সাকিব হোসেন পটুয়াখালী :
পটুয়াখালী জেলার প্রত্যন্ত বড় গাবুয়া গ্রামের মেয়ে ফারজানা আক্তার তামান্না। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই স্বপ্ন বড় হয়ে চিকিৎসক হওয়ার। স্বপ্ন পূরণে কঠোর পরিশ্রমের ফল হিসেবে এ বছর পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন ফারজানা। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া করে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন সত্যি করা অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
ফারজানার বাড়ি পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার গোলখালী ইউনিয়নের বড় গাবুয়া গ্রামে। মো. আলাউদ্দিন ও সেলিনা বেগমের দুই মেয়ের মধ্যে ফারজানা ছোট। বড় বোন ইশরাত জাহান লিয়া এবার স্নাতক পরীক্ষা দিয়েছেন। ফারজানার বাবা আলাউদ্দিন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ফেরত দিতে না পেরে পলাতক আছেন। মা সেলিনা গৃহিণী।
২০২৩ সালে এইচএসসি পাস করে ফারজানা অংশ নেন মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায়। কিন্তু সেবার উত্তীর্ণ হলেও কোনো মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাননি। তবে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে আবারও ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে পটুয়াখালী সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছেন ফারজানা।
স্থানীয়রা জানান, ফারজানার গ্রামের আশপাশের কোনো গ্রামে মেডিকেলে পড়া শিক্ষার্থী নাই। ফারজানার বাবা আলাউদ্দিন ঋণ করে, জমিজমা বিক্রি করে মেয়েদের পড়াশোনা করিয়েছেন। ঋণের টাকা পরিশোধ না করতে পারে গত দুই বছর ধরে ঢাকায় থাকছেন তিনি। আর্থিক সংকটের কারণে সে কোচিং করতেও পারেনি। তারপরও আটকে থাকেনি মেধাবী ফারজানার জয়যাত্রা। সকল প্রতিকূলতা জয় করে মেডিকেলের ভর্তির সুযোগ পেয়েছে সে।
ফারজানা বলেন, ‘আমার এই চান্স পাওয়ার গল্পটা এত সহজ ছিল না। খুব কষ্টের কাহিনী। আমি এত কষ্ট কখনো করিনি। টাকার কষ্ট-মানুষের কথা সব সহ্য করতে হয়েছে আমাকে। এখন আমি পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হব এই আর্থিক অবস্থা আমাদের নেই।’
ফারজানার মা সেলিনা বলেন, ‘এমনিতেই আমরা খুব গরীব। দুই মেয়েকে লেখাপড়া করাতে গিয়ে ঋণ নিতে হয়েছে। কিস্তির জন্য এনজিও থেকে বাড়িতে লোক আসে এই ভয়ে ফারজানার বাবা দুই বছর ধরে ঢাকাতে পড়ে আছে। ফারজানার স্বপ্ন ডাক্তার হওয়া। সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে না আসলে ফারজানা মেডিকেলে পড়তে পারবে না আর ওর ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নও পূরণ হবে না