প্রতিনিধি 23 August 2025 , 6:07:21 প্রিন্ট সংস্করণ
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা ৪৮ জন সহকারী শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত সময়ে এসব শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করা হয়।
অভিযোগ—তারা সরকারি অনুমোদন ছাড়াই বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, বরখাস্ত হওয়া শিক্ষকদের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য সংখ্যকই নারী। এ ছাড়া আরও ৩৬ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনুপস্থিতি ও অসদাচরণের অভিযোগে বিভাগীয় মামলাও চলমান রয়েছে।
জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো ইতিমধ্যেই শিক্ষক সংকটে ভুগছে। শিক্ষক ছাড়াই অনেক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, ২০২৩ সাল থেকে বিভিন্ন ভাবে বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে প্রাথমিক শিক্ষকদের। শিক্ষকেরা বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে প্রথমে ছুটি নেন। পরে তাঁরা বিদেশে চলে যান। তখন সরকারিভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়। যত দিন যাচ্ছে, এই সংখ্যা তত বেড়ে চলছে।
মৌলভীবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস জানিয়েছে, জেলায় ১ হাজার ৬১৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।
এর মধ্যে সরকারি ১ হাজার ৫২টি। জেলায় কর্মরত প্রধান শিক্ষক ৭৭৬ জন। শূন্য পদ রয়েছে ২৭৪টি। এ ছাড়া এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষক রয়েছেন ৫ হাজার ১৫৬ জন। সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে ২২৩টি। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষকেরা দেশের বাইরে চলে যাওয়ায় সংকট আরও বাড়ছে।
এমন ঘটনা ঘটেছে মাইজগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস খান বলেন, বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইসরাত জেরিন প্রায় ১১ বছর চাকরি করেন। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে এক মাসের ছুটি নেন। পরে শোনা যায়, তিনি বিদেশে চলে গেছেন। তাঁর পরিবর্তে অন্য বিদ্যালয় থেকে একজন শিক্ষক দেওয়া হয়েছিল। তবে তিনি এখনো যোগদান করেননি। ফলে সংকট কাটছে না।
রাজনগর উপজেলার চাটুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কাবেরী রানী দেব। তিনি ২০২৪ সালের ১৬ অক্টোবর থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত চিকিৎসার কথা বলে ছুটি নেন। নির্ধারিত ছুটি শেষ হওয়ার পর তিনি আর চাকরিতে যোগদান করেননি। পরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানতে পারেন, তিনি বিদেশে চলে গেছেন। বিষয়টি পরে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়। ঠিক একইভাবে চাকরিচ্যুত শিক্ষকেরা বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ছুটি নিয়ে আর আসেননি বিদ্যালয়ে।
এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন কমলগঞ্জের কাউয়ারগলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সমরজিৎ স্বর্ণকার, সতিঝিরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নোভা নাওয়ার, সদর উপজেলার আগনসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্যামলী খানম, মৌলভীবাজার সদর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তাহমিদা ইসলাম এবং রাজনগর উপজেলার চাটুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাবেরী রানী দেব।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সফিউল আলম ভোরের আকাশ কে বলেন , আমি যোগদানের পর চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ২৯ জনকে পলায়নের অভিযোগে বরখাস্ত করেছি। আরও চারজনকে বিভিন্ন ধরনের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ৪৮ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। অনেকের বিরুদ্ধে মামলাও চলছে।
তিনি আরও বলেন, বেশির ভাগ শিক্ষক ছুটি নিয়ে বিদেশে চলে গেছেন এবং কর্মস্থলে আর ফিরে আসেননি। যাঁদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, তাঁরা আর এই চাকরিতে ফিরতে পারবেন না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষায় এই ধরণের অব্যবস্থা রোধে প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে এবং বিকল্প শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়াও দ্রুত সম্পন্ন করা দরকার। এ সংকট নিরসনে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে না পারলে মৌলভীবাজারে প্রাথমিক শিক্ষার মান ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।