বৈঠকের পর থেকে তারা পলাতক রয়েছেন এবং ঋণ পরিশোধের কোনো উদ্যোগ নেননি।
এদিকে, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ চেয়ারম্যান মোঃ হাসান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিবুল্লাহর বিরুদ্ধে চারটি মামলা দায়ের করেছে, যেগুলোতে পরিচালক তাসলিমা মারজানকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। একটি অডিট ফার্মের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোম্পানিটির কোনো কার্যক্রম বা সম্পদ নেই এবং এর সব প্রকল্প কেবল কাগজে-কলমে রয়েছে।
ইসলামী ব্যাংক ছাড়াও ফারমার্স ব্যাংক (বর্তমান পদ্মা ব্যাংক) এবং আইডিএলসি থেকেও ভুয়া মৎস্য প্রজেক্ট দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে হাসান ও হাবিবুল্লাহর বিরুদ্ধে। হাবিবুল্লাহ আরও অনেককে ফাঁদে ফেলে ঋণ গ্যারান্টার বানিয়ে সর্বস্বান্ত করেছেন বলেও জানা যায়।
তাসলিমা মারজান অভিযোগ করেছেন যে, প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে অবৈধ তদবিরের মাধ্যমে হাবিবুল্লাহ তাকে হয়রানি করছেন। এমনকি জমি কেনার জন্য নেওয়া চেকের টাকা পরিশোধ না করে উল্টো তার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক চেক নেওয়ার অভিযোগে মামলা করেছেন। যদিও পুলিশ ও পিবিআইয়ের তদন্তে হাবিবুল্লাহর অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে, তবুও তিনি বারবার এসব রিপোর্টের বিরুদ্ধে ‘নারাজি’ আবেদন করছেন।
বর্তমানে তাসলিমা মারজান এবং তার পরিবার আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত। সচেতন মহল প্রশ্ন তুলেছে, মৃত কোম্পানির নামে নেওয়া এই ঋণ কে পরিশোধ করবে এবং ব্যাংক কর্মকর্তারা কেন এত বড় জালিয়াতি ঠেকাতে ব্যর্থ হলেন। দেশের ব্যাংকিং খাতে এ ধরনের দুর্নীতি রোধে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।